Last Updated on 7 months by Shaikh Mainul Islam
প্রত্যেক নারীর জন্য মাসের নির্দিষ্ট একটি সময় বেশ কষ্টের হয়ে থাকে। একজন নারীর পিরিয়ডের সময়ে ক্লান্তি অনুভব হয়। দুর্বলতা, খিটখিটে মেজাজ সহ তল পেটে ব্যাথার মতো কষ্ট ফেস করতে হয়। এক্ষেত্রে পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় জানা জরুরি।
প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোস্ট “পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় । পিরিয়ড সম্পর্কে বিস্তারিত” এ।
আজকের আমরা পিরিয়ড কি, মেয়েদের পিরিয়ড কেন হয়, মেয়েদের পিরিয়ড হলে কি করতে হয়, পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়, পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় এ সম্পর্কে সম্পর্কে জানবো।
পিরিয়ড কি ? পিরিয়ড কেন হয়
খুব সহজ ভাবে বললে, প্রত্যেক মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক মাসে হরমোনের কারণে মেয়েদের জরায়ু যে চক্রাকারে পরিবর্তিত হয় এবং রক্ত, জরায়ু নিঃসরিত অংশ যৌনাঙ্গ থেকে বের হয়, এই প্রক্রিয়াকে ঋতুচক্র বা পিরিয়ড বলে।
আরও সহজভাবে বললে, প্রত্যেক মাসে মেয়েদের গর্ভাশয়ে তার বাহিরের আবরণকে শক্ত করে। এতে করে গর্ভকালীন সময়ে বাচ্চা রাখতে সক্ষম হয়।
অর্থাৎ বাচ্চা হওয়ার জন্য একজন মেয়ের মাসিক হওয়া অত্তন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রত্যেক মাসে একবার করে পিরিয়ড হয়ে থাকে তাই একে মাসিকও বলা হয়। প্রত্যেকবার ৪ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ীভাবে থাকে এই পিরিয়ডের সময়কাল।
তবে অনেকের ক্ষেত্রে ১ -২ দিন কম বেশি বা শুরু শেষ হতেও ১ থেকে ২ সপ্তাহ কম বেশি লাগতে পারে।
আশা করছি পিরিয়ড কি এবং মেয়েদের পিরিয়ড কেন হয় তা বুঝতে পারছেন এতক্ষণে।
মেয়েদের পিরিয়ড হলে কি করতে হয়
মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে এই যুগেও অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা কাজ করছে। মুলত মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড মেয়েদের জন্য সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে সু খবর।
কারণ, যে মেয়ের নিয়মিত ধারাবাহিকভাবে মাসিক হয় ওই মেয়েদের জন্য গর্ভকালীন এবং গর্ভকালীন পরবর্তী সময় অনেক সহজ হয়। সহজ হয় গর্ভধারণেও।
তাই, মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে আমাদের মধ্যে ভুল ধারণা দূর করা উচিত।
এবার কথা হচ্ছে মেয়েদের পিরিয়ড হলে কি করতে হয়? প্রকৃত অর্থে সাধারণত প্রথম প্রথম কোনো মেয়ের জন্য পিরিয়ডের সময়টা সহজ থাকে না।
কারণ, পিরিয়ডের সময় তল পেটে ব্যথা অনুভব হয়। কখনো কখনো পেট ব্যথার তীব্রতা এতটা বৃদ্ধি পায় যে মরণ যন্ত্রণার মতো হয়ে থাকে।
কিন্তু একজন মেয়ে চাইলেই ঘরোয়া কিছু উপায়ে মেয়েদের পিরিয়ডের সময় করতে পারে সবথেকে শান্তির।
কারণ, কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে পিরিয়ডের সময় শারীরিক কষ্ট মানসিক চাপ মুক্ত থাকা যায় খুব সহজেই।
ইসলামিক এবং ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী একজন মেয়ে সামান্য কিছু নিয়মকানুন মেনে চললেই পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় থেকে শুরু করে পিরিয়ডের সবকিছু খুব সুন্দরভাবে পার করতে পারেন।
এবার তাহলে আমাদের পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় জানতে হবে।
তাহলে চলুন পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে ইসলাম এবং বিজ্ঞানের আলোকে জেনে নেওয়া যাক।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
পিরিয়ডের সময় তীব্র পেট ব্যথা কমাতে অনেকে বিভিন্ন ব্যথার ঔষধ খেয়ে থাকেন। অনেকে আবার জ্বরের ঔষধ খেয়ে থাকেন।
তবে এই উপায়ে সাময়িক ভাবে ব্যথা কমলেও পরবর্তীতে দেখা দেয় মারাত্মক সমস্যা।
তাই পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় জানতে হবে। এবং সেই অনুযায়ী উপায়গুলো অবলম্বন করলে অবশ্যই প্রত্যেক মেয়ের পিরিয়ডের সময়কার ব্যথা থেকে মুক্তি পাবে।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ঘরোয়া উপায়ে পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় সমূহঃ
সেঁক নিতে হবে
পিরিয়ডের শুরুতে হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করে পেটে সহনীয় গরম পানির সেঁক দিতে হবে।
এছাড়া কাপড় গরম করে পেটে সেঁক দিলে পিরিয়ডে পেটে কামড় দেওয়া মুহূর্তের মধ্যে কমে যাবে।
আদা খেতে হবে
নিয়মিত পিরিয়ডের পেট কামড় দেওয়া অসহনীয় ব্যথা পুরোপুরি কমাতে আদা কুঁচি খেতে হবে।
পিরিয়ড শুরুর আগ মুহূর্ত থেকেই ২-৩ দিন গরম পানি কিংবা চা অথবা পান পাতার সাথে আদা কুঁচি করে খেলে মাসিকের ব্যথা কমবে।
ব্যায়াম এবং ম্যাসেজ করতে হবে
এক হাত বুকে এবং এক হাত পেটে রেখে বড় করে নিশ্বাস নিতে হবে। এবং শারীরিক ব্যায়াম যেমন একটু হাঁটাহাঁটি গোসল করা, ইয়োগা করতে পারেন।
মোট কথা পিরিয়ডের সময় ব্যায়াম করার ইচ্ছা থাকে না। তবে অন্যান্য সময় করতে হবে।
এছাড়া পেটে হালকা ভাবে পেটে ম্যাএজ করুন। সম্ভব হলে সঙ্গিনীকে দিয়ে পেটে আলতোভাবে দীর্ঘক্ষণ মেসেজ করিয়ে দিন।
রিলাক্স এবং গোসল করতে হবে
রিলাক্স থাকার জন্য সর্ব প্রথম মানসিক চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। আর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে একটু সময় নিয়ে গোসল করতে হবে। এতে শারীরিক মানসিক দুই ভাবেই পিরিয়ডের সময় উপকৃত হওয়া যায়।
নারীর পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা দূর করার জন্য ঘরোয়া সমাধানে মনোযোগ দেওয়া উত্তম। ডাক্তারদের মতে, এমন কিছু খাবার আছে যা পিরিয়ডের সময় খেলে মুক্ত করে পেটে ব্যথা।
এছাড়া পিরিয়ডে পেট ব্যাথা কমানোর অত্যন্ত কার্যকারী উপায় হচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাওয়া। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে কি কি খাবার খাওয়া জরুরি।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়
বেশি করে পানি পান করতে হবে
মেয়েদের পিরিয়ডের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি খেতে হবে। এতে পেটে ব্যথা অনেকটা কম অনুভব হয়। পর্যাপ্ত পানি পানের ফলে মেয়েদের পেট ফোলাভাব এবং গ্যাস থেকে মুক্তি মিলবে।
ফল খেতে হবে
যেসব ফলমূলে পানির উপস্থিতি বেশি সেসব ফল বেশি করে খেতে হবে।
যেমনঃ বাঙ্গী, তরমুজ, শসা, পেয়ারা, লেটুস পাতা, ইত্যাদি।
এছাড়াও নানান ধরনের স্যুপ এবং হালকা উষ্ণ পানি পিরিয়ডে পেটে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
কলা খেতে হবে
পেটে ব্যথা কমানোর জন্য অন্যতম একটি খাবার কলা। কলা সারা বছরই পাওয়া যায়। এতে আছে ভিটামিন বি৬ এবং পটাসিয়াম।
যা নারীর পিরিয়ডের সময় পেটে হওয়া মারাত্মক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিবে। পেটের ফোলা ভাব কমবে নিমিষেই।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা কমাতে বেশ কার্যকরী। এ ধরনের খাবার মুড সুইং, ক্লান্তি, অবসাদ, প্রভৃতি দূর করতে সাহায্য করে।
সুতরাং খাবারের তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
যেমন দুধ, পনির, দই, চিজ, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি রাখতে হবে।
সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে
পিরিয়ডের সময় সহ শরীরে সবসময় সবুজ শাক-সবজির চাহিদা আছে। নারীর পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে বেশ কিছু পরিমাণ রক্ত বের হয়ে যায়।
সেই ক্ষতি পূরণের জন্য খাবারের তালিকায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখা একান্ত জরুরি।
তাই এসময় প্রচুর সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে।
এতে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপস্থিত। যা পিরিয়ড চলাকালীন পেটে ব্যথা কমাতে অধিক কাজ করে।
ওটস খেতে হবে
পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে উপকারী একটি খাবার হলো ওটস। এটি ফাইবার, জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়ামে পরিপূর্ণ। ওটস খেলে তা দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
ওটস হজম ক্ষমতা ভালো রাখার পাশাপাশি পিরিয়ডের সময়ে পেট ব্যথা কমাতেও বেশ ভুমিকা রাখে।
তাই পিরিয়ডে সময় খাবার তালিকায় ওটস রাখতে হবে।
লেবু খেতে হবে
শরীরে ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস হলো লেবু।এটি খাবার থেকে আয়রন শোষণ করতে সাহায্য করে।
এছাড়া লেবুতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। এটি পেশীর খিঁচুনি প্রতিরোধে বেশ ভুমিকা রাখে।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানো নিয়ে FAQS
পিরিয়ড নিয়মিত না হওয়ার পিছনে মেয়েদের শারীরিক ওজন, পানি পান, প্রোটিন জাতীয় খাবার সহ অন্যান্য বিষয়ের অনিয়ম দায়ী।
এরপরে কিছু হরমোন তেস্ট করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
তবে প্রাথমিক অবস্থায় খাওয়াদাওয়ার নিয়ম মেনে চললেই সমস্যা হয় নাহ।
সাধারণত মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব, খাবারে অনীহা, শরীর শুষ্ক মনে হওয়া এইগুলি পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ।
তবে, এই বিষয়ে পরবর্তী অন্য পোষ্টে আমরা জানবো।
পিরিয়ডের সময় বেশি করে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খাওয়া উচিত। এবং বেশি করে ফলমূল খাওয়া উচিত। বিস্তারিত এই পোষ্টে উল্লেখ করা আছে।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় । সর্বশেষ
প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে সবকিছু জেনেছি।
আশা করছি এই পোস্ট ভিজিট করে “এই বিষয়ে “পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়” সকল তথ্য জেনে নিতে পারছেন।
এরপরেও এই বিষয়ে আরও কিছু জানার থাকলে আমাদের স্বাস্থ্য ক্যাটাগরিতে ভিজিট করুন। অথবা নিচে কমেন্ট করে জানান।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আমাদের অন্যান্য সকল পোষ্ট পড়তে Health category ভিজিট করুন।
নিয়মিত আমাদের সকল পোস্ট পড়তে Dainik kantha ভিজিট করুন।
সর্বশেষ আপডেট পেতে এক্সখ রাখুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।
26 thoughts on “পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় । পিরিয়ড সম্পর্কে বিস্তারিত”