কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত । ঈদুল আযহা নিয়ে কিছু কথা

প্রিয় পাঠক, স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের আজকের পোস্ট কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত রবং ঈদুল আযহা নিয়ে কিছু কথা এ। এই পোষ্টটি সকল মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

আমাদের মধ্যে অনেকেই কোরবানির ইতিহাস এবং কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত সমূহ সম্পর্কে জানা নেই।

তাই এই পোষ্টটি আমাদের সবার জন্য কোরবানি নিয়ে পবিত্র কোরআনে যেসব আয়াত নাজিল হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

তাহলে চলুন হজরত ইব্রাহিম আঃ এর আমল থেকে প্রচলিত কোরবানি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কোন কোন সূরায় কয়টি আয়াত আছে এবং সেই সব আয়াতের অর্থ কি তা জেনে নেওয়া যাক।

কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত সমূহ

পবিত্র কোরআনে অনেক জায়গায় কোরবানি সম্পর্কে আল্লাহ তায়লা আয়াত নাজিল করেছেন।

তার মধ্যে আজকে আমরা কোরআনের ৬ টি জায়গায় কোরবানি সম্পর্কে আয়াত নাজিল হয়েছে এমন আয়াত সম্পর্কে জানবো।

আজকের এই পোস্ট এ কোরবানি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত যে ৬ টি আয়াত এবং তার অর্থ আমরা জানবো সেই আয়াত দশটি আয়াত সুরার নাম সহ নিচে উল্লেখ করা হলও।

  • সুরাতুল বাকারা এর আয়াত নং ১৯৬
  • সুরাতুল মায়েদা এর আয়াত নং ২৭
  • সুরাতুল কাওসার এর আয়াত নং ২
  • সুরাতুল হজ এর আয়াত নং ৩৪ থেকে ৩৫
  • সুরাতুল হজ এর আয়াত নং ৩৬
  • সুরাতুল হজ এর আয়াত নং ৩৭ থেকে ৩৮

প্রিয় পাঠক, উপরে উল্লেখিত সুরার নির্দিষ্ট আয়াতগুলি জানবো এবং এর বাংলা অর্থ জানবো যেখানে কি না কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত হিসেবে এই আয়াতগুলো আল্লাহ পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেন।

কোরআনে কোরবানি নিয়ে আয়াত সমূহ বাংলা অর্থ সহ

সুরাতুল বাকারা এর ১৯৬ নং আয়াতে আল্লাহ কোরবানি সম্পর্কে নাজিল করেন যে,

وَ اَتِمُّوا الۡحَجَّ وَ الۡعُمۡرَۃَ لِلّٰهِ ؕ فَاِنۡ اُحۡصِرۡتُمۡ فَمَا .اسۡتَیۡسَرَ مِنَ الۡهَدۡیِ ۚ وَ لَا تَحۡلِقُوۡا رُءُوۡسَکُمۡ حَتّٰی یَبۡلُغَ الۡهَدۡیُ مَحِلَّهٗ ؕ فَمَنۡ کَانَ مِنۡکُمۡ مَّرِیۡضًا اَوۡ بِهٖۤ اَذًی مِّنۡ رَّاۡسِهٖ فَفِدۡیَۃٌ مِّنۡ. صِیَامٍ اَوۡ صَدَقَۃٍ اَوۡ نُسُکٍ ۚ فَاِذَاۤ اَمِنۡتُمۡ ٝ فَمَنۡ تَمَتَّعَ بِالۡعُمۡرَۃِ. اِلَی الۡحَجِّ فَمَا اسۡتَیۡسَرَ مِنَ الۡهَدۡیِ. ۚ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ ثَلٰثَۃِ اَیَّامٍ فِی الۡحَجِّ وَ .سَبۡعَۃٍ اِذَا رَجَعۡتُمۡ ؕ تِلۡکَ عَشَرَۃٌ کَامِلَۃٌ ؕ ذٰلِکَ لِمَنۡ لَّمۡ یَکُنۡ اَهۡلُهٗ حَاضِرِی الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ وَ اعۡلَمُوۡۤا. اَنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ

বাংলা অর্থঃ 

“তোমরা হজ এবং ওমরাহ পালন করো আল্লাহর জন্য। এর পরে যদি তোমরা আটকে পড় তবে তোমাদের কাছে যে পশু সহজ হবে দিয়ে কোরবানি করো।

এবং তোমরা তোমাদের মাথা মুন্ডন বা চুল ফেলে দিওনা, যতক্ষণ পশু তার যথাস্থানে না পৌঁছে।

আরও পড়ুনঃ ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম ও নিয়ত জেনে নিন

আর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ কিংবা তার মাথায় যদি কোনো কষ্ট থাকে তবে রোজা কিংবা সদাকা অথবা পশু জবেহ এর মাধ্যমে ফিদয়া দেবে।

এবং যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন যে ব্যক্তি ওমরার পর হজ সম্পাদন পূর্বক তামাত্তু করবে, তবে যে পশু তুলনামুলক সহজ হবে, তা কোরবানি করবে।

কিন্তু যে তা পাবে না তাকে হজে তিন দিন এবং যখন তোমরা ফিরে যাবে, তখন সাত দিন রোজা আদায় করতে হবে।

এই হল পূর্ণ দশ। এই বিধান তার জন্য করা হয়েছে, যার পরিবার মাসজিদুল হারামের স্থায়ী অধিবাসী নয়।

আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং মনে রেখো যে নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘন কারীদের শাস্তিদানে সর্বদা কঠোর”।

সুরাতুল মায়েদা এর ২৭ নং আয়াতে আল্লাহ কোরবানি সম্পর্কে নাজিল করেন যে,

وَ اتۡلُ. عَلَیۡهِمۡ نَبَاَ ابۡنَیۡ .اٰدَمَ بِا لۡحَقِّ ۘ اِذۡ قَرَّبَا. قُرۡبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنۡ اَحَدِهِمَا وَ لَمۡ یُتَقَ بَّلۡ مِنَ .الۡاٰخَرِ ؕ قَالَ لَاَقۡتُلَنَّکَ ؕ قَالَ اِنَّمَ ا یَتَقَبَّلُ اللّٰهُ مِنَ الۡمُتَّقِیۡنَ 


বাংলা অর্থঃ

“এছাড়া তুমি তাদের কাছে আদমের দুই সন্তান (হাবিল এবং কাবিল) সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা করে জানাও যে,

যখন তারা উভয়ে কোরবানিকে পেশ করলো। এরপর তাদের একজনের থেকে (কোরবানি) গ্রহণ করা হয়েছে। আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হয়নি। এতে সে বললো, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হ * ত্যা করবো’। এরপর অন্যজন এবার বললো বলল, “আল্লাহ তায়ালা কেবল মাত্র মুত্তাকিদের থেকে কুরবানি গ্রহণ করেন””।

সুরাতুল কাওসার এর ২ নং আয়াতে আল্লাহ কোরবানি সম্পর্কে নাজিল করেন যে,

. فَصَلِّ  لِرَبِّکَ  وَ انۡحَ

বাংলা অর্থঃ

“সুতরাং আপনার রবের জন্য এবং উদ্দেশ্যেই নামাজ আদায় করুন ও কোরবানি আদায় করুন”।

সুরাতুল হজ এর আয়াত নং ৩৪ থেকে ৩৫ নং আয়াতে আল্লাহ কোরবানি সম্পর্কে নাজিল করেন যে,

وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا لِّیَ.ذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰهِ عَلٰ ی مَا رَزَ. قَهُمۡ مِّنۡۢ  بَهِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ؕ فَاِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسۡلِمُوۡا ؕ. وَ بَشِّرِ الۡمُخۡبِتِیۡنَ- الَّذِیۡنَ اِذَا ذُکِرَ اللّٰهُ وَجِلَتۡ  . قُلُوۡبُهُمۡ وَ الصّٰبِرِیۡنَ عَلٰی مَاۤ اَصَابَهُمۡ وَ الۡمُقِیۡمِی الصَّلٰوۃِ. ۙ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ

বাংলা অর্থঃ

“আমি সকল জাতির জন্য কোরবানির বিধান করে দিয়েছি।

যাতে করে তারা সবাই আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যেসব জন্তু তিনি রিজিক হিসেবে দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া ও নিয়ম জেনে নিন

তোমাদের প্রভু তো এক প্রভুই।

সুতরাং তাঁরই কাছে মাথা নত করো।

আর অনুগতদেরকে সু সংবাদ দিয়ে দাও, যাদের কাছে আল্লাহর কথা উল্লেখ করা হলে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে আল্লাহর ভয়ে, যারা তাদের বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে।

এবং যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে ও আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যবহার করে”।

সুরাতুল হজ এর আয়াত নং ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ কোরবানি সম্পর্কে নাজিল করেন যে,

وَ الۡبُدۡنَ جَعَلۡ نٰهَا لَکُمۡ مِّنۡ شَ عَآئِرِ اللّٰهِ لَکُمۡ فِیۡهَا  خَیۡرٌ ٭ۖ  فَاذۡکُرُوا اسۡمَ ا.للّٰهِ عَلَیۡهَا صَوَ آ.فَّ ۚ فَاِذَا وَجَبَتۡ جُ.نُوۡبُهَا  فَکُلُوۡا مِنۡهَا وَ اَطۡعِمُوا الۡقَ.انِعَ وَ الۡمُعۡتَرَّ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرۡنٰهَا لَکُمۡ لَ.عَلَّ.کُمۡ تَشۡکُرُ.وۡنَ

বাংলা অর্থঃ

“এছাড়া কোরবানির উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি।এতে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে।

অতএব,  সারিবদ্ধ হয়ে দন্ডায়মান অবস্থায় সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো।  যখন সেগুলো কাত হয়ে পড়ে যায় তখন খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করো।

যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না খাওয়ার জন্য এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায় মানুষের দুয়ারে তা থেকে তাদেরকে খেতে দাও।

এভাবেই আমি ওই গুলোকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি; যাতে তোমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর”।

সুরাতুল হজ এর আয়াত নং ৩৭ থেকে ৩৮ নং আয়াতে আল্লাহ কোরবানি সম্পর্কে নাজিল করেন যে,

لَنۡ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوۡ .مُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰکِنۡ یَّنَ . الُهُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرَهَا لَ .کُمۡ لِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا  هَدٰىکُمۡ ؕ وَ بَ شِّرِ الۡمُحۡسِنِیۡنَ – اِنَّ اللّٰهَ یُ . دٰفِعُ عَنِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ کُلَّ خَوَّ .انٍ کَفُوۡرٍ

বাংলা অর্থঃ

“কিন্তু তোমরা মনে রেখো, কোরবানির গোশত, রক্ত বা চামড়া কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। আল্লাহর কাছে পৌছায় শুধু তাকওয়া।

এই জন্যেই কোরবানির পশু গুলোকে তোমাদের অধিনস্ত করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ তোমাদের সৎপথ প্রদর্শনের মাধ্যমে যে কল্যাণ দিয়েছেন, সেজন্যে তোমরা আল্লাহর প্রশংসা করো।

হে নবি, আপনি ভালো কাজ করা মানুষদের সু সংবাদ দিন যে, আল্লাহ বিশ্বাসীদের রক্ষা করবেন।

নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো বিশ্বাসঘাতক কিংবা অকৃতজ্ঞকে কখনোই পছন্দ করে না”।

ঈদুল আযহা নিয়ে কিছু কথা

উপরের লেখা সম্পূর্ণ পড়লে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে কোরবানি সম্পর্কে করানের আয়াত সমূহে কিভাবে কোরবানির গুরুত্বতা বুঝানো হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ কোরবানির মাংস ভাগের নিয়ম । কোরবানির ভাগের নিয়ম জেনে নিন

মুলত কোরআনে অসংখ্য জায়গায় কোরবানি নিয়ে আল্লাহ বিভিন্ন সুরায় আয়াত নাজিল করেছেন।

এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি আয়াত অর্থ সহ এই পোষ্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

আমাদের সকলের উচিত কোরবানি সম্পর্কে খুঁটিনাটি সকল বিষয়ে জানা।

কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত নিয়ে সর্বশেষ

প্রিয় পাঠক আজকের পোষ্টে আমরা কোরবানি সম্পর্কে করানের আয়াত এর বেশ কয়েকটি আয়াত এর বাংলা অর্থ সহ জেনেছি।

আরও পড়ুনঃ ছাগল কোরবানির নিয়ম সহ কোরবানির দোয়া জেনে নি

আশা করছি এই আয়াত সমূহ থেকে আপনি আরও গভীর ভাবে কোরবানির গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ জিলহজ মাসের রোজা কয়টি এবং কোরবানির রোজা রাখার নিয়ম জেনে নিন

এছাড়া কোরবানি এবং ইসলাম সম্পর্কিত সকল বিষয়ে জানতে আমাদের ইসলাম ক্যাটাগরিতে ভিজিট করুন।

কোরবানি সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন আমাদের আগের সবগুলো পোষ্টের মাধ্যমে।

আর সবগুলো পোস্ট একসাথে পাবেন আমাদের ওয়েবসাইটের ইসলাম ক্যাটাগরিতে।

নিয়মিত আমাদের সকল পস পড়তে ওয়েবসাইট ভিজিয় করুন। সর্বশেষ আপডেট পেতে চোখ রাখুন অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।

1 thought on “কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত । ঈদুল আযহা নিয়ে কিছু কথা”

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.