শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া (বিস্তারিত)

হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম ইবাদত হচ্ছে শবে কদরের রাতের ইবাদত। তাই সবার শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া জানা জরুরি।

প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোস্ট “শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া (বিস্তারিত)” এ।

আজকের পোষ্টে আমরা শবে কদরের নামাজের নিয়ম, শবে কদরের নামাজের নিয়ত, শবে কদর নামাজ কিভাবে পড়বে এবিষয়ে বিস্তারিত জানবো।

শবে কদরের নামাজের নিয়ম

হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম পবিত্র শবে কদরের রাতের ইবাদত। তাই এই রাতে নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও করুণা চাওয়া হয়।

তবে, অনেকে মনে করেন যে, শবে কদরের রাতে নামাজ পড়ার আলাদা নিয়ম আছে। প্রকৃত অর্থে শবে কদরের নামাজের আলাদা কোনো নিয়ম নেই।

আরও পড়ুনঃ সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ । লাইলাতুল কদর সূরা বাংলা

অন্য সাধারণ নফল নামাজের মতোই ২ রাকাত করে নফল নামাজ পড়তে হয় শবে কদরের রাতে।

এই গুরুত্বপূর্ণ রাতে নফল ইবাদতের মধ্যে সবথেকে নামাজকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। কারণ, নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহর খুব কাছে যাওয়া যায়।

তাকবিরের সাথে সুরা ফাতিহা সাথে অন্য এক্তি সুরা মিলিয়ে পড়ে রুকু, সিজদাহ এবং দ্বিতীয় রাকাতে আবার সুরা ফাতিহার সাথে অন্য এক্তি সূরা পড়ে রুকু সিজদাহ করে শেষ বৈঠকের মাধ্যম শবে কদরের নামাজ আদায় করতে হয়।

চলুন এক নজরে শবে কদরের নামাজের নিয়ম জেনে নেইঃ

  • নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে করার বিধান নেই। তাই নিয়ত করতে হবে না।
  • আল্লাহু আকবর বলে হাত বেধে ছানা পাঠ করে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়তে হবে।
  • সূরা ফাতিহা পড়ে তার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
  • রুকু আদায় করতে হবে। রুকুতে সুবহানা রব্বি আল আজিম তিনবার পড়তে হবে।
  • রুকু শেষ করে সিজদাহ করতে হবে। দুই সিজদাহের মাঝে কিছুটা থামতে হবে।
  • এরপর আবার আল্লাহু আকবর বলে দ্বিতীয় রাকাতের সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
  • সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে।
  • এবার প্রথম রাকাতের মতো করে রুকু সিজদাহ করতে হবে।
  • সিজদাহের পড়ে আখেরি বৈঠকে দোয়া দরূদ (প্রথমে আত্তাহিয়াতু, তারপর দরূদ শরীফ, সবশেষে দোয়া মাসুরা) পড়তে হবে।
  • এবার সালাম ফেরানোর মাধ্যমে শবে কদরের নফল নামাজ শেষ করতে হবে।

ঠিক একইভাবে যে যত রাকাত সম্ভব পড়তে পারেন। তবে, শুধু মাত্র রাকাত বাড়ানোর জন্য নামাজ আদায় করলে সাওয়াবের থেকে পাপ বেশি হবে।

শবে কদরের নামাজের নিয়ত

ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি যে, শবে কদরের নামাজের কোনো নিয়ত নেই। শুধু মাত্র শবে কদরের নামাজেই নয়, বরং কোনো নামাজেই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার বিধান নেই।

আল্লাহ সব বিষয়ে অবহিত। আমরা যখন নামাজ পড়ার সিদ্ধান্ত নেই তখনই আমাদ্র নামাজের নিয়ত হয়ে যায়। তাই শবে কদরের নামাজের নিয়ত নিয়ে এত চিন্তা না করলেও হবে।

এতকিছুর পরেও অনেকেই শবে কদরের নামাজের নিয়ত জানতে চেয়ে থাকেন। তারা মনে করেন আগের কালের মতো নিয়ত করতেই হবেঃ

প্রচলিত শবে কদরের নামাজের নিয়ত নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

আরবিতে শবে কদরের নামাজের নিয়তঃ

“নাওয়াইতু আন উছা ল্লিয়া লিল্লাহি তায়া লা রাকআতাই ছালাতি লাইলা তিল কদর নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার”।

আরও পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ম

বাংলায় শবে কদর নামাজের নিয়তঃ

“হে আল্লাহ, আমি কাবামুখী হয়ে আপনার সন্তুষ্টির জন্য শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবর”।

আপনি চাইলে উপরে উল্লেখিত নিয়তটি শবে কদর নামাজের নিয়ত হিসেবে পড়তে পারেন।

শবে কদরের দোয়া

পবিত্র শবে কদরের নামাজ শেষে অনেক দোয়া আছে যেকোনো দোয়া পড়তে পারেন। তবে এর মধ্যে সবথেকে বেশি পড়া উচিত

“সুব্‌হানাল্লাহি ওয়াল হাম্‌দু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, লা হা’ওলা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহিল্‌ আলীয়্যিল আযীম”।

এই দোয়াটি অন্তত ১০০ বার পড়া উচিত।

এছারাও এই পবিত্র রাতে নব্জি এক্তি দোয়া বেশি করে পড়তে বলছেন তা হচ্ছেঃ

“আল্লাহুম্মা ইন্না-কা আফু উন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি”।

অর্থঃ “হে আল্লাহ তায়লা, আপনি ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন”। (সুনানে ইবনে মাজা থেকে)

এছাড়াও শবে কদরের রাতে পাঠ করার মতো ১০ টির বেশি দোয়া আছে আমাদের লাইলাতুল কদরের দোয়া – শবে কদরের আমল সমূহ পোষ্টে।

পোস্টটি ভিজিট করে শবে কদরের অন্যান্য সকল দোয়া জনে নিন।

শবে কদরের নামাজ কিভাবে পড়বে

দেখুন, ইতিমধ্যে নিশ্চয়ই বুঝে ফেলা উচিত যে শবে কদরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়। কারণ, ইতিমধ্যে আমরা শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া জেনেছি।

আরও পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ত ।লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ত

মুলত রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বিজোড় তারাবির রাতে শবে কদর হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ২৭ তে তারাবির দিন ই কদর হবে এটা বলা যাবে না।

আরও পড়ুনঃ লাইলাতুল কদরের দোয়া

তবে, সম্ভাবনা বেশি থাকে শেষ ৩ বিজোড় রাতে শবে কদর হয়ে থাক। এর মধ্যে ২৭ শে তারাবির রাতে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

কিন্তু কদরের রাত মনে করে প্রত্যেক বিজোড় রাতে শবে কদরের উদ্দেশ্যে ইবাদত করতে বলা হয়েছে।

তাই বলা হয় যে, রমজানের শেষ দশ দিনের বিজোড় তারাবির রাতে এশার নামাজ শেষ করে তারাবির পরে বেতের নামাজের আগে নফল ইবাদত কর তে হবে।

বিশেষ করে ২৫, ২৭ ও ২৯ তারাবির রাতে। কারণ এই তিন রাতে শবে কদর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।

শবে কদর সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর

লাইলাতুল কদর কখন হয়?

পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বিজোড় তারাবির রাতে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর হয়। এর মধ্যে ২৫, ২৭ ও ২৯ রজনীতে কদর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত?

শবে কদর উপলক্ষে নামাজের কোনও নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা নেই। অনেকে ৮ রাকাত আবার ১২ রাকাত বা ২০ রাকাত পড়ে থাকে।

এমন বাধ্যবাধকতা নেই যে কদরের রাতে নামাজ ই পড়তে হবে। অন্য যেকোনো ইবাদত করলেই সাওয়াব পাওয়া যাবে।

শবে কদরের নামাজ কত তারিখে?

২৪ রোজা অর্থাৎ ২৫ তারাবির রাতে, ২৬ রোজা অর্থাৎ ২৭ তারাবির রাতে, ২৮ রোজা অর্থাৎ ২৯ তারাবির রাতে এই যেকোনো এক রাতে শবে কদর হয়।

তাই সতর্কতা মুলক ভাবে তিন রাতেই বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত।

লাইলাতুল কদর শব্দের অর্থ কি?

লাইলাতুল কদর শব্দের অর্থ হচ্ছে মহিমান্বিত বা পবিত্র রাত বা পবিত্র রজনী। লাইলাতুল অর্থ হচ্ছে রাত আর কদর অর্থ হচ্ছে সম্মান বা মর্যাদা।

অর্থাৎ লাইলাতুল কদর হচ্ছে সম্মানিই বা গুরুত্বপূর্ণ রাত।

শবে কদরের আমল সমূহ কি কি?


বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া।
এশার পরে তারাবির নামাজ আদায় করা।
শেষ রাতে সেহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।
সালাতুত তাসবিহ আদায় করা।
কুরআন তেলাওয়াত করা।
সম্ভব হলে তাওবার নামাজ আদায় করা।
সম্ভব হলে সালাতুল হাজাত আদায় করা।
সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল নামাজ বেশি বেশি আদায় করা।
মসজিদে প্রবেশ করেই ২ রাকাত (দুখুলিল মাসজিদ) নামাজ আদায় করা।
দুই রাকাত করে করে(মাগরিবের পর ৬ রাকাত) আউওয়াবিনের নামাজ আদায় করা।
বেশি বেশি দরূদ শরিফ পাঠ করা।
তাওবাহ-ইসতেগফার, সাইয়্যেদুল ইসতেগফার পাঠ করা।
বেশি বেশি জিকির-আজকার করা।
কোরআন-সুন্নায় বর্ণিত দোয়া পড়া।
পরিবার পরিজন, বাবা-মা ও মৃতদের জন্য দোয়া ও কবর জেয়ারত করা।
সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি বেশি দান-সদকা করা।
সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুয্যাম্মিল, সুরা মুদ্দাসির, সুরা ইয়াসিন, সুরা ত্বহা, সুরা আর-রাহমান, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুলক, সুরা কুরাইশ এবং ৪ কুল পড়া।

শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া নিয়ে সর্বশেষ

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা শবে কদরের নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি।

আশা করছি এই পোস্ট থেকে shobe kodorer namajer niom o doa সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জানতে পেরেছেন।

কদর ও ইসলাম সম্পর্কিত আমাদের অন্যান্য সকল পোস্ট পড়তে Islamic info Category ভিজিট করুন।

সর্বশেষ আমাদের আপডেট জানতে চখ রাখুন অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha  এ।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.