ভূমিকম্প কেন হয় ? ভুমিকম্প হলে করনীয় কি?

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প সংগঠিত হয়। আর এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের পূর্বাভাস না পাওয়ায় এর ক্ষয়ক্ষতি হয় সবথেকে বেশি। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই জানে না যে ভূমিকম্প কেন হয় এবং ভূমিকম্প হলে করনীয় কি?

প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোষ্ট “ভূমিকম্প কেন হয় ? ভূমিকম্প হলে করনীয় কি।” এ।

আজকের এই পোষ্টে আমরা জানবো, ভূমিকম্প কেন হয়, ভূমিকম্প হলে করনীয় কি, ভূমিকম্প চলাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে করনীয় কি, ভূমিকম্পের মাত্রা সম্পর্কিত তথ্য, ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্রের নাম কি এই সব বিষয়ে বিস্তারিত। 

ভূমিকম্প কি, কাকে বলে, কেন হয় ?

ভু অভ্যন্তরে অর্থাৎ মাটির অনেক নিচে একটি শিলা অন্য একটি শিলার সাথে ঘর্ষণ হয়। তখন  ভু পৃষ্ঠ অর্থাৎ আমাদের পায়ের নিচের মাটি কিছু সময়ের জন্য কেপে ওঠে।

এর ফলে ভু ত্বক অর্থাৎ মাটির উপরের অংশ কেপে ওঠে বা কম্পিত হয়। এই কেপে ওঠা বা কম্পন হওয়াকেই ভূমিকম্প বলে।

 ভূমিকম্প কেন হয় বিজ্ঞান কি বলে এটা জানতে গিয়ে জানা যায় ভূমিকম্প হওয়ার প্রধান কারণ তিনটি বলে বিজ্ঞানীরা প্রমান করেছেন। এগুলো হচ্ছেঃ

  • ভু-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন।
  • আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণ।
  • শিলাচ্যুতি জনিত কারণ।

প্রতি বছর সারা বিশ্বে মোট কয়েক হাজার ভূমিকম্প হয়ে থাকে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।

তবে এর মধ্যে প্রায় শতভাগ ভূমিকম্প এতটাই কম মাত্রার অর্থাৎ এতটাই ম্রিদু যে মানুষ অনেক সময় বুঝতেই পারে না।

সাময়িক সময়ের ভূমিকম্পের অবস্থান কাল হয়ে ১ থেকে ২ সেকেন্ড বা তার কম। এই কারণে সব ভূমিকম্পে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি হয় নাহ।

ভূমিকম্পের মাত্রা । ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র

বিজ্ঞানী জন মিলন ১৯৮০ সালে ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র (Seismograph) তৈরি করেন। এবং তখন থেকেই ভূমিকম্প নিয়ে তখন থেকেই মূলত গবেষণা অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক গবেষণা শুরু হয়।

রিখটার স্কেলের সাহায্য নিয়ে ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয় করা হয়। ১ থেকে ১০ পর্যন্ত এই স্কেলের সীমা।

রিখটার স্কেলে ৫ মাত্রার বেশি হয়ে যাওয়া মানে ভয়াবহ ভূমিকম্প।

যেমন কিছুদিন আগে তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ৭-৮ তাপমাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে (২০২৩)।

এ সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো যে, এক ডিগ্রি ভূমিকম্প বাড়লে এর মাত্রা ১০ থেকে ৩২ গুন পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

চলুন দেখে নেওয়া যাক রিখটার স্কেলের কত থেকে কত পর্যন্ত ভূমিকম্প কোন আকার ধারণ করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম

  • ৫ থেকে ৫.৯৯ তাপমাত্রার মধ্যে ভূমিকম্প মাঝারি আকার ধারণ করে।
  • ৬ থেকে ৬. ৯৯ তাপমাত্রার মধ্যে ভূমিকম্প তীব্র আকার ধারণ করে।
  • ৭ থেকে ৭.৯৯ তাপমাত্রার মধ্যে ভূমিকম্প ভয়াবহ আকার থারন করে।
  • ৮ থেকে ৮ এর উপরে তাপমাত্রা হলে এটি অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

ভূমিকম্পের মাত্রা সম্পর্কে জানা হয়েছে। এবং ভূমিকম্প যন্ত্রের নাম জেনেছি।এবার আমরা ভূমিকম্প হলে করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ভূমিকম্প হলে করনীয় কি ?

সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে জেনে সতর্ক হওয়া যায়।

শুধু মাত্র ভূমিকম্পের আগে এই বিষয়ে কোনও পূর্বাভাস একহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যায় না।

তাই হথাত ভু-কম্পন অর্থাৎ ভূমিকম্প হলে করনীয় কি এবং ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে করনীয় কি তা জানা এবং সব থেকে জরুরি মাথা ঠাণ্ডা রেখে সচেতন নাগরিক হিসেবে পরিবার ইংবা আশপাশের মানুষকে শান্তে রাখতে কাজ করে।

তাহলে চলুন, জেনে নেওয়া যাক ভূমিকম্প শুরু হলে করনীয় কি এবং ভূমিকম্প হলে করনীয় কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।

ভূমিকম্প শুরুর আগে করনীয় । ভূমিকম্প কেন হয়

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে ভূমিকম্পের কোনও সত্রক বার্তা পাওয়া যায় না সরাসরি। ভুমিকম্পকে সরাসরি নির্ণয় করা না গেলেও ভূমিকম্প হওয়ার আগে মাইক্রোসিসমিসিটি গবেষণা, ফোকাল ম্যাকানিজম গবেষণার মাধমে যে সম্ভাব্য পূর্বাভাস পাওয়া যায় এটি অনেকটা কারজকর হয়।

এছাড়া এর মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান, হাইসিসমিসিটি, লোসিসমিসিটি নির্ণয় করতে পারি।

এটি জনসচেতনতায় জীবন বাচাতে এবং সম্পদ খয় ক্ষতিতে অত্যন্ত ভুমিকা রাখে।

তবে ভূমিকম্পের আগের সতর্কতা বাস্তবায়নের বিষয়ে সবার আগে সরকারকে একটি সঠিক ম্যাপের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এবং এই বিষয়ে সরকার থেকে জন সাধারণকে সতর্ক করার মাধ্যমে নিয়ম মানার জন্য বিশেষ আইনুনাগ আহবান জানাতে হবে।

এক্ষেত্রে বিশেষ করে বহুতল ভবন নির্মাণ, স্থাবর সকল নির্মাণে বাংলাদেশের স্থান ভেদে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণে জনগঙ্কে বাধ্য করতে হবে।

এতে কখনো উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও অনেক বড় ধরনের বিপদ থেকে বেঁচে যাওয়া যাবেহ।

মোদ্য কথা এই যে, সরকারকে অবশ্যই নিজ দায়িত্বে জনগণকে ভূমিকম্প নিয়ে সতর্ক করতে হবে।

আর এজন্য জনগনের সকল বিষয়ে জেনে শুনে তা মেনে চলার জন্য অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

ভূমিকম্প চলাকালীন করনীয়

ভূমিকম্প হচ্ছে এটা বুঝতে পারার পর সবার আগে দরকার মাথা ঠাণ্ডা রাখা। যথা সম্ভব খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করতে হবে।

ভূমিকম্পের কারনে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর বড় একটি অংশ ভুমিকম্পে মারা গেছে শুধু মাত্র মাথা ঠাণ্ডা না রেখে ভয়ে ছুটোছুটি করার জন্য।

এসময়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। অর্থাৎ স্থির থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়ির বাইরে থাকলে তাড়াহুড়ো করে বারিতে প্রবেশের চেষ্টা না করা। খোলা মাঠে আশ্রয় নেওয়া। 

একতলা ভবনে থাকলে দৌরে বাইরে চলে যেতে হবে। বহুতল ভবন হলে নামার চেষ্টা না করে আগে থেকে ঘরে রাখা হেলমেট মাথায় দিয়ে কাঠের টেবিল বা বিছানার নিচে আশ্রয় ন্নিতে হবে। এবং কাঁচের জিনিস থেকে দূরে থাকতে হবে।

ভূমিকম্প চলাকালীন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখতে হবে এবং লিফট ব্যবহার করা যাবে নাহ।

উচু দালান বা ছাদ থেকে লাফ দেওয়ার মতো বোকামি ভুলেও করা যাবে নাহ। এবং ভুমি ধস হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন জায়গা থেকে যত দ্রুত সম্ভব শক্ত আশপাশে নদী খাল নেই এমন কোনও জায়গায় মাঠে অবস্থান নিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ যেভাবে বদলে ফেলবেন আপনার জীবন

বাসা বাড়িতে ব্যবহারকৃত সব ধরনের গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে হবে।

এজন্য এগুলো খুব তারাতারি সঠিক ভাবে বন্ধ করার প্রশিক্ষণ আগে থেকে নিতে হবে।

আর গ্যাস এবং বিদ্যুৎ খুব কম সময়ের মধ্যে বন্ধ করার জন্য এর মেইন কানেকশন গুলো একদম সদর জায়গায় রাখতে হবে।

এছাড়াও ভূমিকম্প চলাকালিন সময়ে আপনার অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে আশপাশের উপর কোনও ভেঙ্গে পড়ার মতো কোনও ভবন বা গাছপালা ভেঙ্গে পড়ার মতো কিছু না থাকে।

ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে করনীয় । ভূমিকম্প কেন হয়

ভূমিকম্প শেষ হওয়ার পড়ে কিছুক্ষণ পরে আবার একটি ধাক্কা দিতে পারে। তাই ভূমিকম্প শেষ হওয়ার পর পরই নিজের স্থান ত্যাগ করে বের হয়ে জড় হবেন নাহ।

শেষ হওয়ার অনেক সময় পর আসতে আসতে শৃঙ্খলার সাথে বের হতে হবেহ। এরপর রেডিও কিংবা টেলিভিশন অর্থাৎ সংবাদের দিকে কান দিতে হবে এবং সেখানের সকল নির্দেশনা মানতে হবেহ।

যেসকল ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেই সব ভবন থেকে সবাইকে উদ্ধার করতে হবে।

বিদ্যুৎ, গ্যাস লাইনে কোনও ক্ষতি হয়েছে কি না তা দেখে নিতে হবেহ।

সরকারি সেবামুলক টীম (উদ্ধার কর্মী) এর সাথে বেসরকারি টিমকেও কাজ করতে হবেহ।

উদ্ধার এবং ত্রাণ নিশ্চিত করতে হবেহ।

এছাড়াও ভুমিকম্পে করনীয় বিসএ সরকারি সকল নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ভূমিকম্প সম্পর্কে সরকারি সকল নির্দেশনা দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

ভূমিকম্পকেন হয় তা নিয়ে সর্বশেষ

আজকের পোষ্টে আমরা জেনেছি ভূমিকম্প কি, ভূমিকম্প কাকে বলে, ভূমিকম্প কেন হয় বিজ্ঞান কি বলে এই বিষয়ে জেনেছি।

আশা করছি ভূমিকম্পের মতো একটি প্রাকৃতিক কঠিন দুর্যোগ মোকাবেলা এবং সতরকতা সম্পর্কে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছেন।

এরপরেও উপরে সরকারি নির্দেশনা লিংকে ক্লিক করে আরও বিস্তারিত দেখে নিন।

আইন এবং নিয়ম মেনে সবাই চললে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।

আমাদের সকল পোস্ট পরতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। চোখ রাখুন আমাদের টুইটার এ।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.