বছরে কয়দিন রোজা রাখা হারাম । রোজা রেখে কি কি করা যাবে না

ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে সাওম বা রোজা। কিন্তু বছরে কয়দিন রোজা রাখা হারাম এবং রোজা রেখে কি কি করা যাবে না তা জানা জরুরি।

প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোস্ট “বছরে কয়দিন রোজা রাখা হারাম ? রোজা রেখে কি কি করা যাবে না” এ।

আজকে আমরা বছরে কয়দিন রোজা রাখা হারাম এবং রোজা রেখে কি কি করা যাবে না এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। চলুন একে একে রোজার নিষিদ্ধ সময় এবং রোজার বিধিনিষেধ জেনে নেওয়া যাক।

বছরে কয়দিন রোজা রাখা হারাম

রমজান মাসে রোজা রাখা মুসলমানদের জন্য ফরজ। এছাড়া অন্য ১১ মাস রোজা রাখা সুন্নত এবং নফল ইবাদতের সমান।

কিন্তু, বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৫ দিন রোজা রাখা হারাম। অর্থাৎ, কোরআন হাদিসে বছরের ৫ টি দিন মুসলমানদের রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ রোজার সময়সূচি ২০২৪ । সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৪

আরবি শাওয়াল মাসের ১ তারিখ অর্থাৎ পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা হারাম। এবং আরবি জিলহাজ মাসের ১০ তারিখ তথা ঈদুল আযহা এবং ১১,১২ এবং ১৩ জিলহজ রোজা রাখা হারাম।

এক পলকে দেখে নেওয়া যাক বছরের কোন ৫ দিন রোজা রাখা হারামঃ

  • শাওয়াল মাসের ১ তারিখ রোজা রাখা হারাম। (ঈদুল ফিতর)
  • জিলহজ মাসের ১০,১১,১২ এবং ১৩ তারিখ। (ঈদুল আযহা সহ এর পরের তিন দিন)

উপরে উল্লেখিত এই ৫ দিন রোজা রাখা হারাম। অর্থাৎ শাওয়াল মাসের ১ তারিখ রোজা রাখা হারাম। এবং বছরে মোট ৫ দিন রোজা রাখা হারাম।

আশা করছি বছরে কয়টি অর্থাৎ কয়দিন রোজা রাখা হারাম এবং কন কন দিন রোজা রাখা হারাম তা জানতে পেরেছেন।

রোজার সতর্কতা

প্রত্যেক মুহূর্তে আমাদের মন অনেক কিছু জানতে চায়। যেমন রমজান মাসে রোজা রেখে যেকোনো কাজ করতে গেলেই মনে হয় রোজা রেখে কি কি করা যাব না।

অর্থাৎ, প্রত্যেক রোজাদার রোজা রেখে স্বাভাবিক জীবনে কি কি করতে পারবেন আর কি পারবেন না এ বিষয়ে অনেক অজানা সমস্যায় ভুগেন।

আরও পড়ুনঃ  তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ ( চার রাকাতের দোয়া সহ)

মূলত রমজান মাসের রোজা হচ্ছে ফরজ ইবাদত। আর ফরজ ইবাদত পালন করা আবশ্যক।

এবার রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি এবং রোজা মাক্রুহ হওয়ার কারণ কি কি তা জানতে হবে।

রোজা ভঙ্গের কারণ এবং রোজা মাক্রুহ হওয়ার কারণ সমূহ জানতে পারলেই নিজ থেকে বোঝা যাবে যে রোজা রেখে কি কি করা যাবে না বা কি করা যাবে।

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

  • ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছু খেলে।
  • বিড়ি/ সিগারেট খেলে,
  • কাঁচা চাল, আটার খামির বা লবণ খেলে,
  • অখাদ্য জাতীয় কিছু খেলে,
  • নিজের থুতু নিজে খেলে,
  • স্ত্রী সম্ভোগের পর রোজার কথা মনে পরলেও আবার একই কাজ করলে,
  • নাক/কান দিয়ে কোনো তরল ঔষধ দিলে,
  • দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে,
  • হস্তমৈথুন করলে,
  • বমি করা বা বমি আসার পর তা গিলে ফেললে,

আরও পড়ুনঃ  নামাজের নিষিদ্ধ সময় সমূহ জেনে নিন (হাদিসের আলোকে)

মূলত, কিছু খেলে, পান করলে কিংবা স্ত্রী সম্ভোগ অর্থাৎ স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে রোজা সরাসরি ভঙ্গ হয়ে যায়।

তাই কিছু খাওয়া, পান করা কিংবা স্ত্রীর সাথে মেলামেশা হয় এমন কোনো কাজ একদমই করা যাবে না।

এবার তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক রোজা মাক্রুহ হওয়ার কারণ সমূহ। এরপর জানবো রোজা রেখে কি করা যাবে কি করা যাবে না এমন সব বিষয়ে বিস্তারিত।

রোজা মাক্রুহ হওয়ার কারণ সমূহ

মাক্রুহ শব্দের অর্থ হচ্ছে অপছন্দনীয়। রোজা মাক্রুহ বলতে বোঝায়, রোজা রেখে যেসব কাজ করা ইসলামের দৃষ্টিতে উচিত না। রোজা মাক্রুহ হলে রোজা ভেঙ্গে যায় না, তবে হালকা হয়ে যায়।

সাধারণত যেসব কারণে রোজা মাক্রুহ হয় তার মধ্যে অন্যতম কারণ সমূহ জেনে নেওয়া যাকঃ

  • ওজুর সময় নাকে পানি গেলে রোজা মাক্রুহ হবে।
  • নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কিছু চিবাতে থাকলে রোজা মাকরুহ হবে।
  • যেকোনো কিছু  মুখে দিয়ে রাখলেও তাতে রোজা মাকরুহ হবে।
  • রোজা রেখে সারাদিন নাপাক থাকলে রোজা মাক্রুহ হবে।
  • রোজা রেখে অন্য কারোর গিবত করলে রোজা মাকরুহ হয়।
  • যৌন উত্তেজনাময় কিছু দেখলে বা শুনলেও রোজা মাকরুহ হয়।
  • নাচ, গান, সিনেমা দেখা কিংবা এগুলি করলে রোজা মাকরুহ হয়।
  • রোজা রেখে মিথ্যা কথা বললে মহাপাপ এবং রোজা মাক্রুহ হবে।
  • সারাদিন রোজা থেকেও ঝগড়া-বিবাদ করলে রোজা মাকরুহ হবে।
  • সারা দিন সঠিক ভাবে রোজা রেখে হারাম খাবার দিয়ে ইফতারি করলে।
  • দাত ব্রাশের জন্য পেস্ট বা অন্য কিছু ব্যবহার করলে রোজা মাক্রুহ হয়ে যায়।
  • মুখে গুল ব্যবহার করলে রোজা মাক্রুহ হয় আর পেটে গেলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
  • স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমান লালা মুখে জমিয়ে রাখলে রোজা মাক্রুহ হবে।
  • রান্নার সময় রোজাদার কোনো কিছুর স্বাদ চেক করলে রোজা মাকরুহ হয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে সেটা করার বিধান আছে।

আরও পড়ুনঃ  জাকাত কি, কাকে বলে?  জাকাত কাদের উপর ফরজ?

উপরের কাজগুলি করলে রোজা না ভাঙলেও রোজা মাক্রুহ হয়ে যাবে । তাই রোজা রেখে এমন কিছু করা যাবে না যার কারণে রোজা মাক্রুহ বা হালকা হয়ে যাবে।

এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে রোজা রেখে রোজা ভঙ্গের কারণ এবং রোজা মাক্রুহ হওয়ার কারণগুলি এড়িয়ে চলে সতর্ক থাকতে হবে।

অর্থাৎ, রোজা রেখে কি কি করা যাবে না এটি জানার আগে রোজা বঙ্গের কারণ এবং রোজা মাক্রুহ এর কারণগুলি সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

রোজা রেখে কি কি করা যাবে না

রমজান মাসে রোজা রেখে কি কি করা যাবে এবং কি কি করা যাবে না এমন সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রশ্ন আমাদের মনে রয়েছে। চলুন একেক করে সবগুলি প্রশ্নের উত্তর জেনে নেই।

রোজা রেখে রক্ত দেওয়া যাবে কি?

হ্যা, রোজা রেখে রক্ত দেওয়া যাবে। কারণ, রোজা ভঙ্গের কারণ হচ্ছে শরীরে কিছু প্রবেশ করানো। কিন্তু রক্ত দিলে রক্ত বের করা হয়।

তবে, এমন যদি হয় যে রোজাদার ব্যক্তি রক্ত দিলে শারীরিক ভাবে দুর্বল বা অসুস্থ হয়ে পরবে তাহলে তার জন্য রোজা রেখে রক্ত দেওয়া মাক্রুহ।

রোজা রেখে সহবাস করা যাবে কি?

হ্যা রোজা রেখে সহবাস করা যাবে। তবে রোজা চলাকালীন অবস্থায় না। রসারাদিন রোজা শেষে ইফতারির পরে স্ত্রী সহবাস করা জায়েজ আছে।

রোজা রেখে নখ কাটা যাবে কিনা?

হ্যা, রোজা রেখে নখ বা চুল কাটা যাবে। ইসলামে এর বিধান আছে। তাই রোজা রেখে নখ বা চুল কাটলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।

রোজা রেখে স্ত্রীকে চুমু দেওয়া যাবে?

হ্যা, রোজা রেখে স্ত্রীকে চুমু দেওয়া যাবে আলিঙ্গন ও করা যাবে। ইসলামে রোজা রেখে স্বামী স্ত্রী চুমু বা আলিঙ্গনকে সমর্থন করে।

তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, চুমু বা আলিঙ্গন যেন যৌন মিলনের পর্যায়ে না যায়। তাহলেই রোজা রেখে স্ত্রীকে চুমু দিলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।

রোজা রেখে হস্তমৈথুন করলে কি হয়?

খুব জঘন্য পাপের জন্য গুনাহ হয় হস্তমৈথুন করলে। আর রোজা ভঙ্গের কারণ দ্বারা স্পষ্ট যে, রোজা রেখে হস্তমৈথুন করলে রোজা ভেঙ্গে যায়।

তাই রোজা রেখে হস্তমৈথুন করা যাবে না। এমনকি কখনোই করা উচিত না। ইসলাম এটিকে সমর্থন করে না।

রোজা সম্পর্কিত FAQS

সহবাস করে রোজা রাখা যায়?

হ্যা, সহবাস করে রোজা রাখা যাবে। তবে সহবাস করতে হবে ইফতারির পর থেকে সেহরির শেষ সময়ের মধ্যে।

হাদিসে এসেছে যে, নবীজি ফরজ গোসল ফরজ হওয়া (অর্থাৎ স্ত্রী সহবাসের পরে) সেহরি খেয়েছেন। এবং ফজর নামাজের আগে গোসলের মাধ্যমে পবিত্র হয়ে নিয়েছেন।

রোজা রেখে চুল দাড়ি কাটা যাবে কি?

হ্যা, রোজা রেখে চুল দারি কাটা যাবে। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।

রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে?

সাধারণত ইনহেলার ব্যবহার করা হয় শ্বাস কষ্টের রোগীদের ক্ষেত্রে। ইনহেলার নেওয়ার সময় বাতাসের মতো মনে হলেও এটি একটি তরল পদার্থ।

তাই, রোজা রেখে ইনহেলার নিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু রোগী সুস্থ হয়ে রোজার কাফফারা আদায় করে দিলেও হবে। 

রোজা রেখে স্বামী স্ত্রী কি কি করতে পারবে?

এমন কিছু করতে পারবে না যা রোজা ভঙ্গের কিংবা রোজা মাক্রুহ এর কারণ হয়।

এছারা রোজা রেখে স্বামী স্ত্রী সবকিছুই করতে পারবে।

রোজা রেখে নাভির নিচের লোম কাটা যাবে কি?

হ্যা , রোজা রেখে নাভির নিচের লোম কাটা যাবে। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।

বছরে কয়দিন রোজা রাখা হারাম?

বছরে ৫ দিন রোজা রাখা হারাম।

১) ঈদুল ফিতর বা রোজার ইদের দিন।
২) ঈদুল আযহা বা কোরবানির দিন। এবং কোরবানির পরবর্তী তিন দিন রোজা রাখা হারাম।

শাওয়াল মাসের কোনদিন রোজা রাখা হারাম?

শাওয়াল মাসের ১ তারিখ অর্থাৎ রোজার ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। এছারা শাওয়াল মাসের অন্য সব দিন ছয় রোজা সহ নফল রোজা রাখা যাবে।

রোজার নিয়ে সর্বশেষ

প্রিয় মুসলমান, আজকের পোস্ট থেকে আমরা bochor koydin roja rakha haram এবং কবে কবে তা জেনেছি। এবং জেনেছি রোজা রেখে কি কি করা যাবে না সে বিষয়ে।

আশা করছি এই পোস্ট থেকে বছরের রোজা রাখার নিষিদ্ধ দিন সমূহ, রোজা ভঙ্গের কারণ এবং রোজা মাক্রুহ হওয়ার কারণ সহ বিস্তারিত সকল বিষয়ে জানতে পেরেছেন।

রোজা ও ইসলাম সম্পর্কিত আমাদের অন্যান্য সকল পোস্ট পড়তে Islamic info Category ভিজিট করুন।

নিয়মিত আমাদের সকল পোস্ট পড়তে Dainik Kantha ভিজিট করুন।

সর্বশেষ আপডেট পেতে চোখ রাখুন অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.