Last Updated on 1 year by Shaikh Mainul Islam
প্রিয় পাঠক, শবে বরাত বা মুক্তির রাত অর্থাৎ, এই রাতে মুসলিম উম্মাহ শবে বরাতের নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আল্লাহ এইদিন পৃথিবীতে তার কোন বান্দার কি লাগবে তা জানতে চান যা দরকার তাই তিনি তার বান্দাদের দেন।
শবে বরাত সম্পর্কে আজকের পোষ্টে আমরা শবে বরাতের নামাজ সম্পর্কিত সকল তথ্য জানবো।
জানবো শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম, শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া, শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত এবং শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে জানবো।
শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম
মুক্তির রাত বা শবে বরাত। পবিত্র রমজান মাস শুরুর ১৫ দিন আগে এই দিনটি আসে। শাবান মাসের ১৫ তারিখ দিবাগত রাতকে শবে বরাত বলা হয়।
শবে বরাতের নামাজ নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা আছে।
তবে আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন শবে বরাত এর নামাজ সম্পর্কে।
মূলত, শবে বরাতের রাতে এশার ফরজ এবং সুন্নত নামাজ পড়ার পর দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়তে হয়।
এই নামাজ পড়লে এর অনেক ফায়দা আছেহ। তবে কেউ না পড়লে পাপ নেই।২ রাকাত করে সর্বনিম্ন ১২ রাকাত নামাজ পড়া উচিত।
তবে এই রাতে শুধু নামাজ-ই না, বরং অন্যান্য যেকোনো ইবাদত করা যাবে। হতে পারে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, হাদিস পড়া ইত্যাদি।
শবে বরাতের নামাজ সাধারন্ত ১২ রাকাত পড়তে হয়। তবে এর থেকে বেশী নামাজ আদায় করলেও কোনও সমস্যা নেই।
তবে লক্ষ্য তাখতে হবে সারারাত নফল নামাজে পড়তে গিয়ে ফজরের নামাজ বাদ না যায়।
আরও পড়ুনঃ শবে বরাতের রোজা কয়টি । শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত
আপনাকে শবে বরাত এর নামাজ পড়ার আগে ওইদিন এশার ফরজ এবং সুন্নত নামাজ শেষ করতে হবে। এরপর শবে বরাত নামাজের নিয়ত করতে হবে।
বেতের নামাজের পর শবে বরাত এর নামাজ পড়া যাবে কি না এই বিষয়ে অনেকেই জানতে চান। আপনাদের জেনে রাখা ভালো যে,
এশার ফরজ এবং সুন্নত নামাজ আদায় করার পরে আপনার অবশ্যই বেতের নামাজের আগে শবে বরাতের নফল নামাজ পড়া উচিত।
তবে ভুলক্রমে আগে বেতের নামাজ পড়া হয়ে গেলে সেক্ষেত্রেও বেতের নামাজের পরেও শবে বরাতের নফল নামাজ আদায় করা যাবে।
এরপর অন্যান্য নামাজের মতো স্বাভাবিক ভাবে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে।
দুই রাকাত নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়ে আবার দুই রাকাত শুরু করতে হবে। এভাবে অন্তত ১২ রাকাত নামাজ পড়তে হয়।
আশা করছি শবে বরাত এর নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তা বুঝতে পারছেন। এবার শবে বরাতের নিয়ত ও দোয়া জানবো।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত ও দোয়া
অন্যান্য নামাজের মতো শবে বরাত এর নামাজেও নিয়ত এবং দোয়া আছে। তবে শবে বরাতের নামাজের উদ্দেশ্য নিয়ে নামাজে দাঁড়ালে নামাজের নিয়ত হয়ে যায়। তবে নিয়ত আলাদাভাবে পড়া অতি উত্তম।
মুক্তির রাত তথা শবে বরাত এর নামাজের নিয়ত আপনি বাংলা কিংবা আরবি যেকোনো ভাষায় করতে পারবেন। আর আপনি যদি আরবি বা বাংলা মুখস্ত করার চেষ্টা করেও পারেন না তখন আপনি এভাবেও শবে বরাতের নামাজের দোয়া করতে পারবেন যে,
“হে আল্লাহ তোমার কাবা ঘরের দিকে কিবলা মুখি হয়ে শবে বরাতে তোমার করুণা পাওয়ার লক্ষে দুই রাকাত নামাজ আদায় করছি, আল্লাহআকবর”।
চলুন শবে বরাত নামাজের নিয়ত জেনে নেওয়া যাক।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত আরবিতেঃ নাওয়াইতুআয়ন উছ ল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাক আতাই ছালাতিত লাইলাতিল বারাতিন নাফ-লি, মুতাওয়া জ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবা তিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত বাংলায়ঃ “আমি শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ কিবলা মুখী হয়ে আদায় করছি, আল্লাহু আকবর”।
প্রিয় পাঠক, শবে বরাত অর্থ হচ্ছে মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে হয়।
অসুস্থ থাকলে সুস্থতা চাইতে হয়। হালাল উপার্জন করার শক্তি প্রার্থনা করতে হয়।
তবে এই সবকিছুর জন্য বিভিন্ন দোয়া থাকলেও একটি দোয়া আছে। সেই দোয়াটি আপনি পড়তে পারবেন শবে বরাত এর রাতে। তবে এই দোয়া সবসময় -ই পড়া যায়।
আরও পড়ুনঃ শবে বরাতের নামাজের নিয়ম । শবে বরাতের ফজিলত । শবে বরাতের আমল
শবে বরাতের দোয়া আরবিতেঃ আল্লাহুম্মাগফিরলি জাম্বি, ওয়া ওয়াসসিলফি দারি- ওয়া বারিকলি রিজক।- (নাসাই)।
শবে বরাতের দোয়া বাংলায়ঃ হে আল্লাহ তায়ালা, তুমি আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দাও। আমার জন্য আমার থাকার জায়গাকে প্রসস্থ করে দাও। আমার রিজিকে বরকত দান করো।
আল্লাহ তায়ালার কাছে কান্না করে করে ক্ষমা চেতে হবে। আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল।
আল্লাহ তার বান্দাদের ক্ষমা করতে বড্ড ভালোবাসেন। আমাদের সবাইকে আল্লাহ হমা করে দিন, আমিন।
শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে
শবে বরাতের রাতে যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে অনুগ্রহ কামনা করে প্রত্যেককে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
আল্লাহ শুধু মাত্র মুশরিক এবং বিদ্বেষ পোষণকারী এই দুই ধরনের লোক বাদে প্রত্যেককে ক্ষমা করে দেন। -(হাদিস)।
আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক কিছুই চাই। তবে আমাদের চাওয়ার মাঝে অনেক ত্রুটি আছেহ। এই ত্রুটি দূর করা অত্যন্ত জরুরি।
একদা এক শবে বরাতের রাতে নবীজি সাঃ) এত দীর্ঘ সিজদা দিয়েছিলেন যে আয়েশা (রাঃ) মনে করেছিলেন নবীজি মারা গেছেন কি না।
এরপর আয়েশা (রাঃ) নব্জির বুড়া আঙ্গুলে চাপ দিলে নিবিজি সিজদা শেষ করেন। এরপর আয়েশাকে বলেন,
“হে আয়েশা, তুমি কি জান এই রাত শবে বরাতের রাত। এই রাত মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের সবকিছু দেওয়ার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করেন বান্দার চাওয়া পর্যন্ত।
এই রাতে আল্লাহ পৃথিবীতে সব বান্দার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করে আর বলে,
“আমার বান্দারা, কার কি লাগবে, আমি আল্লাহ সব দিব। তোমরা আমার কাছে চাও”।
আল্লাহর কাছে এইভাবে বলে কেঁদে কেঁদে চাইতে হবেহ,
হে আল্লাহ, তুমি তো অন্তর্যামী। তুমি তো মহান, তুমি ক্ষমাশীল আল্লাহ। আমি পাপি গুনাহগার বান্দা। তোমার আমাকে কোনও দরকার নাই। কিন্তু আমি পাপি।
কিন্তু তুমি দয়া না করলে যে আমার কোনও উপায় নাই।
হে আল্লাহ দাওনা আমাকে ক্ষমা করে। তুমি আমাকে ক্ষমা করলে তোমার কিছুই কমবে না। আল্লাহ।
আমাকে মাফ করে দাও মাওলা। আল্লাহ, আমাদের সবাইকে মাফ করে দাও।
আমাদের নিয়মিত নামাজ আদায়ের তৌফিক দাও আল্লাহ। তৌফিক দাও সত্যের পথে থাকতে আল্লাহ। হে আল্লাহ। আমাকে দাও শক্তি মাওলা।
শবে বরাত সম্পর্কিত FAQS
প্রশ্নঃ শবে বরাত নামাজের নিয়ত কি ?
= শবে বরা নামাজের নিয়ত হচ্ছে, নাওয়াইতুআয়ন উছ ল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকআতাই ছালাতিত লাইলাতিল বারাতিন নাফ-লি, মুতাওয়া জ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবা তিশ্ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
প্রশ্নঃ শবে বরাতের নামাজ কয় রাকাত কিভাবে পড়তে হয় ?
= শবে বরাতের নামাজ অন্তত ১২ রাকাত পড়া উচিত। তবে এর কোনও ধরাবাধা সীমা নাই। কম বেশী পড়া যায়।
শবে বরাতের নামাজ কিভাবে পড়তে হয় জানতে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
আরও পড়ুনঃ রমজানে সাহরি ইফতারিতে যা থাকা উচিত
প্রশ্নঃ বেতের নামাজের পর তাহাজ্জুদ পড়া যাবে ?
= বেতের নামাজের আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উচিত এবং অতি উত্তম।
তবে কোনও কারণে বেতের নামাজ আগে আদায় করা হয়ে গেলেও পড়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যাবে। তবে, এটি ঠিক নাহ।
প্রশ্নঃ শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে কিভাবে জানবো ?
= আপনি শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে জানতে চাইলে এই পোস্টটি এবং শবে বরাত সম্পর্কিত আমাদের পূর্ববর্তী পোস্টগুলো পড়ুন।
আরও পড়ুনঃ ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম
প্রশ্নঃ শবে বরাত ২০২৩ কবে ?
= এবছর (২০২৩) শবে বরাত হচ্ছে ৭ মার্চ ২০২৩।
অর্থাৎ মার্চ মাসের ৭ তারিখ রাতে শবে বরাত এর নামাজ পড়তে হবে।
শবে বরাত সম্পর্কিত সর্বশেষ
আজকের পোষ্টে আমরা হবে বরাতের নামাজ সম্পর্কে জেনেছি। শবে বরাতের নামাজ নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছি।
আশা করছি এই পোস্টের মাধ্যমে শবে বরাত সম্পর্কিত সকল তথ্য পেয়েছেন।
শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম, শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে আরও কিছু জানতে আমাদের ইসলামিক ব্লগ ক্যাটাগরি তে ভিজিট করুন।
এছাড়াও এই পোষ্টে কমেন্ট করে জানতে চাইতে পারেন। আপনার কমেন্টের উত্তরে জানিয়ে দেওয়া হবেহ।
আরও পড়ুনঃ ঈদুল ফিতরে করণীয় বর্জনীয় সমূহ
নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের সকল পোস্ট পড়ুন। চোখ রাখুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।
Thanks in favor of sharing such a good opinion, article is nice, thats why i have read it fully