“প্রয়োজনে প্রিয়জন, অবেলায় নয়”

কথায় আছে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে কখনোই আর প্রিয়জন হয়ে থাকা যায় না। কিন্তু অবেলায় কেন খুজতে হয় অপ্রিয়দের? অনেকে আবার কোনো বেলাতেই খোঁজে না। তাই বলে কি প্রিয়জন কিংবা প্রয়োজন হারিয়ে যাবে সময়ের স্রোতে? অন্যের প্রয়োজনে প্রিয়জন করে ফেলছেন নিজেকে?

আসলে মনুষ্য জাতি এমন এক জাতি যে, নিজের প্রয়োজনে মানুষকে প্রিয়জন করি।

সে হতে পারে প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা, আবার দেখা যায় স্বামী কিংবা স্ত্রী। অনেক সময় দেখা যায় বন্ধু কিংবা বান্ধবী। আবার দেখি টাইমমেট অর্থাৎ সময় পার করা কেউ।

কেউ যদি বলে, সে কাউকে স্বার্থহীন ভালোবাসে তবে বুঝে নিবেন এই লোক মিথ্যুক।

আসলে তোমাকে আমি ভালবাসি, কিংবা তোমাকে আমার লাগবে, এই ধরনের কথা শুধু মাত্র আমরা নিজেদের স্বার্থে বলে থাকি।

অনেক সময় দেখা যায়, কোনো সম্পর্কে বিচ্ছেদ হতে শুরু করলে একজন বলছে, “আমাকে ছেরে যেওনা। আমি তোমাকে স্বার্থহীন ভালবাসি”।

আবার কেউ বিচ্ছেদে এত এত কান্না করে মনে হয় তার নিজের মৃত্যু হলেও তার কান্নার সুযোগ থাকলেও এত কান্না করত না।

কোনো স্বামী বুকে হাত রেখে বলতে পারবেনা যে কোনো প্রয়োজন ছাড়াই তার স্ত্রীকে বিবাহ করছে।

আসলে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া কিছুই করে না।

হতে পারে কারণ ভিন্ন তবে অবশ্যই কারণহীন কখনোই নয়।

স্বামী স্ত্রীদের সম্পর্কেও প্রয়োজন শেষে বিচ্ছেদের গল্প শুনেছি।তবে একটু কম। কেন জানেন? 

“সন্তান কিংবা আগামী প্রজন্ম, অর্থ কিংবা সম্মান, আবার সমাজ লজ্জার ভয়ে”। যা থাকে না আজকালকার প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা সম্পর্কের মধ্যে।

এই কান্না আসলে ছেরে যাওয়া মানুষের জন্য নয়। এই কান্না ব্যক্তি নিজের জন্য কাঁদে।

একজন মানুষ যখন একজনের অভভ্যেস বা আশক্তি হয়ে যায় তখন আসলে বিচ্ছেদ হয় প্রয়োজনের অতিরিক্ততার জন্যই।

এজন্যই মানুষ মনে করে “প্রয়োজনে প্রিয়জন, যা অবেলায় নয়”।

অবেলায় মানুষ নিজেকে তখন আবিষ্কার করে যখন জীবনে অনেক খারাপ সময়ে পার করে। তখন বেশিরভাগ মানুষের পাশে কেউ থাকে না। আর যার থাকে সে একটু মানসিক শক্তি পায়। অন্য কিছু না।

সম্পর্কে ভেঙ্গে যায় পাঁচটি কারণে

তবে এজন্য তাকে অনেক কথাই শুনতে হয়। হয়ত গভীরভাবে চিন্তার অভাবে আমরা এগুলি কখনোই খেয়াল করি না।

অবেলায় মানুষের একা থাকা উচিত। কারণ পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ আজ অব্ধি আসেনি যে কোনো ব্যক্তি খারাপ সময়ে অবেলায় থাকা ব্যক্তির শতভাগ মানসিক শক্তির কারণ হতে পারবে। এমন ঘটনা নিত্যদিন আমাদের চারিপাশে ঘটছে যে, ডাক্তার হয়ে ভালো সময় ফিরাতে মানুষ এসে বাকি থাকা জীবন তা নিয়ে চলে গিয়েছে। আর এমনটা হওয়ার সংখ্যাই শতভাগের কাছাকাছি।

প্রয়োজনে প্রিয়জন হতে দেখিনি এমন কেউ নাই। তবে অবেলায় একা থাকতে কেন শিখিনি? কেন খারাপ সসময়কে একা পার করতে ভয় পাই আমরা? থাকনা সব মানুষগুলি তাদের স্থানে। প্রয়োজনে যদি কাউকে প্রিয়জন বানাতে পারি তাহলে প্রয়োজনে একা বাঁচতে, একা থাকতে শিখতে কেন পারি না আমরা ???

মানুষ পারে না এমন কিছু নাকি নেই। তাই হলে আপনি আমি আমরা কেন পারছি না নিজেদের প্রয়োজনে নিজের অবেলায় নিজেকে শক্তিশালি করে নতুন করে বাঁচাতে ???

মহত্মা গান্ধী বলেছিলেন, “স্বার্থের প্রয়োজনে আজ মনুষত্য বলি হয়েছে। অর্থের প্রলোভনে, তাসের ঘরে জমছে মোহর মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অভিধানে”।

যেভাবে বদলে ফেলবেন আপনার জীবন

আমরা যখন কেউ কারোর প্রিয়জন হয়ে যাই তখন আমরা মনে রাখতে পারিনা, বা ভুলে যাই আমাদেরকে তাদের প্রয়োজনে প্রিয়জন করা হয়েছে।

এই বিষয়টি যেদিন সবাই মনে রাখতে পারবে আমার মনে হয় সেদিন আর বিচ্ছেদের গল্প শুনতে বা ফেস করতে হবে না।

আমাদের মনে রাখা উচিত এই পৃথিবীতে অসম্ভব কিছু না।

আপনি আমি আমরা সবাই প্রিয়জন কিংবা প্রয়োজন এর মধ্যেই চক্রাকারে ঘুরছি।

আপনি যত বেশি কারো কাছে প্রিয়জন হয়ে উথবেন তখনই বুঝে নিবেন আপনার প্রয়োজন শেষ হওয়ার সময় শেষ হয়ে আসছে।

জীবন নিয়ে উক্তি খুজবেন না।

প্রয়োজনে প্রিয়জন করার আগে আমরা চিন্তা করতে ভুলে যাই প্রয়োজন শেষে বিচ্ছেদটা কতটা মানসিক যন্ত্রণার কারণ হতে পারে।

সময় থাকতে সাধু সাবধান হওয়াই কি ভালো নয় সমাজের প্রিয়জন নামক অপ্রিয় তিক্ত মানুষদের থেকে ???

“একদিন ফুরিয়ে যাবে প্রয়োজন হয়ে যাবে অপ্রয়োজনীয়, ফেলে দেওয়া হবে ডাস্টবিন কিংবা মাটির নিচে। কি দরকার আছে এই অশান্তিতে নিজেকে জড়ানোর, বরং অবেলায় কিংবা সুবেলায় নিজেকে একা চলতে শেখার চেষ্টা করাই উত্তম”। – মাইনুল ইসলাম।

লেখাঃ শেখ মাইনুল ইসলাম, দৈনিককণ্ঠ ব্লগ

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.