Last Updated on 4 months by Shaikh Mainul Islam
স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তান প্রতিবন্ধী হয় এমন গুজব দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আসলে একদমই এরকম কিছু সত্য না। তবে স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ সম্পর্কিত সতর্কবার্তা জানা উচিত। কারণ স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ একই হলে কোনো সমস্যা না হলেও রক্তের গ্রুপ সম্পর্কিত কিছু কারণে মিল অমিল হলে সমস্যা হতে পারে।
আমাদের আশপাশে সাধারণত শোনা যায় যে, স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে তাদের সব সন্তান প্রতিবন্ধী হবে। অনেক সময় দেখা যায় এজন্য ঠিক হওয়া বিবাহ ভেঙ্গে দেন মুরব্বিরা। তবে এই বিষয়ে তাদের যথেষ্ট ভুল ধারণা রয়েছে। স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কি বাচ্চার সমস্যা হয় কি না তার সঠিক তথ্য জানা উচিত।
আজকের পোষ্টে আমরা জানবো স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ সম্পর্কিত সতর্কবার্তা এবং স্বামীর রক্ত এবং স্ত্রীর রক্ত এক হলে বা ভিন্ন হলে সন্তান কেমন হবে এবং কোন গ্রুপের রক্ত স্বামী স্ত্রীদের মধ্যে থাকলে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেই RH – Antibody নিতে হবে।
স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কি হয়?
স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কিছুই হয় না। সন্তান সুস্থ সবল ভাবে জন্ম গ্রহণ করে। স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তান প্রতিবন্ধি হয় এটা সম্পূর্ণ একটি গুজব। এশিয়া মহাদেশে প্রায় ৪৬ ভাগ মানুষের রক্তের গ্রুপ বি। সেখানে স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ একই হলে বা এক হবে এটা খুবই স্বাভাবিক।
দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মধ্যে একটি ভুল তথ্য প্রচলিত হয়ে আসছে। আর তা হচ্ছে স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তান বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধি হবে। আসলে বৈজ্ঞানিক ভাবে এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি গুজব। তবে স্বামী স্রির রক্তের গ্রুপ সম্পর্কিত সতর্কবার্তা রয়েছে। এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়লে তবেই আপনি স্বামী স্ত্রীর রক্ত নিয়ে সঠিক তথ্য পেয়ে যাবেন।
স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ সামঞ্জস্য চার্ট দেখে নেওয়া যাক
দীর্ঘদিনের গুজবকে দুর করতে এবং পরবর্তী স্বাস্থ্য সচেতন থাকতে স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ সামঞ্জস্য চার্ট সকলের জানা দরকার। এ চার্টে দেখতে পাবেন স্বামী স্ত্রীর রক্ত একই হলে কি হয় আলাদা হলে কি হয় সেই তথ্য।স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ কেমন হওয়া উচিত তা বোঝার জন্য আগে চার্টটি দেখে নেওয়া যাক।
স্বামীর রক্তের গ্রুপ | স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ | বাচ্চা যেমন হবে |
---|---|---|
পজেটিভ | পজেটিভ | সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চা |
নেগেটিভ | পজেটিভ | সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চা |
নেগেটিভ | নেগেটিভ | সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চা |
উপরের চার্ট থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে,
- স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ এবং স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে তাদের সন্তান হবে একদম সুস্থ স্বাভাবিক।
- স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ এবং স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে তাদের সন্তান হবে একদম সুস্থ স্বাভাবিক।
- স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ এবং স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে তাদের সন্তান হবে একদম সুস্থ স্বাভাবিক।
উপরের যেকোনো একটি বিষয় আপনার বা আপনাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মিলে গেলে এই বিষয়ে আপনাদের আর কোনরকম পদক্ষেপ বা চিন্তা করতে হবে না।
আরও পড়ুনঃ সেক্সে রসুনের উপকারিতা । রসুন খেলে কি উপকার হয় যৌন কর্মে
তবে এবারের চার্টের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী যদি আপনার বা আপনাদের স্বামী স্ত্রীদের মধ্যে মিলে যায় তাতে ভয় না পেয়ে বা আতঙ্কিত না হয়ে সুস্থ মস্তিস্কে জেনে নিন কি করণীয়। একটি বিষয় মনে রাখবেন যখানে সমস্যা সেখানে সমাধান আছে।
বাবা মায়ের রক্তের গ্রুপ যেমন হলে প্রতিষেধক নিতে হবে
নিচের চার্ট অনুযায়ী স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ হলে সন্তান জন্মের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মাকে RH Anti-D Antibody ইঞ্জেকশন দিতে হবে। তবে এটি শুধু মাত্র স্বামীর পজিটিভ এবং স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে তাদের সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে তবেই এটি মায়ের শরীরে দিতে হবে।
স্বামীর রক্তের গ্রুপ | স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ | প্রথম সন্তানের রক্তের গ্রুপ | প্রতিষেধক প্রয়োজন |
---|---|---|---|
পজিটিভ | নেগেটিভ | সন্তান নেগেটিভ গ্রুপের | না |
পজিটিভ | নেগেটিভ | সন্তান পজিটিভ গ্রুপের | সন্তান জন্মের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মাকে RH Anti-D Antibody ইঞ্জেকশন দিতে হবে। |
উপরের চার্ট থেকে দেখা যায় যে স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ এবং স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে তাদের সন্তান যদি নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ সম্পন্ন হয় (অর্থাৎ সন্তান যদি মায়ের রক্তের গ্রুপ পায়) তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। এবং কোনো প্রতিষেধক নিতে হবে না।
আরও পড়ুনঃ পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা কমানোর উপায়
তবে, স্বামী পজিটিভ এবং শ্রী নেগেটিভ রক্তের হলে তাদের সন্তান যদি পজিটিভ রক্তের গ্রুপ (অর্থাৎ পিতার রক্তের গ্রুপ) সম্পন্ন হয় তাহলে জন্মের ৭২ ঘণ্টা অর্থাৎ তিন দিনের মধ্যে মায়ের শরীরে Rh Anti-D Antibody ইঞ্জেকশন দিতে হবে। এতে দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুনঃ শারীরিক ফিটনেস ধরে রাখার কৌশল
স্বামীর পজিটিভ এবং স্ত্রীর নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ হলে সাধারণত জন্ডিসসহ কিছু জটিলতা সন্তানের মধ্যে হতে পারে। তবে এই বিষয়ে আগেই জানলে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ভেক্সিন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ সম্পর্কিত সতর্কবার্তা জানা উচিত।
আরও পড়ুনঃ বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা
স্বামী স্ত্রীর বা বাবা মায়ের রক্তের গ্রুপ একই হলে কি কোন সমস্যা ?
না, স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ একই হলে কোন সমস্যা নাই। এটি সমাজের মুরব্বিদের বা অজ্ঞদের একটি ভুল ধারণা মাত্র। বরং স্বামীর পজিটিভ গ্রুপের রক্ত এবং স্ত্রীর নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের হলে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয় যদি সন্তান পজিটিভ গ্রুপের জন্ম নেয়।
স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ সম্পর্কিত FAQS
হ্যাঁ। স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে বাচ্চা হয়। বাচ্চা হওয়া না হওয়ার জন্য স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ কোনোভাবেই সম্পর্কিত না।
প্রকৃত অর্থে স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তান সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে জন্মগ্রহণ করেন। কোনো ধরনের কোনো সমস্যা হয় না।
এর প্রকৃত উত্তর হচ্ছে স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হওয়া উচিত অথবা স্বামীর নেগেটিভ এবং স্ত্রীর নেগেটিভ অথবা স্বামীর নেগেটিভ এবং স্ত্রীর পজিটিভ রক্তের গ্রুপের হওয়া উচিত।
কোনো সমস্যা হবে না। শুধু মাত্র স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ এবং স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয় এবং তাদের সন্তান পজিটিভ গ্রুপের হয় তাহলে একটি ইঞ্জেকশন মায়ের শরীরে দিতে হবে।
সন্তান জন্মের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মাকে RH Anti-D Antibody ইঞ্জেকশন দিতে হবে।
স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তান সুস্থ হবে স্বাভাবিক সাবলীল হবে। সুতরাং কিছুই করার প্রয়োজনীয়তা নাই।
না, স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে বাচ্চার কোনো ধরনের সমস্যা হয় না।
বাবা মায়ের রক্তের গ্রুপ সম্পর্কিত সর্বশেষ
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ সম্পর্কিত সতর্কবার্তা মুলক সঠিক তথ্য কি। তবে স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপের কারনেই শুধু মাত্র সন্তান প্রতিবন্ধি বা বিকলাঙ্গ হয় না।
সন্তান সুস্থ হওয়া না হওয়ার অনেক কারণ আছে।
তবে আজকের পোষ্টে রক্তের গ্রুপের কারণে কি হতে পারে না পারে তা আর জানতে বাকি নাই নিশ্চয়ই।
আরও পড়ুনঃ পান খাওয়ার উপকারিতে ও অপকারিতা
এই বিষয়ে আপনার আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েন।
এরপর আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানান। আমরা আপনার কমেন্টের উত্তর দিবো।
এরপরে আরও কিছু জানতে চাইলে একজন এমবিবিএস ডাক্তারের শরণাপন্ন হলেই সব জানতে পারবেন।
এবং সন্তান জন্মদানের আগ মুহূর্তে যদি দেখেন আপনাদের স্বামীর রক্ত পজিটিভ এবং স্ত্রীর নেগেটিভ তাহলে অতি সত্বর ডাক্তারের সাথে কথা অলে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন।
নিয়মিত আমাদের আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। চোখ রাখুন আমাদের ফেসবুক পেজে ।
4 thoughts on “স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ সম্পর্কিত সতর্কবার্তা ও করণীয়”