জিডি করার নিয়ম । অনলাইনে জিডি করার নিয়ম (নমুনা জিডি সহ)

সাধারণ ডায়েরি যাকে আমরা জিডি বলে থাকি। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের চুরি, অপহরন, হুমকি কিংবা আইনি জটিলতা হওয়ার আশংকা হলে জিডি করতে হয়। কিন্তু অনেকেই সরাসরি কিংবা অনলাইনে জিডি করার নিয়ম জানেন না।

প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোষ্ট “জিডি করার নিয়ম । অনলাইনে জিডি করার নিয়ম (নমুনা জিডি সহ)” এ।

আজকের পোষ্টে আমরা জানবো, জিডি কি, জিডি করার কারণ সমূহ, জিডি করার গুরুত্ব, সরাসরি থানায় জিডি করার নিয়ম, অনলাইনে জিডি করার নিয়ম, একটি নমুনা জিডি সহ বিস্তারিত জানবো।

জিডি কি?

জেনারেল ডায়েরি বা জিডি। বা সাধারণ ডায়েরিও বলা হয়ে থাকে। জিডি হচ্ছে মুলত কোথাও কোনো কোনো অপরাধ সংগঠিত হলে বা হবে এমন আশংকা থাকলে সেই বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ জিডি করে অবহিত করাকেই জিডি করা বলে।

জিডি মূলত যেই স্থানে অপরাধ বা অপরাধ মূলক ঘটনা ঘটে অর্থাৎ আপনি যে কারণে জিডি করবেন ওই স্থান যে থানার আওতাভুক্ত সেই থানায় দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাকে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা।

GD= General Diary বা সাধারণ ডায়েরি। আশা করছি জিডি কি এবং থানায় জিডি করা বলতে কি বুঝায় তা বুঝতে পেরেছেন।

জিডি করার কারণ । জিডির গুরুত্ব

মনে করেন, চলার পথে আপনার মোবাইল ফোনটি হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়েছে। এবার, ওই মোবাইল দিয়ে কেউ অপরাধ করলে প্রশাসন এসে আপনাকে ধরবে।

তাই, এই বিষয়ে আপনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করে অবহিত করে রাখলে পরবর্তীতে কোনো সমস্যা হলে আপনি নির্দোষ থাকবেন।

আরও পড়ুনঃ নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

আবার ধরুন, কেউ আপনাকে মোবাইল করে জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছে। আপনি আতংকে আছেন।

এবার আপনি বিস্তারিত উল্লেখ করে আপনার নিকতস্থ থানায় জিডি করলেন। জিডির তথ্য অনুযায়ী পুলিশ হুমকি দাতাকে খুজে বের করলো।

মুল কথা হচ্ছে, আপনার আশপাশ বা আপনার সাথে এমন কিছু ঘটলে বা ঘটার সম্ভাবনা থাকলে যার মাধ্যমে আইনের লঙ্ঘন বা অপরাধ সংগঠিত হতে পারে সেক্ষেত্রে সেই বিসয়ে উল্লেখ করে থানায় জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করা হয়ে থাকে।

যেসব কারণে জিডি করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেঃ

  • বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে
  • কেউ আপনাকে থ্রেট বা হুমকি দিলে
  • জীবন নাশের হুমকি পেলে
  • জোর পূর্বক কেউ কারোর সম্পদ দখল নেওয়ার চেষ্টা করলে
  • মোবাইল/ ল্যাপটপ/ যেকোনো ডিভাইস বা কিছু হারিয়ে গেলে
  • টাকা হারিয়ে গেলে বা টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করলে
  • সামাজিক অবক্ষয় রোধে প্রতিকার চেয়ে
  • আশপাশে অন্যায় ভাবে কেউ কোনো কাজ সম্পাদন করলে
  • সার্টিফিকেট বা গুরুত্বপূর্ণ সনদ হারিয়ে গেলে
  • ভোটার আইডি কার্ড, ব্যাংকের চেক, গাড়ির লাইসেন্স হারালে

মনে রাখবেন, উপরে যেসব কাগজ পত্র হারিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ আছে সেসব হাড়ালে আপনি নতুন করে উঠাতে গেলেও জিডির একটি কপি লাগবে।

এরকম বা এই ধরন সম্পর্কিত সকল বিষয় সহ যেকোনো বিষয়ে আপনি নিকটস্থ থানায় জিডি করতে পারেন।

মোট কথা, সব ধরনের ঝামেলা বা অন্যায়, অপরাধ এড়িয়ে চলতে জিডি করা অত্যন্ত জরুরি।

আশা করছি জিডি কেন করা হয় এবং জিডি করা কেন গুরুত্বপূর্ণ তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন।

থানায় জিডি করার নিয়ম

সাধারণত আপনি আপনার কোনো বিষয়ে আপনার নিজ থানায় জিডি করবেন।

কিন্তু আপনার জিডি করার কারণটি যদি অন্য কোনো থানার সীমানার মধ্যে হয়ে থাকে তাহলে আপনি সেই থানায় জিডি করবেন।

আপনার জিডির কারণ বা ঘটনাটি যে স্থানে হয়েছে সেই স্থান যে থানার মধ্যে অবস্থিত আপনাকে সেই থানায় জিডি করতে হবে।

জিডি একধরনের আবেদন পত্র। অর্থাৎ, একটি আবেদন পত্রে যা যা উল্লেখ করা থাকে বা উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক একটি জিডিতে ও একই জিনিস ব্যবহার করতে হবে। 

আরও পড়ুনঃ  অনলাইনে মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়

এক্ষেত্রে আপনাকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাবর জিডি লিখতে হবে। এরপর থানার নাম এবং জেলার নাম ব্যবহার করতে হবে।

আপনি যে বিষয়ে লিখতে চাচ্ছেন সেই বিষয় আবেদনে উল্লেখ করতে হবে। 

এরপর, আপনার জিডি করার কারণ বর্ণনা করতে হবে স্থান, কাল সহ। জিডি যদি নির্ধারিত কারোর বিরুদ্ধে করা হয় তাহলে তার, তার বাবার এবং তার মায়ের নাম, বয়স ঠিকানা, সম্ভব হলে মোবাইল নাম্বার উল্লেখ করতে হবে। 

এবং সর্বশেষে জিডি যে করবেন অর্থাৎ আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার উল্লেখ করতে হবে।

এক্ষেত্রে, আপনি চাইলে নিজ থেকে একটি আবেদন অর্থাৎ জিডি লিখতে পারেন। আর না পারলে থানায় সার্ভিস ডেলিভারি অফিসারের শরণাপন্ন হয়ে তাকে সাবলীল ভাষায় অনুরোধ করুন আপনার বিষয়টি শুনে আপনাকে একটি জিডির আবেদন লিখে দিতে।

মনে রাখবেন তাকে লিখে দেওয়ার বিনিময়ে কোনো ধরনের টাকা পয়সা দিতে হবে নাহ। তবে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। সেই হিসেবে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নিতে পারে।

এছাড়াও আপনি চাইলে থানার বাহিরে যেকোনো কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে বললে তারা লিখে প্রিন্ট করে দিবে। তবে এক্ষেত্রে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত চারজ করে থাকে।

জিডি লেখা সম্পন্ন হলে এবার আপনি আবেদন পত্রটির দুইটি কপি করে থানায় ডিউটিরত অফিসারের কাছে জমা দিয়ে আপনার বিষয়টি অবহিত করুন।

জিডি জমা দেওয়ার পর করনীয়

এবার, আপনি আবেদন পত্রটি থানায় ডিউটিরত অফিসারকে দিয়ে আপনার বিষয়টি অবহিত করার পড়ে তিনি একটি কপি সিল সাক্ষর এবং জিডি নাম্বার লিখে নথিভুক্ত করবেন।

রেখে দেওয়া কপিটি ওখানের দায়িত্ব রত অফিসার আপনার জিডি টি একটি ডাইরিতে জিডির নম্বর সহ লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।

জিডির একটি কপিতে জিডির নাম্বর, সীলমোহর, স্বাক্ষর দিয়ে আপনাকে দিয়ে দেওয়া হবে। আপনাকে দিয়ে দেওয়া কপিটি আপনি যত্ন সহকারে রাখবেন।

দরকার হলে কপি ফটোকপি করে বা স্কান করে রেখে দিতে পারেন। পরবর্তীতে এটির খুব দরকার হবে। এবং জিডির নাম্বার মনে রাখুন। 

আরও পড়ুনঃ জাতীয় পরিচয় পত্র চেক করার উপায়

জিডি হওয়ার পর থেকে জিডির একটি কপি ডিউটি অফিসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে দিয়ে পাঠাবেন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আপনার জিডির ঘটনাটা যদি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং আমল যোগ্য মনে করেন তাহলে তাৎক্ষনিক আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।

এতক্ষণ জিডি এর প্রাথমিক থেকে শুরু করে গভীর থেকে গভীর পর্যন্ত জানা হয়ে গেল। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক সরাসরি থানায় জিডি করার জন্য একটি নমুনা জিডি এর কপি।

সরাসরি থানায় করা জিডির নমুনা

আপনি চাইলে নিচে উল্লেখিত নমুনা জিডির মতো করে জিডি লিখতে পারেন। অবে, বর্তমানে সকল জিডি কম্পিউটার টাইপ করে নিতে হয়।

এক্ষেত্রে দোকান থেকে লেখিয়ে বা আপনি নিজেও একই ভাবে লিখে প্রিন্ট করে জিডির দুইটি কপি থানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের কাছে জমা দিতে পারেন।

——————————-

১৫-০৬-২০২২
বরাবর
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
মোরেলগঞ্জ থানা, বাগেরহাট।
বিষয়ঃ সাধারণ ডায়েরি ভুক্তি এর জন্য আবেদন।

জনাব,

আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী নাম শেখ সৈকত বয়সঃ ২১ বছর, পিতাঃ শেখ জলিল, মাতা, শেখ সুলতানা। ঠিকানাঃ মোরেলগঞ্জ, বাগেহাট।

এই মর্মে জানাচ্ছি যে গত ১৫-০৬-২০২২ তারিখ দুপুর ১২ঃ৩০ মিনিটে মিনিটে মোরেলগঞ্জ সদর থেকে আমার নিম্নবর্ণিত মোবাইল সেটটি হারিয়ে গেছে।

মোবাইলের বর্ণনাঃ সাদা রঙের স্যমসাং মোবাইল ফোন।মডেলঃ- স্যমসাং জে৭ প্রাইম।
আমার মোবাইলটির আইএমইআই নম্বরঃ- ৬৭৮৯১২৩৪****২৪৫

অতএব, বিষয়টি থানায় অবগতির জন্য সাধারণ ডায়েরি ভুক্ত করার বিনীত অনুরোধ করছি।

বিনীত
নামঃ শেখ সৈকত।
ঠিকানাঃ মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট।
মোবাইল নম্বরঃ ০১৯
ইমেইলঃ [email protected]

———————————–

উপরে উল্লেখিত জিডি টি একটি নমুনা জিডি কপি। আপনি আপনার বিষয়ে জিডি লিখবেন ঠিক একই ভাবে।

এক্ষেত্রে শুধু বিষয় এবং ব্যাখ্যা পরিবর্তন হবে। তবে জিডি ফরমেট এমন ই হবে। আশা করছি একটি সম্পন্ন নমুনা জিডি কপি দেখলেন।

অনলাইনে জিডি করার নিয়ম

এখন সবকিছুর মতো অনলাইনে জিডিও করা যায়। বাংলাদেশ পুলিশের আওতাধীন ওয়েবসাইটে দেশের মধ্যে আপনি যেকোনো যৌক্তিক বিষয়ে অনলাইনে জিডি করতে পারবেন।

বিস্তারিত নির্দেশনা পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। সেখানে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে সকল তথ্য পেয়ে যাবেন।

অনলাইনে জিডি করুন এখান থেকে।

আশা করছি জিডি সম্পর্কিত সব বিষয়ে এখন সম্পূর্ণ আয়ত্ত কোর্টে পারছেন। এবার জিডি সম্পর্কিত অধিক জিজ্ঞেসিত কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর জানার চেষ্টা করা যাক।

সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করার নিয়ম নিয়ে আরও কিছু অধিক জানতে চাওয়া প্রশ্ন এবং উত্তর জানার চেষ্টা করা যাক।

জিডি সম্পর্কিত FAQS 

জিডি করার জন্য কি ১৮ বছর বয়স হতে হয়?

না। জিডি করার জন্য বয়সের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে কিছু বুঝ ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে জিডি করার প্রক্রিয়া বুঝতে পারে।

জিডি করতে কত টাকা লাগবে ? 

সম্পূর্ণ ফ্রিতে জিডি করা যায়। অর্থাৎ আপনার জিডি করতে কোনো টাকা লাগবে না।

জিডি কি পুরুষ মহিলা যে কেউ করতে পারবে?

হ্যাঁ, যেকেউ নির্দিষ্ট কারণে জিডি করতে পারবে।

জিডি করতে সাক্ষী লাগবে ?

না, জিডি করতে কোনও সাক্ষী লাগবে নাহ। শুধু জিডি করার কারণটি সত্য হলেই হবে। 

জিডি কেন করতে হয়? জিডি করার সুফল কি?

কোনও অপরাধ বা দুর্ঘটনা মুলক কিছু চুরি হওয়ার পর ওই বিষয়ে আপনাকে ফাসানো হতে পারে।

ওইসব জিনিস থেকে অপরাধ করলে আপনাকে ধরা হবে। এসব ঝামেলা এবং সঠিক সমাধানের জন্য জিডি করতে হয়।

নিশ্চয়ই জিডি আমাদের জীবনে অনেক বিপদ এবং ঝামেলা থেকে বাচিয়ে দেয়। 

জিডি করার নিয়ম সম্পর্কে সর্বশেষ

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা “জিডি করার নিয়ম । অনলাইনে জিডি করার নিয়ম (নমুনা জিডি সহ)” জেনেছি।

আশা করছি এই পোষ্ট থেকে আমরা জিডি কি, জিডি করার কারণ সমূহ, জিডি করার গুরুত্ব, সরাসরি থানায় জিডি করার নিয়ম, অনলাইনে জিডি করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত।

জিডি কিংবা সরকারি যেকোনো সেবামূলক অন্যান্য পোষ্ট পড়তে আমাদের Government Service Information category ভিজিট করুন।

নিয়মিত আমাদের সকল পোষ্ট পড়তে Dainik kantha ভিজিট করুন।

সর্বশেষ আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ  Dainikkantha এ।

12 thoughts on “জিডি করার নিয়ম । অনলাইনে জিডি করার নিয়ম (নমুনা জিডি সহ)”

    • আপনার মতামতের জন্য অত্যন্ত ধন্যবাদ। আশা করছি সবসময় পাশে থাকবেন এবং আপনার মূল্যবান মতামত দিবেন।
      আপনার মন্তব্য আমাদের এগিয়ে চলার আরও একধাপ শক্তি বাড়িয়ে দেয়।

      Reply
  1. Online এ শুধু হারানো/প্রাপ্তির জন্য জিডি করা যায়। কিন্তু হুমকি দিলে সেটার জিডি করার নিয়ম কি? সেখানে তো এমন কোন অপসন দেয় নি।

    Reply
    • জিডির নোট এ উল্লেখ করতে হবে। আর বিষয় সিলেক্টে আপনি অন্যান্য অপশন পাবেন। তবে দেশের সব জেলায় অনলাইন জিডির সুবিধা থাকলেও সব বিষয়ের জিডি অনলাইনে করা যাচ্ছে না এখন পর্যন্ত। এবিষয়ে সরকারিভাবে আপডেট দেওয়া হলে জানিয়ে দেওয়া হবে।

      আপনি অনলাইনে জিডি করতে না পারলে নিজে বা আপনাী হয়ে যে কেউ নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করতে পারবেন বিনামূল্যে।

      আশা করছি আপনি আপনার বিষয়টি সম্পর্কে সম্পন্ন ধারণা পেয়েছেন।

      ধন্যবাদ।

      Reply

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.