জাকাত কি, কাকে বলে?  জাকাত কাদের উপর ফরজ? বিস্তারিত জেনে নিন

Last Updated on 10 months by Shaikh Mainul Islam

প্রিয় পাঠক, স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের আজকের পোস্ট “জাকাত কি, জাকাত কাকে বলে এবং জাকাত কাদের উপর ফরজ” এ পোষ্টে। একজন ধনসম্পদের মালিক মুসলমানের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইসলামের ৫ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি স্তম্ভ হচ্ছে জাকাত। ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের মদ্ধ ২ টি স্তম্ভ অর্থ সম্পদের উপর নির্ভরশীল।

অর্থের সাথে ইসলামের দুটি স্তম্ভ হচ্ছে জাকাত এবং হজ। এর মধ্যে জাকাত তখনই একজন মুসলমানের জমাকৃত অর্থের উপর নির্ভর করে।

আরও পড়ুনঃ সূরা তারাবি পড়ার নিয়ম । সূরা তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত

আজকের পোষ্টে আমরা জাকাত সম্পর্কে যা যা জানবো তা হচ্ছে জাকাত কি, জাকাত কাকে বলে, জাকাত কত প্রকার ও কি কি, জাকাত কাদের উপর ফরজ, জাকাত দেওয়ার নিয়ম, জাকাত দেওয়ার সঠিক সময় কখন এই বিষয়ে বিস্তারিত। চলুন তাহলে জাকাত সম্পর্কিত এই গুরুত্বপূর্ণ ৬ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

জাকাত কি । জাকাত কাকে বলে

ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের (খুঁটি) মধ্যে অন্যতম একটি স্তম্ভ জাকাত। জাকাতের পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা, পরিশুদ্ধতা, বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি।

অর্থাৎ, কোনও প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান মহিলা পুরুষের নিজের আয় ইনকাম বা নিজের কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ এক বছর জমা থাকলে তা থেকে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ সম্পদ বিলিয়ে দেওয়াকে জাকাত বলে।

আশা কিরছি জাকাত কি তা বুঝতে পারছেন।

নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বলতে নির্ধারিত অর্থাৎ যে পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে জাকাত দিতে হয় সেই সম্পদের পরিমাণকে বুঝায়।

এই পোষ্টে নিসাব পরিমাণ সম্পদ সম্পর্কেও জানবো।

আরও পড়ুনঃ  রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি । কি কি কারণে রোজা মাকরুহ হয়

তাহলে এক কোথায় বলা যায় যে, কোনও মুসলমান নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে সেই সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট একটি অংশ গরীব দুঃখী অর্থাৎ জাকাত পাওয়ার যোগ্য এমন ব্যক্তিদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়াকে জাকাত বলে।

জাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি।

জাকাত কত প্রকার ও কি কি

সাধারণত ৬ বিষয়ের উপর জাকাত দেওয়ার নিয়ম আছে। তবে এর মধ্যে অন্য আলেমদের মতে আরও কছু প্রকার থাছে।

তবে মূলত, এই ছয় বিষয়ের উপরেই জাকাত দেওয়া হয়। অর্থাৎ জাকাত ৬ প্রকার।

৬ প্রকার জাকাত হচ্ছে, স্বর্ণ বা সোনা, রৌপ্য বা রুপা, টাকা বা অর্থ, চতুষ্পদ জন্তু বা গবাদিপশু (যেমন গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি), ব্যবসায়িক সম্পদ এবং উৎপাদিত ফসল।

এই ছয় ধরনের জিনিসের জন্য একজন মুসলমান ব্যক্তির জাকাত দিতে হবে।

জাকাত দেওয়ার জন্য এর বাহিরে আরও প্রকার থাকলেও বিভিন্ন বিষয়ের প্রেক্ষিতে সব প্রকারই এই ছয়তির কোনও একটির ভিতরে সামিল।

আরও পড়ুনঃ ঈদুল ফিতরে করণীয় বর্জনীয় সমূহ

জাকাত কাদের উপর ফরজ

আপনি যদি একজন মুসলমান এবং উপরের ছয়টি জিনিষের অন্তত যেকোনো একটি জিনিষের (অবশ্যই নির্ধারিত পরিমাণ হতে হবে) মালিক হন এক বছরের জন্য তাহলে আপনার উপর জাকাত আদায় করা ফরজ হবে।

আরও সহজ ভাবে বললে, এই ছয়টি জিনিষের নিসাব পরিমাণ বা নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে এক বছরের জন্য।

আরও সহজ ভাবে বললে, এক বছরের জন্য এই সম্পদ গুলোর মালিক আপনি হতে চাইলে জাকাত আপনার উপর ফরজ।

এবার নিশ্চয়ই  জাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে কি পরিমাণ সম্পদকে বোঝানো হয়েছে তাই জানতে চাচ্ছেন।

চলুন জেন নেওয়া যাক জাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদ পরিমাণ বলতে কোন সম্পদের কতটুকু বোঝানো হয়েছে।

নিসাব পরিমাণ সম্পদের পরিমাণ কতটুকু 

স্বর্ণ বা সোনা = কোনও মুসলমান ব্যক্তির যদি এক বছরের জন্য সাড়ে ৭ তোলা বা আন্তর্জাতিক হিসাব অনুযায়ী ৮৭.৪৫ গ্রাম সোনার মালিক থাকেন তাহলে সেই সোনার বাজার দামের মোট টাকার ১০০ ভাগের ২.৫ ভাগ জাকাত আদায় করা ফরজ হবে।

রৌপ্য বা রুপা= কোনও মুসলমান ব্যক্তি যদি এক বছরের জন্য সাড়ে ৫২ তোলা বা আন্তর্জাতিক হিসাব অনুযায়ী ৬১২.৪৫ গ্রাম রুপার মালি থাকেন তাহলে সেই রুপার বাজার দামের মোট টাকার  ১০০ ভাগের ২.৫ জাকাত আদায় করা ফরজ হবে।

আরও পড়ুনঃ কোরবানির দোয়া । কোরবানি সম্পর্কে হাদিস 

এভাবে উপরে উল্লেখিত ছয় ধরনের যেকোনো এক বা একাধিক ধরনের যদি নিসাব অর্থাৎ নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের মালিক কোনও মুসলমান হয় তাহলে তার জন্য ঐ সম্পদের উপর জাকাত আদায় করা ফরজ হবে।

মোট কথা, আপনার যদি উল্লেখিত নির্ধারিত সম্পদ বা এর বেশী পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে মোট সম্পদের ২.৫ ভাগ পরিমাণ অর্থ আপনাকে জাকাত দিতে হবে।

এটা  ইসলামিক ভাবে আপনার ফরজ করা হয়েছে।

জাকাত দেওয়ার সঠিক সময় কখন

প্রিয় পাঠক, জাকাত দেওয়ার সময় হিসাব করা হয় মূলত চন্দ্র মাসের হিসাব করে।

অর্থাৎ, আরবি মাসের প্রত্যেকটি মাস শুরু হয় চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে।

আপনার সম্পদ যে থেকে আপনার মালিকানাধীন আছে যেই থেকে পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত আপনার মালিকানায় থাকলে ঐ এক বছর পরে আপনি হিসাব করে জাকাত দিবেন।

জাকাত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট বা নির্ধারিত কোনও সময় বেধে দেওয়া হয়নি।

তবে বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত রোজার সময়ে জাকাত দিয়ে থাকে।

এর কারণ রমজান মাসে বেশী বেশী দান করা কিংবা বেশী বেশী সাহায্য করলে বেশী বেশী নেকি পাওয়া যায়।

এভাবে দেওয়ার জায়েজ আছে। যেমন ধরেন আপনার নিজের জাকাতের বছর রমজান মাসের তিন মাস আগে শেষ হয়েছে।

কিন্তু আপনি জাকাতের টাকা হিসাব করে রেখে দিলেন। রমজান মাস আসার পর জাকাত পাওয়ার জগ যারা তাদের দিয়ে দিলেন।

আরও পড়ুনঃ কুরবানির প্রশ্ন উত্তর । কুরবানির আলোচনা

তবে বিশুদ্ধ উত্তর হচ্ছে যে, জাকাত দেওয়ার সঠিক সময় বা নির্ধারিত সময়ের কোনও ধরাবাধা সময় নেই।

কারণ, নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক সবাই একসাথে হয় না।

তাই জাকাত আপনার নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর পর্যন্ত আপনার কাছে থাকলেই জাকাত দিতে পারবেন যেকোনো সময়ে।

তবে আপনি বেশী সাওয়াবের আশায় চাইলে জাকাতের টাকা হিসাব করে রেখে রমজান মাসে দিতে পারেন।

এতে কোনও পাপ বা কোনও সমস্যা নেই। আশা করছি বুঝতে পারছেন।

জাকাত সম্পর্কিত FAQS

কয় ভরি স্বর্ণ থাকলে জাকাত দেওয়া ফরজ হয়ে যায়?

কোন মুসলিম ব্যক্তি এক বছর সময় পর্যন্ত সাড়ে ৭ তোলা বা ৮৭.৪৫ গ্রাম বা এর বেশি স্বর্ণের মালিক হলে ঐ স্বর্ণের মোট দামের ১০০ ভাগের ২.৫ ভাগ দাম বা সমপরিমান টাকা জাকাত হিসেবে দিতে হয়।

কিসের কিসের উপর জাকাত দেওয়া ফরজ?

নিসাব পরিমাণ সম্পদের উপর জাকাত দেওয়া ফরজ। সাধারণত ৬ ধরনের বিষয়ে জাকাত হয়ে থাকে। তা হচ্ছেঃ

৬ প্রকার জাকাত হচ্ছে, স্বর্ণ বা সোনা, রৌপ্য বা রুপা, টাকা বা অর্থ, চতুষ্পদ জন্তু বা গবাদিপশু (যেমন গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি), ব্যবসায়িক সম্পদ এবং উৎপাদিত ফসল।

গরু ছাগলের জন্য জাকাত দেওয়া লাগে?

হ্যাঁ, চতুষ্পদ প্রানির জন্য জাকাত দিতে হয়। তবে, নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রানির মালিকানা থাকতে হবে।

যেমন, ৪০-১২০টি ছাগলের জন্য ১ টি ছাগল।

আবার, ৩০-৩৯টি গরুর জন্য একটি এক বছরের বাছুর জাকাত দিতে হবে।

এর সংখ্যা বেশী হিসেব অনুযায়ী আরও বেশী দিতে হবে।

তবে সাধারণত আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষুব সীমিত গরু ছাগল পালন করার কারণে এদেশে খুব একটা মানুষের গরু ছাগলের জাকাত ফরজ হয় না।

কৃষি জাতীয় ফসলের জাকাত দিতে হবে?

হ্যাঁ। আপনার ক্রিসি ফসল যেমন ধান হওয়া পর্যন্ত মোট পানি সেচের বেশিরভাগ যদি বৃষ্টির পানি থাকে তাহলে মোট ফসলের দশ জাকাত দিতে হবে।

এবং বৃষ্টির সেচ কম থাকলে এর থেকে কমিয়ে অরধেক পরিমাণ জাকাত দিতে হবে।

জাকাত সম্পর্কে সর্বশেষ

প্রিয় পাঠক, আমাদের আজকের পোষ্টে আমরা জাকাত কি জাকাত কাকে বলে, জাকাতের ধরণ কয়টি, জাকাত কি এবং জাকাত দেওয়ার নিয়ম, জাকাত দেওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জেনেছি।

আশা করছি আজকের পোস্ট থেকে জাকাত সম্পর্কে এই পোস্ট থেকে খুব ভালো একটি ধারণা পেয়েছেন, এবং জানতে পেরেছেন শতভাগ সঠিক তথ্য।

এরপরেও জাকাত কি এবং জাকাত সংক্রান্ত আর কোনও বিষয়ে জানার থাকলে কমেন্ট করে জানান।

এবং এই পোষ্টে দেওয়া লিংক থেকে জাকাত সম্পর্কিত আরও সকল পোস্ট পরে নিন।

জাকাত এবং ইসলাম সম্পর্কিত আরও সকল পোস্ট পড়তে ইসলাম ক্যাটাগরিতে ভিজিট করুন।

নিয়মিত আমাদের সকল পোস্ট পড়তে ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। সর্বশেষ আপডেট পেতে চোখ রাখুন অফিইসাল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।

3 thoughts on “জাকাত কি, কাকে বলে?  জাকাত কাদের উপর ফরজ? বিস্তারিত জেনে নিন”

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.