ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ । পহেলা বৈশাখ নিয়ে ইসলামিক স্ট্যাটাস

প্রিয় পাঠক, স্বাগত আমাদের আজকের পোস্ট “ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ এবং পহেলা বৈশাখ নিয়ে ইসলামিক স্ট্যাটাস” এ। এই পোষ্টে আমরা দুইটি বিষয়ে জানবো। এছাড়া আমাদের অন্যান্য পোষ্টের মতো প্রশ্ন উত্তর পর্ব তো থাকছেই।

ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ,

পহেলা বৈশাখ নিয়ে ইসলামিক স্ট্যাটাস,

এই পোষ্টের প্রথম অংশে ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ কিভাবে পালন করা উচিত কিংবা কিভাবে নতুন বছর গ্রহণ করা উচিতা তা জানবো।

জানবো কোরআন এবং হাদিসে নববর্ষ পালন বা গ্রহনে কি কি করনীয় কিংবা বিধি নিষেধ দিয়েছে তা জানবো।

আরও পড়ুনঃ নতুন বছরের ইসলামিক স্ট্যাটাস । নতুন বছরের ইসলামিক শুভেচ্ছা 

এবং এই পোষ্টের দ্বিতীয় অংশে জানবো পহেলা বৈশাখ নিয়ে ইসলামিক স্ট্যাটাস।

অর্থাৎ আমাদের মধ্যে অনেকেই পহেলা বৈশাখ কে কেন্দ্র করে ইসলামিক কিছু কথা বা উক্তি খুঁজে থাকেন যেগুল তিনি ফেসবুক কিংবা অন্য কোথাো স্ট্যাটাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

আপনি একজন মুসলিম কিংবা অন্য সম্প্রদায়ের হন না কেন একজন সচেতন বাঙ্গালী হিসেবে আপনার অবশ্যই এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়বেন।

ইসলামিক দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ যেভাবে পালন করা উচিত

পহেলা বৈশাখ হচ্ছে বাংলা বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন। অর্থাৎ বাংলা বছরের প্রথম দিন।

আমাদের দেশে অনেক আগে থেকে পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ দিয়ে সকাল শুরু করার প্রথা চলে আসছে।

এবং গ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। গান বাজনা, নাচ যার মাত্রা গিয়ে দাড়ায় অশ্লিলতায়। প্রকৃত অর্থে ইসলাম এর একটিকেও সমর্থন করে না।

ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ বা নতুন বছরের প্রথম দিন হচ্ছে হিসাব নিকাশ করার দিন।

কারণ পিছনে আমাদের জীবন থেকে আরও একটি বছর তথা ৩৬৫ টি দিন চলে যায়।

একটি বছর আমাদের জীবন থেকে চলে যাওয়া মানেই জীবনটা আরও সংকীর্ণ তথা ছোট হয়ে আসা।

এই দিনে বরং আমাদের হিসাব করা উচিত যে জীবন থেকে আরও একটি বছর চলে গেলো অথচ আমরা আমাদের বিধাতার হুকুমের ইবাদত কতটা করতে পেরেছি।

কতটা আমরা পরকালের জন্য সংগ্রহ করতে পারছি। গত বছর এই দিনে এক বছরে যা যা করার টার্গেট করেছি তা তা করতে পারছি কি না।

না পারলে ঠিক কি কারণে পারিনি সেই কারণগুলি খুঁজে বের করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ হ্যাপি নিউ ইয়ার নিয়ে কিছু কথা । নতুন বছরের শুভেচ্ছা মেসেজ

ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ কিংবা নতুন বছরে দুই রাকাত নফল নামাজ পরে আল্লাহ কাছে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাওয়া যেতে পারে।

চলে যাওয়া এক বছরে যেসব আমল ইবাদত এবং জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় যা কিছু করতে পারিনি, এই বছর যেন তার সবকিছুই করতে পারি আল্লাহর কাছে সেই শক্তি চাইতে হবে।

আল্লাহ আমাদের হায়াত যতদিন রেখেছেন ততদিন যেন দুনিয়াবি সকল কাজের মদ্ধেও আমল ইবাদত ঠিকভাবে করতে পারি এই দোয়া করা যেতে পারে।

এবং এই বছরের নয় শুধু বরং সকল বাধা বিপদ থেকে আল্লাহর কাছে রক্ষা চেয়ে করুণা প্রাত্থনা করতে হবে।

এছাড়া, ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ পালন করা কিংবা পহেলা বৈশাখ বা নতুন বছর পালন সম্পর্কিত কোনকিছু পালন করাও সম্পূর্ণ হারাম। ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

এই ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানের নামে কোনও অশ্লীলতা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না।

পহেল বৈশাখে মুসলমানের করনীয় এবং দায়িত্ব

উপরের সম্পূর্ণ লেখাটি সদি আপনি পরে থাকেন তাহলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই বোঝা উচিত যে পহেলা বৈশাখ সংক্রান্ত এমন কোনও অনুষ্ঠান যেখানে অশ্লীলতা এবং বেহায়াপানায় পূর্ণ তা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না।

কিন্তু, আমাদের সমাজে ইসলাম ধরমালম্বি ব্যতিত আরও কয়েকটি ধরমালম্বির মানুষ আছে।

তবে তাদের থেকেও নামধারি মুসলমানরা এই আয়োজনে বেশী সম্পৃক্ত থাকে।

তাই একজন মুসলমান হিসেবে আপনার শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী আপনার সুযোগ অনুযায়ী সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন করা একজন মুসলিম হিসেবে আপনার দায়িত্ব এবং কর্তব্য। যেমনঃ

আপনি যদি আপনার পরিবারের প্রধান হয়ে থাকেন তাহলে আপনার স্ত্রী, সন্তান এবং আপনার অতধিনস্ত পরিবারের অন্যান্য সকল ব্যক্তিকে অবশ্যই ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে জানাবেন, এবং ফরস্ক অরে হলেও এই সব দিনে কোনও অনুষ্ঠানে এতে দিবেন না।

আপনি যদি কোনও প্রতিষ্ঠান প্রধান হয়ে থাকেন, তাহলে শান্ত সাবলীল ভাষায় আপনার অধিনস্ত মুসলমান ব্যক্তিদেরকে ইসলামে পহেলা বৈশাখ কিংবা নতুন বছর উদযাপন সম্পর্কে কি বলা হয়েছে, কিভাবে আমাদের এটি উদযাপন করা উচিত তা জানা উচিত।

সবার মধ্যে এমন চিন্তা ভাবনা জাগিয়ে উঠানোর জন্য কাজ করা উচিত যে সবাই যেন প্রকৃত অর্থে বুঝতে পারে যে, আসলেই একজন মুসলমানের কাছে প্রকাল বলে কিছু আছে।

আর পরকালের জন্য হলেও আমল ইবাদত করতে হবে এবং পাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে।

একটি নতুন বছর শুরু হওয়া মানে একটি বছর শেষ হয়ে আসা। এর দ্বারা জীবনের অধ্যায় আরও ছোট হয়ে আসা বোঝায়।

তাই সামর্থ্য এবং আপনার অধিনস্ত সকল মুসলমানকে এই সামাজিক সম্প্রিতি বা অনুষ্ঠানের নামে আশ্লিলতা থেকে মুক্ত রাখতে হবে।

মসজিদের প্রতেক ইমামের উচিত জুমা এবনা অন্যান্য নামাজের বাদে মুসল্লিদের মাঝে এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা। এটা তাদের প্রধান এবং নৈতিক দায়িত্ব।

এছাড়াও সবাই সবার ব্যক্তিগত জীবনে ভাল অসম্পরক এমন মানুষ, যেমন বন্ধু বান্ধব – আত্মীয় স্বজন এদের সচেতন করা উচিত।

আশা করছি একজন মুসলমান হিসেবে কিভাবে নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ পালন করা উচিত তা এতক্ষণে বুঝাতে পেরেছি।

এবার আমরা পহেলা বৈশাখ নিয়ে ইসলামিক স্ট্যাটাস দেখবো।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে ইসলামিক স্ট্যাটাস

আমাদের মধ্যে অনেক ব্যক্তি আছেন, য্রা পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে এই বিষয়ে সম্পৃক্ত ছোট ছোট লেখা খুঁজে থাকেন।

এই লেখাগুলো তাদের মনে মোট এবং ইউনিক বা অরগানিক হলে লেখাগুলোকে পহেলা বৈশাখ নিয়ে ইসলামিক স্ট্যাটাস হিসেবে পোস্ট বা শেয়ার করে থাকেন।

এখন আমরা এমন কিছু লেখা দেখবো, যেগুলো নতুন বছরের ইসলামিক স্ট্যাটাস এবং পহেলা বৈশাখ নিয়ে ইসলামিক স্ট্যাটাস দুই বিষয়ের জন্যই আপনি স্ট্যাটাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।

লেখা ১

ক্ষণস্থায়ী আমাদের এই জীবন থেকে আরও একটি বছর চলে গেলো। কি করতে পারছি তা জানি না।

তবে বার বার মনে হচ্ছে আমল ইবাদত কিছুই করতে পারিনি পরকালের জন্য।

হে আল্লাহ জীবন তো আরও সংকীর্ণ হয়ে গেলো। তুমি হেদায়েত দাও আমায়।

তুমি ক্ষমা করে দাও গোটা জাতিকে এমন অশ্লীল উতসবে মেতে ওঠার জন্য।

আরও পড়ুনঃ নতুন বছরের শুভেচ্ছা মেসেজ । হ্যাপি নিউ ইয়ার

লেখা ০২

গত বছর ঠিক এই দিনে ভেবেছি একটি বছর বেঁচে থাকেলে দিন ও দুনিয়ার জন্য কত কিছু করবো।

দুনিয়া এবং আখিরাতের জন্য অনেক কিছু গুছিয়ে ফেলব। পারিনি।

অথচ আমার আল্লাহ কত দয়াময়। আমাকে আরও একটি নতুন বছরের মুখ দেখালো।

তবে, কত টুকু পারি জানি না। হে আল্লাহ তুমি আমাকে আমাদের ক্ষমা করে দাও।

লেখা ০৩

হে মুসলিম, তুমি কি জানো না যে, পহেলা বৈশাখ পালন করা হারাম? তুমি কি জানো না নতুন বছর মানের জীবন আরও এক ধাপ ছোট হয়ে আসা? তোমার কি ভয় হয় না জীবন থেকে আরও একটি বছর হারিয়ে?

কি জবাব দিবে তুমি পরপারে? তোমার আল্লাহ যদি তোমার হিসাব নেন পারবে তুমি পার পেতে? অশ্লীলতা বন্ধ করো মুমিণগণ।

লেখা ০৪

শান্তির ধর্ম ইসলাম। অন্যের শান্তিতে ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। তবে, ইসলাম পরিপন্থী কাজ সমাজ থেকে দূর করার চেষ্টা টা আমাদের সকলের হওয়া উচিত।

একটি বছর শেষ। কি পেরেছি, যা পারিনি তা কেন পারিনি সেই হিসাব কেউ করেন না। এটা করা একান্ত জরুরি।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে ইসলামিক উক্তি স্ট্যাটাস

লেখা০৫

ঠিক এক বছর আগে ভেবেছি আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে দিন ও আমল উপার্জনে কিছু করবো। যার অনেকটাই পারিনি। তবে না পারার কারণ খুঁজে পেয়েছি। আল্লাহ চান তো, এবছর বেঁচে থাকলে ইনশাআল্লাহ সব হবে।

লেখা ০৬

হে আল্লাহ, তুমি আমাদের জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দাও। নতুন বছরকে আমাদের জন্য সুখ শান্তি আর প্রাপ্তিতে পূর্ণ করে দাও। তোমার ধনভাণ্ডারে কিছুর অভাব নেই। আমাদেরকে কবুল করে নাও।

লেখা ০৭

নতুন বছর কিংবা নতুন দিন এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলি মুসলমানদের জন্য না।

বরং আমাদের সবার উচিত, ক্রমান্নয়ে সমাজে শালীনতা ফিরিয়ে আনতে এগুলি বন্ধ করে ইসলামিক বিধান অনুযায়ী চলতে শেখা উচিত।

লেখা ০৮

প্রত্যেকটি নতুন বছরের শুরুতে আমরা আনন্দ করে থাকি। কিন্তু আমরা চিন্তা করি না যে, এরা মধ্য দিয়ে আমাদের জীবন থেকে আরও একটি বছর চলে গেলো।

জীবন আরও সংকীর্ণ হয়ে গেলো। তাই জীবনকে সংকীর্ণতার দিকে ঠেলে দিয়ে বোকার মতো আনন্দে মেতে না উঠি।

ইসলাম ও পহেলা বৈশাখ নিয়ে প্রশ্ন উত্তর । FAQS

প্রশ্নঃ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো কি হারাম?

= হ্যাঁ। শুধু বাংলা নববর্ষ ই নয়, বদং যেকোনো বছরের নতুন দিনকে পহেলা বছরের দিন হিসেবে পালন করা হারাম। এটিকে ইসলাম সমর্থন করে না।

এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এসকল অনুষ্ঠান বা দিনের সাথে সরাসরি অশ্লীলতা এবং অবৈধ সবকিছু সম্পর্কিত। 

প্রশ্নঃ নতুন বছর নিয়ে ইসলাম কি বলে?

= নতুন বছর সম্পর্কে ইসলাম মনে করে, নতুন বছর আসা মানে পিছনে একটি বছর রেখে আসা।

আর একটি বছর রেখে আসা মানে জীবন থেকে একটি বছর চলে যাওয়া।

এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে নতুন বছরের মাধ্যমে আমাদের জীবন আর সংকীর্ণ বা ছোট হয়ে আসে।

আরও পড়ুনঃ নতুন বছরের শুভেচ্ছা বাণী ২০২৩

প্রশ্নঃ পহেলা বৈশাখের দিন সকালে পান্তা ইলিশ খাওয়ার জায়েজ আছে?

= আপনি যেকোনো দিন পান্তা ইলিশ বা যেকোনো কিছু খেতে পারেন।

তবে, পহেলা বৈশাখ কে কেন্দ্র করে বা উদ্দেশ্য করে খাওয়া হারাম।

এরকম কোনও বিধান ইসলামে বলা হয়নি। সব দিন আল্লাহর দিন।

ওইদিন পান্তা ইলিশ খাওয়ার একটি কারণ হচ্ছে, মনে করা হয় যে সারা বছর এমন ভালো খাবার খাওয়া যাবে তাহলে।

কিন্তু এটি সম্পূর্ণ কুসংস্কার। তাই কুসংস্কার থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ নিয়ে সর্বশেষ

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা জেনেছি ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ এবং পহেলা বৈশাখ নিয়ে ইসলামিক স্ট্যাটাস মুলক কিছু লেখা।

আশা করছি আজকের পোস্ট থেকে ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ কেমন হওয়া উচিত, এবং আমাদের করনীয় কি সে বিষয়ে সম্পূর্ণ ক্লিয়ার ভাবে জানতে পারছেন।

এছাড়াও পহেলা বৈশাখের দিনে ইসলামিক স্ট্যাটাস দেওয়ার মতো কিছু বিষয়ে জানতে পারছেন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বিষয় জানার এবং মানার তৌফিক দিন। আমিন।

এই বিষয়ে আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানান।

এবং এই সম্পর্কিত আমাদের আরও পোস্ট পড়তে আমাদের বাংলা ব্লগ ক্যাটাগরি ভিজিট করুন।

নিয়মিত আমাদের সকল পোস্ট পড়তে ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। সর্বশেষ আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ চোখ রাখুন।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.