শ্রদ্ধেয় পাঠক, আজকে আমরা ৭ মার্চ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম জানবো। অর্থাৎ ৭ ই মার্চ জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস উপলক্ষে আপনি কোথাও বক্তব্য দিতে হলে কিভাবে বক্তব্য দিবেন, শুরু থেকে কিভাবে গুছিয়ে মানুষের সামনে ঐতিহাসিক দিবসকে ফুটিয়ে তুলবেন টা জানাবো।
বাঙ্গালী জাতির জীবনে ৭ মার্চ জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বাংলার অবিসাংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। যে ভাষণ ছিলও মূলত বাঙ্গালী জাতির জীবনে মুক্তিযুদ্ধের সুচনা।
মুক্তিযুদ্ধে ৭ মার্চের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। এই সম্পর্কে আমাদের পূর্ববর্তী পোস্টটি পড়লে মুক্তিযুদ্ধে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ ৭ মার্চের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ pdf । বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ লিখিত
আজকের পোষ্টে আমরা জানবো ৭ মার্চ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম। অর্থাৎ ৭ মার্চ আপনি বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত সভা অনুষ্ঠানে কিভাবে একটি চমৎকার উপস্থিত বক্তৃতা উপস্থাপন পারেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ৭ মার্চ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম সমূহ।
৭ মার্চ বক্তব্য দেওয়ার আগে যা জানতে হবে
প্রিয় পাঠক, যেকোনো বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার আগে ওই বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট জানাশোনা থাকতে হবে। যথেষ্ট ধারণা আপনার মধ্যে না থাকলে জন সম্মুখে সেই বিষয় সম্পর্কে গুছিয়ে বলা কঠিন হয় যাবে।
তাই ৭ মার্চ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে ৭ মার্চ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবেহ।
আর পড়ুনঃ ৭ মার্চের ভাষণ রচনা । ঐতিহাসিক ৭ মার্চ রচনা
এরপর আপনাকে অবশ্যই গুছিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলার জন্য একটি ফ্রেম আকারে সাজাতে হবে।
যেখানে ৭ মার্চ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলত হবে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেওয়ার কারণ, ভাষণ উল্লেখিত দাবী সমূহ, ভাশনে জনগনের প্রতি বার্তা এবং ৭ মার্চের ফলাফল সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস কেন ? ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন
৭ মার্চ কেন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর এমন এক ভাষণ? এখান থেকে শুরু করে আপনাকে অবশ্যই ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতির প্রাপ্তি কি ছিলও সে বিষয়ে স্পষ্ট কথা উল্লেখ করতে হবে আপনার বক্তব্যের মধ্যে।
বক্তব্য দেওয়ার সময় লক্ষণীয়
বক্তব্যের মূল কাঠামো কেমন হবে তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। এবার আসুন, বক্তব্য দেওয়ার সময় লক্ষণীয় কিছু বিষয় আছে যেগুলো অবশ্যই আপনাকে মেইন্টেইন করতে হবেহ।
শুধু মাত্র ৭ মার্চ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময়েই নয়। বরং প্রায় সব ধরনের উপস্থিত বক্তব্য দেওয়ার সময় এই বিষয়গুলো স্পষ্ট রাখতে হবেহ।
আরও পড়ুনঃ ৭ মার্চ সংক্রান্ত সকল প্রশ্ন উত্তর । ৭ মার্চের জানা অজানা সবকিছু
৭ মার্চের বক্তব্য দেওয়ার সময়ে লক্ষণীয় হচ্ছেঃ
- বিষয় ভিত্তিক উপস্থিত বক্তৃতায় নির্ধারিত বিষয়ের মধ্যে থাকা।
- খুব কম সময়ে বিষয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বক্তব্যের মধ্যে উল্লেখ করা।
- বক্তব্যের মধ্যে নির্দিষ্ট সাল তারিখ এবং স্থানের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা।
- থেমে থেমে সহজ সাবলীল স্পষ্ট ভাষায় বক্তব্য দেওয়া।
- অঙ্গভঙ্গি বিষয়ের সাথে মিল রেখে বজায় রাখা যাতে দর্শকরা পরের বাক্য শোনার জন্য আগ্রহিত হয়।
- যে দিবস উপলক্ষে বক্তব্য দেওয়া সেই দিবসের সাথে সম্পৃক্ত বিষয় সমুহকে বক্তব্যে মধ্যে বেশী প্রাধান্য দেওয়া।
শুধু মাত্র ৭ মার্চ ঐতিহাসিক দিবস উপলক্ষে নয়, বরং যেকোনো দিবস উপলক্ষে উপস্থিত বক্তৃতা দেওয়ার সময় উপরের এই বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবেহ।
এরপরে যখন যে ষ্টেজে আপনি বক্তব্য দিবেন সেই ষ্টেজে উপস্থিত সভার সভাপতি/প্রধান শিক্ষক/ শ্রদ্ধেয় সবাইকে আপনার পক্ষ থেকে দিবস অনুযায়ী সালাম, শুভেচ্ছা দিবেন।
আরও পড়ুনঃ বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা
প্রিয় পাঠক, আপনি কি কখনো এর আগে অনেক মানুষের সামনে যে কোনও বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন ?
উত্তরটি যদি না ও হয় তাতে কোনও সমস্যা নাই। কারণ আজকের এই পোস্টটি যদি পড়েন তাহলে সব ধরনের বক্তব্য আপনি দিতে পারবেন লাখো মানুষের সামনে।
এবং ৭ মার্চ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম পড়ার পরে যদি নমুনা বক্তব্যটি পড়েন তাহলে অবশ্যই আপনি একজন সেরা বক্তা হবেন হবেন হবেন।
এবার তাহলে চলুন ৭ মার্চ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম জানার পরে এখন ৭ মার্চের একটি নমুনা বক্তব্য দেখে নেওয়া যাক।
নমুনা বক্তব্যটি ধারণা দেওয়ার জন্য মাত্র। নমুনা বক্তব্যের আদলে আপনি ৭ মার্চ উপলক্ষে একটি বক্তব্য দিতে পারেন যেকোনো জায়গায়।
হতে পারে সেটি উপস্থিত বক্তৃতা কিংবা শুভেচ্ছা বক্তৃতা কিংবা যেকোনো ধরনের বক্তৃতা।
৭ মার্চ নিয়ে নমুনা বক্তব্য
“এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দিবো- এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশা আল্লাহ।”
শুরু করছি মহান আল্লাহ তায়ালার নামে।সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার।
আজকের সভায় উপস্থিত সম্মানিত সভাপতি, শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক, শ্রদ্ধেয় সহকারী শিক্ষক বৃন্দ এবং সামনে আমার সিনিয়র এবং জুনিয়র শিক্ষার্থী বৃন্দ সকলের প্রতি আমার সালাম এবং মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।
আজ ৭ মার্চ। জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস। পশ্চিম পাকিস্তানের একের পর এক অন্যায় অত্ত্যাচার, শোষণ-নির্যাতন এবং সর্বশেষ ৭০ এর নির্বাচনে জয়ের পরেও ক্ষমতা হস্থান্তর নিয়ে টালবাহনা করার প্রতিবাদে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার অবিসাংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে বাঙ্গালির উদ্দেশ্যে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
এই ভাষণ ছিলও বাঙ্গালী জাতির জীবনে মুক্তির পথ শুরুর মাদ্ধম।
এই ভাষনে শেখ মুজিবুর রহমান তুলে ধরে ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের অন্যায় অত্ত্যাচার, শোষণ- নির্যাতনের কথা।
এতে গোটা বাঙ্গালীর রিদয়ে এক প্রতিবাদি মনোভাব তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
যার ফলে সকলকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য একত্রিত করার পথ সহজ হয়ে গিয়েছিল গোটা পূর্ব বাংলার।
৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু তুলে ধরেন, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬ এর ৬ দফা, ৬৯ এর গনুভভ্যত্থ্যান, ৭০ এর নির্বাচন।
যার প্রত্যেকটি জায়গায় পূর্ব বাংলার জনগণকে করে হয়েছে নিগ্রিত এবং তুচ্ছ।
এছাড়াও নেতা শেখ মুজিব তুলে ধরেন, প্রত্যেক পদে পদে পূর্ব বাংলার জনগণকে তুচ্ছ এবং বৈষম্যের কথা।
এতে করে সারা পূর্ব বাংলার জনগন একত্রিত হয় মুক্তিযুদ্ধর জন্য।
এখানেই মূলত মুক্তিযুদ্ধে ৭ মার্চের গুরুত্ব ও তাৎপর্য।
বিশেষ কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি জানতেন বাঙ্গালীদের মনে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে একত্রিত করতে পারলে বাংলার দামাল ছেলেরা পারবে দেশকে স্বাধীন করতে।
এর পরের গল্প সবার জানা। তবে ৭ মার্চ -ই ছিলও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম পথ তৈরি সূচনা।
অবশেষে ২৬ মার্চ থেকে ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়য়ে স্বাধীন হয় দেশ।
তবে মুক্তিযুদ্ধে থেকে যায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ভুমিকা। যা ইউনেস্কো থেকে স্বীকৃতি পায়।
এবং সারা বিশ্বে ১৮ টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর এমন নেতৃত্ব মনোভাব থেকে আমাদের এখনকার সময়ে শেখার মতো আছে অনেক কিছু।
আমরা বাঙ্গালী হিসেবে গর্বিত আমাদের একজন বঙ্গবন্ধু ছিলেন।
৭ মার্চের বক্তব্য নিয়ে সর্বশেষ
প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা ৭ মার্চ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম জানার চেষ্টা করেছি।
এবং ৭ মার্চ উপলক্ষে একটি নমুনা বক্তব্য দেখেছিহ।
আরও পড়ুনঃ ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে বক্তৃতা দেওয়ার নিয়ম (নমুনা বক্তব্য সহ)
আশা করছি ৭ মার্চ উপলক্ষে বক্তৃতা/ উপস্থিত বক্তব্য দেওয়ার জন্য এই ব্লগ পোস্টটি একটু হলেও আপনার উপকারে আসবে।
সাত মার্চ এবং বিভিন্ন দিবসে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম জানতে আমাদের জাতীয় ক্যাটাগরি ভিজিট করুন।
নিয়মিত আমাদের সকল পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
চোখ রাখুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ। সাবস্ক্রাইব করে রাখুন, সবার আগে সকল পোস্টের নোটিফিকেশন চলে যায় আপনার কাছে।
1 thought on “৭ মার্চ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম (নমুনা বক্তব্য সহ)”