রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি । রোজা মাকরুহ হলে করণীয়

Last Updated on 9 months by Shaikh Mainul Islam

মুসলিমদের সবথেকে বড় ধর্মীয় ইবাদতের মাসের একটি আরবি রমজান মাসে রোজা রাখা। আর তাই আমাদের রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি তা জানা জরুরি।

প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোস্ট “রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি । রোজা মাক্রুহ হলে করনীয়” এ।

আজকের পোষ্টে আমরা, ইসলামের ৫ স্তম্ভের অন্যতম খুঁটি রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি, রোজা মাক্রুহ কি এবং রোজা মাক্রুহ হলে করনীয় কি এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানবো।

রোজা ভঙ্গের কারণ কি

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম। প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক মুসলমানের উপর আল্লাহ রোজাকে ফরজ করেছেন। রোজা রাখা যেহেতু ফরজ ইবাদত তাই আমাদেরকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে।

কিন্তু, আপনি কি জানেন অনেক কারণে রোজা ভেঙ্গে যায়? হ্যাঁ। আর তাই এই পোষ্টে আমরা জানবো রোজা ভঙ্গের কারণ কি কি যেটা করে আমরাদের রোজা ভেঙ্গে বা ছুটে না যায়।

আরও পড়ুনঃ রোজার সময়সূচি ২০২৪ । সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৪

রোজা ভঙ্গের কারণ জানার আগে আমাদের অবশ্যই জানা উচিত রোজা মূলত কি বা রোজায় কি করতে হয়। রোজা কি তা আপনারা সবাই ভালভাবেই জানেন। তবুও বলছি,

সাওম বা রোজা হচ্ছে আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনও প্রকার খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকাকেই সাওম বা রোজা বলা হয়।

আরও সহজভাবে বললে, ইসলামের ৫ টি মূল স্তম্ভ বা খুটির মধ্যে সাওম বা রোজা অন্যতম। রোজা আদায় করার অন্যতম কারণ হতে হবে আল্লাহকে খুশি করা।

আবার শুধু না খেয়ে থাকার নামই রোজা নয়। তাই রোজা রাখার আগে আপনাকে অবশ্যই রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জানতে হবে।

রোজা ভাঙ্গে মূলত খাদ্যনালী থেকে পেটে কোনকিছু প্রবেশ করলে, স্ত্রী সহ*বা*স করলে এবং অন্যান্য কারণে।

সকল প্রকার হালাল – হারাম, কাঁচা – পাকা সর্বপ্রকার খাদ্য অখাদ্য খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। এক কোথায় শরীরের অভ্যন্তরে কিছুই প্রবেশ করতে পারবে না।

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি

প্রকৃত অর্থ মুখ কিংবা শরীরের যেকোনো জায়গা থেকে শরীরের ভিতরে কিছু প্রবেশ করলেই রোজা ভেঙ্গে বা ছুটে যায়। নিচে উল্লেখিত কারণ সমূহের কারণে রোজা ছুটে বা ভেঙ্গে যায়ঃ

আরও পড়ুনঃ রমজানে সাহরি ইফতারিতে যা থাকা উচিত

  • কোনও প্রকার খাদ্য খেলে। বেখেয়ালে খেলে খেয়াল হওয়া মাত্র রোজা ভেঙ্গে গেছে চিন্তা করে আবার খেলে।
  • খাদ্য জাতীয় খাবার না কিন্তু তা খেলে এবং খাদ্যনালী থেকে পেটে প্রবেশ করলে।
  • মাদক দ্রব্য যেমন, বিড়ি, সিগারেট সহ ইত্যাদি খেলে।
  • স্ত্রী *হ*বাস করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
  • শরীর থেকে রক্ত বের হলে। -(রক্ত কাউকে দিলে বা নিলে রোজা ভাংবে না)।
  • অস্বাভাবিক কিছু খেয়ে ফেলা।যেমন, (পাথর, কাগজ, লাঠি, কাঁদা ইত্যাদি)।
  • নিজের থুতু মুখ থেকে বের করে আবার তা খেয়ে ফেললে।
  • দাত থেকে রক্ত বের হলে তা যদি থুতুর পরিমানের চেয়ে বেশী হয় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
  • রাত মনে করা সুবহে সাদিকের পরে (ফজরের পরে) খেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
  • রোজা থাকা অবস্থায় হস্ত* মৈ*থুন করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
  • রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় নাক, গলা ,কণ্ঠ নালি দিয়ে পানি প্রবেশ করলে।
  • মুখে পানি বা অন্য কোনও খাবার নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে। (যদি সুবহে সাদিক শেষ হয়ে যায়)।
  • বমি করে সেই বমি আবার গিলে ফেললে। হতে পারে খুব সামান্য পরিমাণ তবে তাও করা যাবে না।
  • কাউকে জোড় করে কিছু খাওয়ালে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। (এটা মস্ত বড় পাপ)।
  • বৃষ্টি কিংবা বরফের টুকরা মুখে নিলে এবং তা পেটের মধ্যে চলে গেলে।
  • মাগরিবের আজানের আগেই সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে ইফতারি করলে।
  • কাচা কোনও খাদ্য দ্রব্য যা রান্না বা তৈরি করে খেতে হয় এমন কিছু খেলে। (আটার ক্ষামী, কাচা ভুট্টা) ইত্যাদি।
  • রোজা ভঙ্গের আরও একটি কারণ হচ্ছে, নাক, কান, গলা দিয়ে কিছু (ঔষধ জাতীয় হতে পারে) শরীরের ভিতরে প্রবেশ করা।

আরও পড়ুনঃ রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া (উচ্চারণ সহ বাংলা অর্থ)

মোট কথা হচ্ছে, রোজা চলাকালিন শরীরের অভ্যন্তরে কোনও প্রকার কিছুই প্রবেশ করানো যাবে না। হোক তা খুব সামান্য পরিমাণ।

রোজা মাকরুহ কি ও কেন হয়

রোজা না ভাংলেই রোজা পূর্ণতা পায় না। অর্থাৎ এমন কিছু কাজ আছে যা রোজা রেখে এসব কাজ করলে রোজা একদম ভেঙ্গে যায় না তবে রোজার মাক্রুহ হয়।

সাওম বা রোজা মাকরুহ হওয়া দ্বারা বোঝায়, রোজার অপূর্ণতা। অর্থাৎ, আপনি রোজা রেখে এমন কিছু কাজ আছে যা করলে আপনার রোজা ভেঙ্গে যাবে না। কিন্তু রোজা মাকরুহ হয়ে যাবেহ।

আরও পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

মাকরু অর্থ না করাকে বোঝায়। অর্থাৎ রোজা রেখে এই কাজগুলি করা যাবে তবে ইসলাম করতে নিষেধ করেছে তাকে রোজার মাকরুহ বলা হয়।

এমন কিছু কাজ আছে রোজা রেখে এই কাজগুলো করলে আপনার রোজা মাকরুহর শামিল হবেহ। চলুন রোজা মাক্রুহর কারণ সমুহ জেনে নেওয়া যাকঃ

আরও পড়ুনঃ ঈদুল ফিতরে করণীয় বর্জনীয় সমূহ

  • সেহরি কিংবা ইফতারিতে হারাম কোনও খাবার খেলে রোজা মাকরু হয়।
  • কোনও কারণ ব্যতিত যদি কিছু চিবানো হয়।
  • না খেলেও খাদ্য কিংবা অখাদ্য জাতীয় কোনও কিছু মুখের মধ্যে রেখে দিলে।
  • রোজা চলাকালিন অজুর সময়ে গড়গড়া করে নাকের মধ্যে পানি নিলে।
  • মুখে তৈরি স্বাভাবিক লালাজমিয়ে রেখে গিলে ফেললে। এক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গেও যেতে পারে।
  • রোজা চলাকালিন সময়ে শরীর পাক পবিত্র না রেখে নাপাক করে রাখলেও রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে।
  • পেস্ট জাতীয় কোনকিছু দিয়ে রোজা চলাকালিন সময়ে দাত ব্রাশ করলে রোজা মাকরু হয়।
  • রোজা রেখে গু*ল ব্যবহার করলে রোজা মাকরুহ হয়।
  • রোজা রেখে অন্যকে নিয়ে সমালোচনা করলে রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে।
  •  রোজা চলাকালিন মিথ্যা কথা বা সাক্ষী দিলে রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে।
  • এমন কিছু দেখা বা শোনা যাতে যৌ*ন উত্তে*জনা হয় এতেও রোজা মাকরুহ হয়ে যায়।
  •  রোজা রেখে নাচ,গান, সিনেমা নিয়ে সময় কাতালেও রোজা মাকরুহ হয়ে যাবেহ।
  •  রোজাদার ব্যক্তি রান্নার খাবার টেস্ট করলে রোজা মাকরুহ এবং ভেঙ্গে যেতে পারে। (ক্ষেত্র বিশেষে মাক্রুহ হবে না)

এছারাও রোজার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন অনেক কারণে রোজা মাকরুহ হয়ে যেতে পারে। তাই এই দিকে প্রত্যেক রোজাদারের খেয়াল রেখে রোজা আদায় করতে হবেহ।

রোজা ভঙ্গ হওয়া ও মাকরুহ বিষয়ে সতর্কতা

একজন রোজাদার তখনই তার রোজাকে পূর্ণতা দিতে সক্ষম হবে যখন তিনি রোজা ভঙ্গের কারণ এবং রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

তাই একজন রোজাদারের অবশ্যই জানা উচিত যে, রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি, কি কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় বা ভেঙ্গে যায় বা ছুটে যায়।

আরও পড়ুনঃ ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম

রোজার পূর্ণ সাওয়াব বা পূর্ণতা দেওয়ার মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা। তবে আপনাকে অবশ্যই সব বিষয়ে জানতে এবং মানতে হবে।

আমাদের মনে রাখা উচিত যে, না জানা অন্যায়ের নয় কিন্তু জানার চেষ্টা না করা ভীষণ অন্যায়ের।

এজন্য আমাদের রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি এবং কি কি কারণে রোজা মাকরুহ হয় সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা জরুরি।

বিনা কারণে রোজা ভাঙ্গার শাস্তি

বিনা কারণে রোজা ভঙ্গের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। রোজা ফরজ ইবাদত।

আর রোজা না রাখলে কাজা রোজা এবং কাফফারা রোজা আদায় করলেও বিনা কারণে রোজা আদায় না করা ব্যক্তিদের শাস্তি সম্পর্কে হাদিসে  এসেছে,

আরও পড়ুনঃ শাওয়াল মাসের রোজা রাখার নিয়ম

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলছেন,

“আমি ঘুমাচ্ছিলাম। এসময়ে দেখলাম, দুই জন ব্যক্তি এসে আমার দুই হাত ধরে একটি পাহারের নিচে নিয়ে গিয়েছে। এবং আমাকে বলছে হে রাসুল আপনি এই পাহারের চুড়ায় উঠুন।

অতঃপর নবী ওই দুই ব্যক্তির সাহায্য নিয়ে পাহারের চুড়ায় উঠলেন এবং আর্তনাদের বিকট শব্দ শুনতে পেলেন।

এরপর নবিকে ওই দুই ব্যক্তি আরও সামনের দিকে নিয়ে গেলেন। যেখানে নবী দেখলেন একদল লোকদের পা উপরের দিক দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পায়ের পেশি চিড়ে চিড়ে রাখা হয়েছে। চিড়ে রাখা হয়েছে মুখ মণ্ডল সমূহ যেখান থেকে অঝর ধারায় রক্ত ঝরছে।

আরও পড়ুনঃ রোজা ভঙ্গের কারণ, মাকরুহ, যখন রাখা লাগবে না

এরপর নবীজি (সা:) জিজ্ঞেস করলেন, রা কারা। এরপর নবিকে ওই দুই ব্যক্তি বললেন,

“এরা সেইসব মানুষ যারা পৃথিবীতে রমজান মস পেয়েছে কিন্তু রোজা রাখেনি”।

একটি ফরজ রোজা ছেড়ে দেওয়ার বিনময়ে সারাজীবনও যদি রোজা রাখেন তাহলেও সেই পরিমাণ সাওয়াব পাবেন না।

তবে কারণ বশত রোজা না রাখতে পারলে পরে কাজা রোজা আদায় করে দিলে হবে।

রমজান সম্পর্কিত FAQS

স্বপ্নদোষ কি রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে ?

না। স্বপ্নদোষ এর কারণে রোজা ভাঙ্গে না। রোজা রেখে দিনে ঘুমানো নিষেধ। তবুও যদি কেউ ঘুমায় এবং সপ্ন দোষ হয় তাতেও রোজা ভাংবে না।

হাদিসে স্পষ্ট আছে যে, মহানবি (সাঃ) বলেছেন, সিঙ্গা, বমি এবং স্বপ্নদোষ এই তিন কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবীমন কিছু হলে নারী, পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে গোসল ফরজ হয়ে যাবেহ।

ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গের কাফফারা দিতে হয়?

হ্যাঁ। শুধু কাফফারাই না। ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গের কারণে কাজা রোজা এবং রোজার কাফফারা দুটি ই করতে হয়। 
কাফফারা তিনভাবে পালন করা যায়।

কাজা রোজার পাশাপাশি এর যেকোনো একভাবে আপনি কাফফারা আদায় করতে পারেন। কাফফারা আদায় করার তিনটি উপায় হচ্ছেঃ

১) একজন ক্রীতদাস মুক্ত করা।
২) ৬০ জন মিসকিনকে ২ বেলা ভরপুর খাওয়ানো।
৩) ধারাবাহিক ভাবে ৬০ টি রোজা পালন করা।

 এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের অন্নয়ান্ন পোস্টের মধ্যে কাজা রোজা এবং কাফফারা রোজা আদায়ের নিয়ম পোস্টটি পড়ুন।

রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি ?

রোজা ভঙ্গের অনেক কারণ থাকলেও মুলত রোজা ভঙ্গের কারণ ১৮ টি যা থেকে অন্য সবগুলোকে বোঝানো হয়।

আমি বিনা কারণে রোজা ভেঙ্গে ফেলছি।এখন করনীয় কি?

আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল। কাজা রোজা পালন করুন এবং রোজার কাফফারা দিন।

এবং আল্লাহর কাছে মোনাজাতে অনুতপ্ত হন এবং ক্ষমা চান।

আল্লাহকে বলেন আপনি আর কখনো বিনা কারণে ফরজ রোজা ছাড়বেন না। অবশ্যই আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল।

রোজা নিয়ে সর্বশেষ

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি, কি কি কারণে রোজা মাকরুহ হয়, ইচ্ছাকৃত ভাবে রোজা ভাঙ্গার শাস্তি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি।

আশা করছি এই পোস্ট থেকে রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ, রোজা মাক্রুহ হওয়ার কারণ সমূহ সহ এসব বিষয়ে বিস্তারিত জেনেছি।

আরও পড়ুনঃ এই দোয়া গুনাহ মাফ এর দোয়া যা পড়ে ঘুমালে জীবনের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়

রোজা এবং তারাবি সম্পর্কিত আমাদের সকল পোস্ট পড়তেIslamic info Category ভিজিট করুন।

আমাদের সকল পোস্ট পড়তে নিয়মিত  Dainik kantha করুন।

সর্বশেষ আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।

23 thoughts on “রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি । রোজা মাকরুহ হলে করণীয়”

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.