রোজার ঈদের নামাজের নিয়ম । ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম

প্রিয় পাঠক, স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের আজকের পোস্ট “ রোজার ঈদের নামাজের নিয়ম অর্থাৎ ইদুল ফিতরের নামাজ সম্পর্কিত বিস্তারিত ” পোষ্টে। দীর্ঘ এক মাস মুসলিমদের অন্যতম ফরজ ইবাদত তমজান শেষ হয় ইদুল ফিতরের মধ্য দিয়ে।

রোজার ঈদ বা ইদুল ফিতরের দিন ২ রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে হয়। যাকে ইদের নামাজ বলে। ইদের নামাজ অবশ্যই জামাতে পড়তে হয়। তবে ইদের নামাজ ছুটে গেলে বা কোনও কারণে পড়তে না পারলে কাজা পড়তে হয় না।

আজকের পোষ্টে আমরা জানবো রোজার ইদের নামাজের নিয়ম অর্থাৎ ইদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত, নিয়ম দোয়া, জানবো ঈদুল ফিতরের নামাজ কয় তাকবির, এবং ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত ও নিয়ম সংক্রান্ত ভিস্তারিত। চলুন একেক করে রোজার ঈদের নামাজ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম

প্রিয় পাঠক, রোজার ঈদ অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের নামাজের কিছু নিয়ম আছে। কারণ, সব নামাজের মধ্যে বিশেষ বিশেষ নামাজের মধ্যে রোজার ঈদের নামাজ একটি।

শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে রমজান মাসের শেষ হয় এবং ১লা শাবান ঈদুল ফিতর হয়। ঈদুল ফিতরের দিন সকালে এলাকার সবাই মিলে মসজিদ বা ইদগাহে অথবা একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেকোনো একজনের ইমামতিতে পড়া হয়। অন্য নামাজের মতো ঈদের নামাজ একা পড়ার কোনও বিধান নেই।

অন্য স্বাভাবিক দুই রাকাত নামাজের মতো হলেও রোজার ঈদের নামাজের নিয়ম  একটু ভিন্ন। যেমন অতিরিক্ত ৬ তাকবির (আল্লাহু আকবর বলে কানে হাট উঠানো) দিতে হয়।

রোজার ঈদ অর্থাৎ ঈদুল ফিতরে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজ ওয়াজিব। আর ওয়াজিব ইবাদত ইচ্ছা করে ছেড়ে দিলে তা কবিরা গুনাহ হিসেবে হিসাব করা হয়। তাই বলা যায় যে, ঈদের নামাজ না পড়লে ঐ ব্যক্তির কবিরা গুনাহ হবে।

এবার চলুন সঠিক নিয়মে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম জেনে নেওয়া যাক। স৬ তাকবিরে সঠিক নিয়মে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।

রমজান যেদিন শেষ তার পরের দিন ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ হয়ে থাকে। ঈদ

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম । রোজার ঈদের নামাজ

প্রিয় পাঠক, ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম নিচে ক্রম অনুসারে দিচ্ছি। তাহলে আপনাদের বুঝতে এবং আয়ত্ত করতে সহজ হবে। নিচের ক্রমিঙ্ক নামাবার অনুসারে ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম জেনে নিন।

  1. ইমামের পিছনে দাড়িয়ে ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত করা (এটি মুখে উচ্চারণ করা লাগে না)।
  2. এরপর ইমামের সাথে তাকবীর (আল্লাহু আকবর) বলে নাভিতে হাত বাধতে হবে।
  3. ছানা পড়তে হবে। (সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা … নিচের দিকে উল্লেখিত)।
  4. এরপর তিন বার তাকবীর দিয়ে দুই বার হাত ছেড়ে দিতে হবে। প্রত্তেকবার তাকবিরের মধ্যে কয়েক সেকেন্ড সময় নিতে হবে।এবং তৃতীয় বার হাত বাধতে হবে।
  5. এবার আউজুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পড়তে হবে।
  6. এরপর ইমাম সূরা ফাতিহা এবং ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা পড়বে। (মুসল্লিরা মন দিয়ে ইমামের তিলাওয়াত শুনবে)।
  7. এরপর রুকু সিজদাহ করতে হবে। এবার দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে হাত বাধতে হবে।
  8. দ্বিতীয় রাকাতে দাড়িয়ে সূরা ফাতিহা এবং এর সাথে অন্য একটি সূরা যোগ করতে হবে।
  9. এবার তিনটি তাকবীর (আল্লাহু আকবর বলে কান অব্ধি হাত উঠানো) দিতে হবে।
  10. প্রত্যেক বার হাত উঠিয়ে ছেড়ে দিতে হবে। এবং ৪র্থ তাকবিরে হাত না বেধে রুকুতে যেতে হবে।
  11. রুকু থেকে অন্য স্বাভাবিক নামাজের মতো সিজদাহ দিতে হবে। এবং আখেরি বৈঠকে বসতে হবে
  12. আখেরি বৈঠকে অন্যান্য নামাজের মতো তাশাহুদ, দুরুদ এবং মাসুরা পড়তে হবে।
  13. এরপর ডানে এবং বামে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে রোজার ঈদের নামাজ তথা ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষ করতে হবে।

মনে রাখতে হবে যে, অন্য সোম নামাজের মতো এই রোজার ঈদের নামাজেও তাড়াহুড়ো করা যাবে না। এবং ইমাম যেসব সূরা ক্রাত উচ্চস্বরে পড়বেন তখন মুসল্লিরা তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। আর যেসব দোয়াগুলো ইমাম মনে মনে পড়বেন তা মুসল্লিরাও মনে মনে পড়বে।

আশা করছি, রোজার ঈদের নামাজের নিয়ম বুঝতে পারছেন। বুঝতে সমস্যা হলে নিরব ভাবে উপরের সিরিয়াল অনুযায়ী লেখাগুলো কয়েক বার পড়েন আপনার বুঝ একদম সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর দেওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, পোষ্টের উপরের অংশে ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম এর মধ্যে কখন কয়টি কিভাবে তাকবীর দিতে হবে তা উল্লেখিত আছে।তারপরেও পোষ্টের এই অংশে শুধু মাত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর (সুভানা কা আল্লাহুম্মা ওবিহামদিকা অতাবারাকাস্মুক…) এই দোয়াটি পড়তে হবে। এরপর পর পর দুইটি তাকবীর দিয়ে হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে আবার সজা করে ছেড়ে দিবেন।

এভাবে দুই বার তাকবীর দেওয়ার শেষে তৃতীয় বার তাকবীর দিয়ে নিয়ম মতো নাভিতে হাত বাধবেন। এরপর উপরের নিয়ম অনুযায়ী প্রথম রাকাত শেষ করে নামাজের দ্বিতীয় রাকাত শুরু করবেন।

দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে ইমামের পড়া শেষে আবার ৩ টি তাকবীর দিতে হবে প্রথম রাকাতের মতো করে। অইরথাত তিনটি তাকবীর দিয়ে তিন বার -ই হাত ছেড়ে দিতে হবে। এবং চতুর্থ তাকবিরে সোজাসুজি ভাবে রুকুতে যেতে হবে।

ঈদের নামাজের নিয়ম অনুযায়ী অতিরিক্ত তাকবিরের জায়গা শুধু প্রথম রাকাতের শুরু এবং দ্বিতীয় রাকাতে রুকুতে আওয়ার আগেহ।

অতিরিক্ত প্রত্যেক তাকবিরের মধ্যে কয়েক সেকেন্ড (৩ থেকে ৪ বার সুবহানআল্লাহ পড়তে যতক্ষণ লাগে) সেটুকু সময় নিতে হবে।

আশা করছি পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের নিয়ম অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর কয়টি দিতে হবে তা জানতে পেরেছেন। জেনেছেন ঈদুল ফিতরের নামাজ কয় তাকবীর অতিরিক্ত দিতে হয় তাও জেনেছেন।

রোজার ঈদের নামাজের নিয়ত

প্রিয় পাঠক, ঈদুল ফিতর তথা রোজার ঈদের নামাজের নিয়ম জেনেছি। যেখানে জেনেছি রোজার ঈদের নামাজ পড়তে নিয়ত করতে হয়। এছাড়াও তাশাহুদ, দুরুদ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হয়।

চলুন ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে এবং বাংলাতে দেখে নেই। বলে রাখা ভালো যে অন্যান্য নামাজের মতো ঈদের নামাজেও নিয়ত করার দরকার নাই। এরপরেও আপনি করতে চাইলে করতে পারেন। বরং এতে কনন সমস্যা নেই।

চলুন একেক করে ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত সহ ঈদুল ফিতরের নামাজের সকল দোয়া বাংলা এবং আরবিতে অর্থ সহ জেনে নেই।

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতেঃ نويت ان اصلي لله تعالي ركعتي صلاة العيد الاضحى مع ستة .تكبيرات واجب الله تعالى اقتديت بهذا الامام متوجها الى جهة الكعبة  الشريفة الله اكبر..

ঈদুল ফিতরের নামাজের দোয়ার বাংলা উচ্চারণঃ “নাওয়াইতুআন উছল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতই ছালাতি ঈদুল আযহা মাআছিত্তাতি তাক বীরাতি ওয়াজি বুল্লাহি তায়লা ইক্বতা দাইতু বিহাজাল ইমাম, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবা-তিশ শারী-ফাতি আল্লাহু-আকবার।

বাংলায় ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়তঃ হে আল্লাহ, আমি এই এমামের পিছনে দাড়িয়ে কিবলা মুখী হয়ে ছয় তাকবিরের সাথে ঈদুল ফিতরের রোজার ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি, আল্লাহু আকবর। 

প্রিয় পাঠক, আপনি বাংলায় বা আরবিতে বা ইংরেজিতে যেকোনো ভাষায় রোজার ঈদের বা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে পারবেন।

আবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত না করলেও হবে। এটি ঐচ্ছিক একটি বিষয়। কারণ আপনি নামাজে আসছেন নামাজে দাঁড়িয়েছেন এতেই আপনার নামাজের নিয়ত হয়ে যায়।

আশা করছি ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলায় উচ্চারণ সহ জানতে পারছেন। এবার অন্যান্য দোয়া যা অন্য নামাজের মতো রমজানের ঈদের নামাজেও লাগে তা এক পলকে দেখে নেই।

তাশাহুদ – দরুদ – দোয়া মাসুরা । ঈদের নামাজের নিয়ম

প্রিয় পাঠক, সব নামাজের মতো আপনাকে ঈদের নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হয়। রোজার ঈদের নামাজের দ্বিতীয় অর্থাৎ শেষ রাকাতে দুই সিজদাহ শেষে এই দোয়াগুলি পড়তে হয়।

তাই আপনার জন্য এই দোয়াগুলি পড়া অত্যন্ত জরুরি। এক অপলকে তাশাহুদ, দরুদ এবং দোয়া মাসুরা দেখে নিতে এখানে ক্লিক করুন।

উপরের লিংকে গিয়ে দরুদ, দরুদ এবং তাশাহুদ ছারাও আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দেওয়া জেনে নিতে পারবেন।

প্রিয় পাঠক, এখন আমরা রোজার ঈদের নামাজ অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের নামাজ এবং নামাজ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন উত্তর জানবো। চলুন ঈদুল ফিতর সম্পর্কিত কিছু অধিক জিজ্ঞেসিত প্রশ্ন উত্তর জেনে নেওয়া যাক।

রোজার ঈদের নামাজ সম্পর্কিত FAQS

ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব নাকি ফরজ?

হ্যাঁ। ঈদের নামাজ ওয়াজিব। না, ঈদের নামাজ ফরজ নামাজ নয়। ঈদের নামাজ ওয়াজিব নামাজ।

ইদুল ফিতরের নামাজ কত রাকাত?

ঈদুল ফিতরের নামাজ দুই রাকাত। ছয় তাকবিরের সাথে ঈদুল ফিতরের নামাজ দুই রাকাত।

ইদুল ফিতর নামাজের নিয়ম কিভাবে জানবো?

এই পোষ্টের উপরের অংশে রোজার ঈদের নামাজের নিয়ম বা ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম দেওয়া আছে। পোষ্টের উপর থেকে জেনে নিন।

ঈদের নামাজ কি ফরজ নামাজ হিসেবে মুমিনদের উপর দেওয়া হয়েছে?

না। ঈদের নামাজ ফরজ না। ঈদের নামাজ ওয়াজিব হিসেবে মুমিনদের উপর দেওয়া হয়েছে।

ঈদের নামাজে অতিরিক্ত তাকবীর কয়টি দিতে হয়?

ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর দিতে হয়।

ঈদুল ফিতরের নামাজ কত রাকাত পড়তে হয়?

ঈদুল ফিতরের নামাজ ২ রাকাত পড়তে হয়। ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ার জন্য ২ রাকাত ওয়াজিব নামাজ পড়তে বলা আছে।

ঈদের নামাজের আগে রোজা রাখা কি বাধ্যতামূলক নাকি না?

প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ যাদের উপর রোজা ফরজ তাদের অবশ্যই রমজানের রোজা রাখতে হবে। কারণ, রোজা হচ্ছে ফরজ ইবাদত। রমজান মাসের রোজা ফরজ ইবাদত। আর ঈদের নামাজ ওয়াজিব নামাজ। তাই এর একটির সাথে অন্যটি খুব সম্পর্কিত না।

ঈদের নামাজ পড়ার বিধান আছে কি?

হ্যাঁ। ঈদের নামাজ ওয়াজিব ইবাদত। এটি পড়তে হবে। পড়ার বিধান বা নিয়ম উপরের অংশ থেকে জেনে নিন।

ঈদুল ফিতরের নামাজ সুন্নাত নামাজ, এর সত্যতা কি?

ঈদের নামাজ সুন্নত নাকি ওয়াজিব এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতবাদ আছে। তবে বিশুদ্ধ উত্তর হচ্ছে, ঈদের নামাজ ওয়াজিব নামাজ। সুন্নত নামাজ না ঈদের নামাজ।

রোজার ঈদের নামাজের নিয়ম সম্পর্কিত সর্বশেষ

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা রোজার ঈদের নামাজের নিয়ম তথা ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম, নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জেনেছি। এছাড়াও জেনেছি রোজার ঈদের নামাজ সম্পর্কিত বিস্তারিত সকল তথ্য।

আশা করছি, এই পোস্ট থেকে আপনি রোজার ঈদের নামাজের নিয়ম তথা ঈদুল ফিতরের নামাজ সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পেরেছেন। এছাড়া এই বিষয়ে আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানান।

ইসলাম এবং রমজান সম্পর্কিত আরও সকল বিষয়ে জাআনার জন্য আমাদের Islamic info Category ভিজিট করুন।

এবং সর্বশেষ আপডেট পেতে চোখ রাখুন অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।

7 thoughts on “ রোজার ঈদের নামাজের নিয়ম । ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম”

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.