Last Updated on 10 months by Shaikh Mainul Islam
প্রিয় পাঠক, স্বাগত শবে বরাত সম্পর্কিত আরও একটি পোষ্টে। আসন্ন শবে বরাতকে সামনে রেখে আপনারা অনেকেই শবে বরাত সম্পর্কে নানান বিষয়ে জানতে চান। তাই আজকে আমরা শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ এবং শবে বরাত পালনের সকল নিয়ম জানবো।
শবে বরাত অর্থ হচ্ছে মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের গুনাহ মাফের এবং দোয়া কবুলের জন্য বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে থাকেন। শবে বরাতকে লাইলাতুল বরাতও বলা হয়।
আজকের পোষ্টে আমরা জানবো, শবে বরাত কি কাকে বলে, শবে বরাত কেন পালন করা হয়, শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ কি না, শবে বরাত পালন করা বিদআত কখন হবে এবং শবে বরাত সম্পর্কিত সকল বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো।
শবে বরাত কাকে বলে । শবে বরাত কি
আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতকে বলা হয় সবে বরাত। অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্য রাতকে (১৪ এবং ১৫ তারিখের সম্মিলিত রাত) শবে বরাত বলে।
শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। একে অনেকে ভাগ্য পরিবর্তনের রাতও বলে থাকেন। কারণ এ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের করা দোয়া বিশেষ ভাবে কবুল করে থাকেন।
এমনটা এসেছে যে, আল্লাহ পৃথিবীর আসমানে এসে তার বান্দাদের বলে, “তোমাদের কার কি দরকার, তোমরা ক্ষমা চাও, তোমরা আমার কাছে সাহায্য চাও”।
আরও পড়ুনঃ শবে বরাতের নামাজের নিয়ম । শবে বরাতের ফজিলত । শবে বরাতের আমল
মূলত আরবি রমজান মাসের পূর্ববর্তী মাস হচ্ছে শাবান মাস। শাবান মাসের মধ্য রাতে হয় শবে বরাত। শবে বরাতের ঠিক ১৫ দিন পড় শুরু হয় রোজা।
শবে বরাত কেন পালন করা হয় ?
শবে বরাত হচ্ছে আল্লাহর কাছে তার বান্দাদের ক্ষমা চাওয়ার রজনি বা রাত। আল্লাহর কাছে বেশী বেশী সাহায্য চাওয়ার রাত। এই রাতে আল্লাহ পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন। এবং বান্দাদের বলেন তোমরা যা চাবে তাই পাবে।
এজন্য এই রাতকে ভাগ্য পরিবর্তনের রাতও বলা হয়।
আল্লাহ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, এই রাতে আল্লাহ দুই ধরনের মানুষ ব্যতিত সবার নেক দোয়া কবুল করে নেন।
শবে বরাতের ১৫ দিন পরে রোজা শুরু হয়। একমাস ব্যাপী এই ফরজ রোজা চলে।
তাই শবে বরাতের রাতে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে হয় এই বলে যে,
“হে আল্লাহ সামনে রমজান মাস। গত বছরের মতো এবছরেও সুস্থ থেকে ৩০ টি রোজা আদায় করার শক্তি দাও। রহমত করো।
হে আল্লাহ, তুমি আমাদের হালাল রুজির ব্যবস্থা করে দাও। আমাদের চোখকে সংযত রাখো”।
আরও পড়ুনঃ শবে বরাতের রোজা কয়টি । শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত
এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারার কথা যে, শবে বরাত কেন পালন করা হয়।
শবে বরাতের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবনের সকল গুনাহ মাফ চাওয়ার উদ্দেশ্যে আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া।
ভবিষ্যৎ এ সবকিছুর জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়া।
যেহেতু শবে বরাত গুনাহ মাফ এবং ভবিষ্যৎ জীবনের সবকিছু সুন্দর করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া, করুণা এবং সাহায্য চাওয়ার জন্য অন্যতম একটি রাত সেহেতু বলা যায় যে, শবে বরাত পালন করা হয় আল্লাহর কাছাকাছি আশার জন্য, আল্লাহর কাছে সকল মনের কথা বলার জন্য।
কারণ আল্লাহ ই একমাত্র মহান সত্ত্বা যিনি চাওয়ার সাথে সাথেই সব হয়ে যায়।
শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ কি না । শবে বরাত পালন করা বিদআত ?
ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি যে , শবে বরাত পালন করা হয় আল্লাহর কাছে ক্ষমা, করুণা, সাহায্য চাওয়া এবং আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহকে খুশি করার জন্য।
কিন্তু যখন শবে বরাত পালনের কর্মকাণ্ড আল্লাহর ইবাদতের বাহিরে চলে যায়, তখন তা অবশ্যই না জায়েজ কিংবা বিদআত হয়ে যাবে।
ইসলাম এবং নবীজি মুহাম্মদ (সা:) এর আদেশ অনুযায়ী শাবানের রাত বা শবে বরাত পালন করা জায়েজ।
তবে আমাদের দেশে শবে বরাত উপলক্ষে অনেক খাওয়া দাওয়া বাজি পটকা এগুলো শুধু শবে বরাতেই নয় বরং কখনোই জায়েজ নাই।
শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ কি না তা জানতে হলে আমাদের নবীজি মুহাম্মদ (সাঃ) এবং কোরআন হাদিস সম্পর্কে জানতে হবে।
শবে বরাত উপলক্ষে নবীজি মুহাম্মদ (সাঃ) কি বলছেন কিংবা শবে বরাতে নবীজি কি করতেন এবং আমাদের কি করতে বলছেন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ইসলামে শবে বরাত পালনের নিয়ম । শবে বরাত সম্পর্কে নবীজি যা করতে বলছেন
আরও সহজ ভাবে বললে, শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ কি না যদি সঠিক উত্তর বুঝতে চান তাহলে আগে বুঝতে হবে যে,
শবে বরাতের রাতে নবীজি তার ঘরে বসে নামাজ আদায় করছিলেন।
তখন তিনি এত দীর্ঘ সময়ের জন্য সিজদারত রইলেন যে হজরত আয়েশা মনে করলেন নবীজি বধ হয় ইন্তেকাল করেছেন।
এমতাবস্থায় হজরত আয়েশা নবিজির পায়ের একটি আঙ্গুল ধরে টান দিলেন। এরপর নবীজি সিজদা শেষ করে হজরত আয়েশাকে বললেন,
“হে আয়েশা, এই রাত শাবানের রাত। এই বিশেষ রাতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি অধিক বেশী মনোযোগ দেন।
ক্ষমা চাওয়া ব্যক্তিদের ক্ষমা করে দেন। তবে হুধু মাত্র হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের আগের অবস্থাতেই রেখে দেন”।
-(শুয়াবুল ইমা, খণ্ড ৩- পৃষ্ঠাঃ ৩৮২)
আরও পড়ুনঃ শবে বরাতের রোজা কয়টি । শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত
হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আমাদের শেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) শাবানের রাতে, অর্থাৎ শবে বরাতের রাতে মদিনার জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের উদ্দেশ্যে দোয়া এবং ইস্তেগফার করতেন।
এছাড়াও নবীজি বলেছেন,
“শবে বরাতের রাতে এমন কোনও ব্যক্তিও যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান যার গুনাহের পরিমাণ ভেড়া- বক্রির পশমের থেকেও পরিমানে বেশী তবুও আল্লাহ তার ওই বান্দাকে ক্ষমা করে দেন”।
সোর্সঃ তিরমিজি ৭৩৯ থেকে।
হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার উম্মতদের উদ্দেশ্যে বলে গিয়েছেন যে,
“তোমরা শাবান মাসের মধ্য দিবস অর্থাৎ শবে বরাতের রাতে নফল ইবাদত করো। এবং ওই দিন নফল রোজা রাখোঃ।
তিনি আরও বলেন, শবে বরাত বা শাবানের দিন সূর্যাস্তের পড় আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন।
এবং তার বান্দাদের উদ্দেশ্য করে বলেনঃ “এমন কেউ আছে যে আমার কাছে ক্ষমা প্রাত্থনা করবে?
আমি তাদের ক্ষমা করবো। এমন কেউ আছো যে বিপদ্গ্রস্থ? তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবো। এমন কেউ আছে ঋণ গ্রস্থ? আমি তাকে ঋণ মুক্ত করবো”।
ঠিক এইভাবে আল্লাহ ভোর রাত পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তার কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য বলেন।
– (তথ্য সোর্সঃ ইবনে মাজাহ এর ১৩৮৪ থেকে)।
শবে বরাতে কি কি করা যাবে না?
শবে বরাত বা শাবানের রাতে করা যাবে না যা তা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে নাহ। বুঝতে পারছেন নাহ? চলুন বোঝার চেষ্টা করা যাক।
আমাদের দেশে শবে বরাতকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে এমনকি এলাকায় এলাকায় দলবদ্ধ হয়ে রান্না-বান্না করে থাকে।
এমনকি এই রাতে আতসবাজি, পটকা, বোমা ফাটিয়ে শবে বরাত উদযাপন করে।
ইসলাম পরিপন্থী একটা কাজ যদি শবে বরাতে থাকে তার হচ্ছে এই কাজগুলো করা।
এদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে কঠোর শাস্তি।
আরও পড়ুনঃ রোজা ভঙ্গের কারণ, মাকরুহ, যখন রাখা লাগবে না
এছাড়া মসজিদে মসজিদে সব মানুষ জড়ো হয়ে জিকিরের নামে শুধু ইল্লাহ ইল্ললাহ করেন। এগুলো সম্পূর্ণ ইসলাম পরিপন্থী কাজ
শবে বরাতে শুধু নফল ইবাদাত করতে হবে। নামাজের মাদ্ধমে আল্লাহর সবথেকে কাছে যেতে হবে।
ক্ষমা চাইতে হবে। আল্লাহর করুণা কামনা করতে হবে।
এর বাহিরে এই রাতে শবে বরাত উপলক্ষে যা করেন সবই না জায়েজ, সবই বিদআত। আশা করছি বুঝাতে পেরেছিহ।
শবে বরাত সম্পর্কিত আরও কিছু কথা
আজকের পোস্টটি যদি প্রথম থেকে এই পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ নাকি জায়েজ না।
মূলত নবীজি যেভাবে শবে বরাত পালন করতেন এবং আমাদের যেভাবে পালন করতে বলছেন সেভাবে পালন করা জায়েজ।
এবং সেভাবে পালন করলে তা বিদআত হবে নাহ।
শবে বরাতের বিদআত হচ্ছেঃ শবে বরাতের উদ্দেশ্যে রুটি, গোশ ইত্যাদি খাওয়া।
এবং পটকা, বাজি, আতসবাজি ফুটানো হচ্ছে শবে বরাতের বিদআত কাজ সমুহের অন্তর্গত।
আরও পড়ুনঃ শবে বরাত ২০২৩ কত তারিখে জেনে নিন । শবে বরাত পালনের নিয়ম
তাই এই কাজ গুলো আমাদের সম্পূর্ণ ভাবে পরিহার করে শুধু মাত্র আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
আল্লাহর কাছে তার করুণা, হালাল রিজিক চাইতে হবেহ। তবে শবে বরাত হবে আমাদের জন্য লাভ জনক এবং কল্যাণকর।
শবে বরাত সম্পর্কিত FAQS
হ্যাঁ , নবীজি যেভাবে শবে বরাত পালন করতেন, এবং আমাদের যেভাবে পালন করতে বলছেন ঠিক সেভাবে শবে বরাত পালন করা জায়েজ এবং ইসলাম দ্বারা অনুমোদিত।
শবে বরাত ২০২৩ হবে মার্চ মাসের ৭ তারিখ রাতে। অর্থাৎ ৭ এবং ৮ তারিখ মিলিত যে রাত সেই রাতে শবে বরাত ২০২৩ হবে।
শবে বরাত পালন করা নিয়ে সর্বশেষ
প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ এবং শবে বরাত পালন করা বিদআত কি না সে সম্পর্কে জেনেছি।
আশ করছি এত বুঝাতে পারছি যে, কিভাবে শবে বরাত পালন করা জায়েজ।
এবং কি কি কাজ শবে বরাতে করা বিদআত যা আমাদের দেশে প্রচলিত আছে।
শবে বরাতের নামাজে নিয়ম, শবে বরাতের রোজা কয়টি এবং নিয়ম কি এই সহ শবে বরাত সম্পর্কে আমাদের অন্যান্য পোস্ট পড়তে ইসলাম ক্যাটাগরি ভিজিট করুন।
ইসলামকে সঠিক ভাবে জানুন এবং মানার চেষ্টা করুন। ইসলাম পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ এবং শান্তির ধর্ম। ইসলাম শুধু একটি ধর্ম -ই নয়।
বরং ইসলাম একজন মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
ইসলাম সম্পর্কিত শতভাগ সঠিক তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের ইসলামিক রিলেটেড অন্যান্য পোস্ট পড়ুন।
নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। এবং আমাদের সর্বশেষ আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Daiinikkantha এ।
4 thoughts on “শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ ? শবে বরাত পালনের নিয়ম জেনে নিন”