তারাবি নামাজের নিয়ত । তারাবির নামাজের নিয়ম

পবিত্র রমজান মাসে দীর্ঘ একমাস রোজার পাশাপাশি মুসলমানদের তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়। আর এসময়ে তারাবি নামাজের নিয়ত ও নিয়ম জানা জরুরি।

প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোস্ট “তারাবি নামাজের নিয়ত । তারাবি নামাজের নিয়ম সহ বিস্তারিত” এ।

আজকের পোষ্টে আমরা তারাবি নামাজ কি, তারাবি নামাজ পড়ার সময়, তারাবি নামাজের নিয়ত, তারাবি নামাজের নিয়ম, তারাবি নামাজের মোনাজাত ও ফজিলত সহ এবিষয়ে বিস্তারিত।

তারাবি নামাজ

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সারাদিন রোজা রাখার পরে এশার ফরজ এবং সুন্নত নামাজের শেষে ২ রাকাত করে ১০ সালামের মাধ্যমে ২০ রাকাত (মতান্তরে ৮/১২ রাকাত)  সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজ আদায় করতে হয়।

এই নামাজকে তারাবি নামাজ বলা হয়। তারাবি নামাজ পড়ার সঠিক সময় হচ্ছে রমজান মাসের প্রত্যেক এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর

রমজানের চাঁদ দেখা গেলেই ওইদিন এশার নামাজের পর থেকেই তারাবি নামাজ আদায় করতে হয়। এবং ফিতরের চাঁদ দেখলে ওইদিন থেকে তারাবি নামাজ পড়া বন্ধ করতে হয়।

আরও পড়ুনঃ  রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি

তারাবি নামাজের ফজিলত অনেক। নজি মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,

“রমজান মাস জুড়ে যে ব্যক্তি রোজা রাখলো এবং তারাবি আদায় করলো ওই ব্যক্তি ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতক শিশুর মতো নিস্পাপ হয়ে যায়”।

“আল্লাহ রোজা ও তারাবি আদায়কারীকে এই আমলের বিনিময়ে পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেন”। (তথ্যঃ নাসায়ী – ২৩৯ নং থেকে)

তারাবি প্রসঙ্গে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হয়েছে,

হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “কোনও ব্যক্তি যদি ইমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করেন তাহলে ওই ব্যক্তিকে আল্লাহ সদ্য নবজাতকের মতো নিস্পাপ করে দেন। (তথ্যঃ বুখারি এর ৩৬ নং হাদিস)

সবকিছু মিলিয়ে তারাবির নামাজের অনেক ফজিলত আছে যা আপনাকে দুনিয়া এবং আখিরাতে অনেক ফায়দা দিবে। 

একা একা যদি তারাবি নামাজ আদায় করতে হয় তাহলে আপনাকে স্বাভাবিক ভাবে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের জন্য যা জানা দরকার সেসব বিষয়ে জানতে হবে।

আর তারাবির নামাজ যদি আপনি ইমামের পিছনে পড়েন তাহলে নিয়ত করলেই হয়।

তবে নিয়ত হচ্ছে, আপনি আমাজের উদ্দেশ্যে জায়নামাজে দাঁড়ালেই মূলত নিয়ত করা হয়ে যায়। তবুও নামাজ আদায়ের জন্য নিয়ত করলে ভালো।

তারাবি নামাজের নিয়ত

আপনি তারাবি নামাজ আদায় করবেন বলে নামাজের জায়নামাজে দাঁড়িয়েছেন কিংবা মসজিদের উদ্দেশ্যে রনা দিয়েছেন।

এতেই আপনার তারাবির নামাজের নিয়ত আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়।

তবে তারাবি নামাজের নিয়ত রয়েছে। আপনি যদি তারাবি নামাজের আরবি নিয়ত মুখস্ত রাখতে পারেন তাহলে আরবিতে পড়বেন।

আর আরবিতে না পারলে বা মনে না রাখতে পারলে বাংলাতেও তারাবির নামাজের নিয়ত করতে পারবেন। তাতে কোনও সমস্যা নেই।

আরও পড়ুনঃ  রহমত মাগফিরাত নাজাত এর দোয়া ও করনীয়

এবার তাহলে চলুন, তারাবি নামাজের নিয়ত আরবিতে, আরবি উচ্চারণ এবং বাংলা অর্থ অর্থাৎ বাংলায় তারাবির নামাজের নিয়ত দেখে নেওয়া যাক।

আরবিতে তারাবির নামাজেত নিয়তঃ نويت ان اصلى لله تعالى- ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر..

আরবি তারাবি নামাজের নিয়তের বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াই-তু আন উসাল্লিয়া ল্লিলাহি তাআ’লা- রাকাআ’তাই সালাতিত্ত তারাবিহ সুন্নাতু রসুল্লিলাহি তাআ’লা, (ইক্বতাদাইতু বিহাজাল ইমাম)  মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যিহাতিল কা-বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।

তারাবির নামাজের নিয়ত বাংলায়ঃ আমি কেবলামুখি হয়ে দু’রাকাত তারা-বির সুন্নতে মু-য়াক্কাদা নামাজ (ইমামের সাথে) আদায় করছি, আল্লাহু আকবার।

বিঃদ্রঃ আপনি যদি ইমামের পিছনে জামাতে তারাবি নামাজ আদায় করেন তাহলে ব্রাকেটের মধ্যে উল্লেখিত অংশটুকু সহ তারাবির নামাজের নিয়ত করবেন।

আরও পড়ুনঃ রোজার সময়সূচি ২০২৪

মূল কথা হচ্ছেঃ আপনি তারাবি নামাজ পড়বেন সেই উদ্দেশ্য করে মসজিদে গেলেন। কিংবা তারাবি নামাজের উদ্দেশ্যে জায়নামাজে দাঁড়িয়েছেন।

তখনই আপনার তারাবির নামাজের নিয়ত আল্লাহর দরবারে পৌঁছে গেছে। তাই, তারাবির নামাজের নিয়ত করা নিয়ে বেশি চিন্তা বা হায়বাত করার কিছু নেই।

থান্ডা মাথায় আপনাকে শুধু নিয়ম অনুযায়ী তারাবির নামাজ আদায় করতে হবে। এছাড়া তারাবি নামাজের আলাদা কোনও নিয়ম নেই।

তারাবির নামাজের নিয়ম

নিয়ত করে বা ইমামের পিছনে নিয়ত করে আপনি অন্যান্য নামাজের মতো সূরা ফাতিহার সাথে অন্য দুইটি সূরা যোগ করে আখেরি বৈঠকে আপনাকে অন্য নামাজের মতো তাশাহুদ, দুরুদে ইব্রাহিম এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে।

এছাড়াও আপনি অন্যান্য দোয়া পড়তে পারেন যা আল্লাহর নবী এবং সাহাবীরা পরতেন। দোয়া মাসুরা পরে প্রথমে ডান দিকে এবং বাম দিকে সালাম ফিরাতে হবে।

আরও পড়ুনঃ সূরা তারাবি পড়ার নিয়ম

এভাবে দুই রাকাত দুই রাকাত করে মোট ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করতে হবেহ।

প্রত্যেক চার রাকাত তারাবির নামাজ পড় পড় একটু বিশ্রাম নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এই বিশ্রামের সময় যেকোনো দোয়া করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ শুক্রবারে আসরের পরের আমল

তবে সব জায়গায় প্রতি চার রাকাত নামাজ শেষে বিশ্রামের সময়ে একটি দোয়া অধিক প্রচলন আছে। একে তারাবির নামাজের দোয়া বলা হয়। তারাবির নামাজের দোয়াটি হচ্ছেঃ

আরবিতে তারাবিহ নামাজের ৪ রাকাতের পর দোয়াঃ 

سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي  الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَ الْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ.

তারাবির নামাজের দোয়ার বাংলা সুবহানাজিল মুল-কি ওয়াল মালাকুতি, সুব-হানাজিল ইয্যাতি ওয়াল আঝ-মাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রি-য়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি।

সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি-লা ইয়ানামু ওয়ালাইয়ামুত আবা-দান আবাদা সুব্বুহুন-কুদ্দুসুন-রব্বুনা ওয়ারাব্বুল মালায়িকাতি ওয়াররুহ।

আরও পড়ুনঃ রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া (উচ্চারণ সহ বাংলা অর্থ)

অর্থ : আল্লাহ পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্ত্বের মালিক। তিনি পবিত্রময় সম্মান মহত্ত্ব ও প্রতিপত্তিশালী সত্তা। ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাপশালী তিনি পবিত্রময় ও রাজাধিরাজ যিনি চিরঞ্জীব, কখনো ঘুমায় না এবং চির মৃত্যুহীন সত্তা।

তিনি পবিত্রময় ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক, ফেরেশতাকুল এবং জিবরাইলের (আ.) প্রতিপালক।

প্রত্যেক চার রাকাত নামাজ শেষে আপনি যেকোনো দোয়া বা ইস্তেগফার করতে পারেন। আপনাকে এই দোয়াই করতে হবে এমন কোনও বাধ্য বাধকতা নেই।

তারাবি নামাজের মোনাজাত

প্রিয় পাঠক, আপনি যদি একা একা তারাবির নামাজ পড়েন এবঅং আরবিতে তারাবির নামাজের মোনাজাত করতে না পারেন তাতে কোনও পাপ নেই।

আপনি বরং বাংলায় অন্যান্য নামাজের মতো দোয়া পরে মোনাজাত করতে পারেন। তবে তারাবির জন্য অনেক প্রচলিত একটি মোনাজাত আছে যা তারাবির নামাজের মোনাজাত হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুনঃ রোজা খোলার নিয়ত

আরবিতে তারাবি নামাজের মোনাজাতঃ اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ  يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ  يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا -مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ..

আরবি তারাবির নামাজের বাংলা উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা ইন্না নাস আলু-কাল জান্নাতা ওয়া নাউজু-বিকা মিনান নার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান-নার। বিরহ-মাতিকা ইয়া আঝিঝুইয়া গাফফার, ইয়াকারিমু ইয়া সাত্তার – ইয়া রাহিমু – ইয়া জব্বার – ইয়া খলিকু ইয়া বার্রুক। আল্লাহুম্মা আঝিরনি মিনান – নার। ইয়া মুঝিরু – ইয়া মুঝিরু – ইয়া মুঝির। বিরহমাতিকা ইয়া আর-হামার রহিমিন”।

প্রিয় পাঠক, তারাবির মোনাজাত এর খেত্রেও একই কথা যে, আপনি যদি এই দোয়াটি না পারেন অন্য যেকোনো দোয়া পড়ে মোনাজাত করতে পারবেন। এতে কোনও সমস্যা হবে না।

তারাবি নামাজ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কথা

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে তারাবি নামাজের নিয়ত এবং তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনেছেন।

তারাবির নামাজ হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আপনি পুরো রমজান মাস জুড়ে প্রত্যেক দিন এশার পরে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়তে হয়।

অনেকে জানতে চান যে, তারাবির নামাজ ৮ রাকাত নাকি ২০ রাকাত। অনেকের কাছে এই বিষয়ে বিভিন্ন দলিল রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ

তবে সঠিক উত্তর হচ্ছে এই যে,  নবিদের আমলে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ এবং ৩ রাকাত বেতের মোট ২৩ রাকাত নামাজ আদায় করা হতো।

তবে মুহাম্মদ (সা:) ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়তেন এমন কোনও তথ্য হাদিস থেকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু তারাবির নামাজ হচ্ছে নফল ইবাদত।

আরও পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ম

তাই আপনি ৮ রাকাত তথবা ২০ রাকাত উভয় ই পড়তে পারেন। এতে কোনও বাধা নিষেধ কিংবা ধরাবাধা নিয়ম নাই।

অনেকে আবার জানতে চান যে, তারাবির নামাজ সরবনিম্ম কত রাকাত পড়া যায় ?

সঠিক উত্তর হচ্ছে যে, তারাবির নামাজ আপনি ৮ রাকাত কিংবা ১২ রাকাত কিংবা ২০ রাকাত আদায় করতে পারেন। কম পড়লে কম সাওয়াব বেশী পড়লে বেশী সাওয়াব। এছাড়া অন্য কিছুই না।

তারাবি নামাজের নিয়ত সম্পর্কিত FAQS

তারাবির নামাজ সর্বনিম্ন কত রাকাত পড়া যায় ?

তারাবির নামাজ সর্বনিম্ন ৮ রাকাত পড়া যায়। তবে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়া উত্তম।

তারাবি পড়া কি ফরজ?

না, তারাবি পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।

তারাবির নামাজ কত রাকাত ?

তারাবির নামাজ ২০ রাকাত। মতান্তরে ৮ অথবা ১২ রাকাত ও কেউ কেউ আদায় করে থাকে।

তারাবি না পড়লে কি রোজা হবে না?

বিষয়টা একদমই এরকম না। তারাবি না পরলেও রোজা হবে।

তবে রোজার সাথে তারাবির সম্পর্ক আছে। রোজায় এক বিন্দু পরিমাণ ত্রুটি হলে তা তারাবির মাধ্যমে সংশোধন করা যায়। এবং তারাবি পড়া অনেক ফায়দার। তারাবির নামাজ পড়া উত্তম।

রোজার সময়ে তারাবি পড়া লাগে না কি কি কারনে?

শারীরিক ভাবে অক্ষম এবং মেয়েদের ব্যক্তিগত সমস্যার সময়ে তারাবি না পরলেও সমস্যা নাই।
তবে বসে হলেও তারাবির নামাজ পড়া মুস্তাহাব।

তারাবির নামাজ কখন পড়তে হয়?

রমজান মাসের প্রত্যেক এশার ফরজ এবং সুন্নত নামাজের পরে দুই রাকাত করে দশ সালামের মাধ্যমে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়।

তারাবি নামাজ সম্পর্কিত সর্বশেষ

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা তারাবি নামাজের নিয়ত, তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন এবং তারাবি নামাজ সম্পর্কিত সব জেনেছি।

আরও পড়ুনঃ ঈদুল ফিতরে করণীয় বর্জনীয় সমূহ

আশা কছি এই পোস্ট থেকেই আপনি তারাবি নামাজের নিয়ত এবং তারাবি নামাজ সম্পর্কিত বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

তারাবি, রোজা এবং ইসলাম সম্পর্কিত আমাদের সকল পোস্ট পড়তে Islamic info Category ভিজিট করুন।

নিয়মিত আমাদের সকল পোস্ট পড়তে Dainik kantha ভিজিট করুন।

সর্বশেষ আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।