২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম (নমুনা বক্তব্য সহ)

বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে ২১ শে ফেব্রুয়ারি এক স্মরণীয় দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়।

প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোস্ট “ ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম (নমুনা বক্তব্য সহ) এ।

আজকের পোষ্টে আমরা ২১ শে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস, ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কর্মসূচী সমুহ, ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম এবং ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে একটি নমুনা বক্তব্য দেখব।

২১ শে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস

১৯৪৮ আলে ভারত পাকিস্তান ভাগের পর যখন তৎকালীন পুরব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের জন্ম হয় তখন থেকেই মূলত ভাষা, মৌলিক অধিকার সহ সব দিক থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে জুলুমের শিকার হত পূর্ব পাকিস্তানের জনগন।

এরপর ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

২১ শে মার্চ তিনি উর্দু ই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা বলে মন্তব্য করেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

আরও পড়ুনঃ ২১ শে ফেব্রুয়ারি বক্তৃতা দেওয়ার নিয়ম (নমুনা বক্তব্য সহ)

পরবর্তীতে তিনি একই কথা বলেন ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর থেকেই এই বিষয় নিয়ে ছাত্রদের রোষানলে পরেন তিনি।

তার এই মন্তব্যের জেরে ছাত্র সহ সকল সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসেন।

এভাবে প্রতিবাদ চলতে থাকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত। এরপর ৫২  এর ফেব্রুয়ারিতে তখন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অপরাধে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালায় পশ্চিম পাকিস্তানের পুলিশ বাহিনী।

সেই গুলিতে শহীদ হন রফিক, শফিক, জব্বার, বরকত , রফিক সহ নাম না জানা আরও অনেকে।

এরপর থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় ভাবে শহীদ দিবস এবং ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।

২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কর্মসূচী সমুহ

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় ভাবে সরকারি ভাবেই জাতীয়  শহীদ দিবস পালন করা হয়।

এছাড়াও ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ ২১ শে ফেব্রুয়ারিক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে এই দিনকে বাংলাদেশে সহ সারা বিশ্বে গভীর শ্রদ্ধার সাথে পালন করা হয়।

জাতীয় ভাষা শহীদদের সম্মানে এই দিন বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়।

এর মধ্যে , কোরআন থেকে তিলাওয়াত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, কালো ব্যাচ ধারণ, আলোচনা সভা সহ এমন বেশ কিছু কর্মসূচী গ্রহন করা হয়।

আরও পড়ুনঃ একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা প্রতিযোগিতা লেখার নিয়ম (নমুনা রচনা সহ)

এইদিন দেশের সকল সরকারি বেসরকারি সহ সকল প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনির্মিত রাখা হয়। এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রচনা প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা, একক অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা সহ বিভিন্ন আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জনসাধারণ এবং রাজনৈতিক ভাবেও ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য, নীরবতা পালন, কালো ব্যাচ ধারণ সহ আরও অনেক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়।

২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম

একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে স্কুল, কলেজ সহ বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত সভায় আমাদের প্নেকের ২১ শে ফেব্রুয়ারির উপস্থিত বক্তব্য কিংবা ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ভাষণ দেওয়া লাগে।

কিন্তু আমরা অনেকেই ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে সবকিছু জানলেও ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য দিতে পারি না।

তাই আজকে আমরা নমুনা বক্তব্য সহ একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার গোটা নিয়ম জানবো।

চলুন, ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম জেনে নেওয়া যাকঃ

আপনি যদি সবার থেকে আলাদা এবং স্পেশাল অর্থাৎ বক্তব্যে শতভাগ ভালো করতে চান তাহলে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবেঃ 

আরও পড়ুনঃ ২১ শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস

  • একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে কিছু বলতে চাইলে এই বিষয়ে পুরনাঙ্গ ধারণা থাকতে হবে।
  • বক্তব্য দেওয়ার আগে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাজিয়ে কয়েকবার দেখে নিতে হবে।
  • ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ এর সমস্ত ঘটনা ২ – ৩ প্যারায় তুলে ধরতে হবে।
  • বলার ভঙ্গিমা এমন হবে যে শ্রোতা পরবর্তী কথা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে থাকে।
  • বলার ক্ষেত্রে থেমে থেমে একটু সময় নিয়ে বলতে হবে।
  • সাল এবং তারিখ স্পষ্ট ও নির্ভুল ভাবে বলতে হবে।
  • কোনরকম জড়তা রেখে কথা বলা যাবে না। এবং মাইকের কাছে মুখ নিয়ে বলতে হবে।
  • মনের ভিতর থেকে আবেগ ফুটিয়ে তুলতে হবে।

কেউ যদি ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার আগে উপরের টিপস গুলি ফলো করে তাহলে আমি নিসচিত যে সবার থেকে তার বক্তব্য হবে সুন্দর ও সম্পূর্ণ আলাদা।

স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য ভাষা আন্দোলন ছিলও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায় একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকা উচিত।

২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে নমুনা বক্তব্য

অনেকেই অনলাইনে ২১ শে ফেব্রুয়ারির আগের দিন একটি রেডি বক্তব্য খুঁজি। অনেকে আবার ২১ শে ফেব্রুয়ারি বক্তব্য PDF আকারে খুঁজি।

তাই আপনাদের কথা বিবেচনা করে এখানে একটি ২১ শে ফেব্রুয়ারির বক্তব্য দিয় দিচ্ছি।

আপনি এই বক্তব্যটি কপি করে কিংবা এখান থেকে নিয়ে এভাবেই বা এডিট করে বক্তব্য হিসেবে দিতে পারেন।

“ওরা না থাকলে ভাষা হতো না বাংলা, পেতাম না আমরা স্বাধীনতা”

আজ জাতীয় শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি দেশের সেইসব কৃতি সন্তানদের যারা মাতৃভাষার জন্য তাদের জীবন বিসর্জন দিয়ে গেছেন।

১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন করে পাকিস্তানি সরকারের হাতে জীবন দেন রফিক, শফিক, জব্বার, বরকত সহ নাম না জানা আরও অনেকে।

তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের তখন আরও এক ধাপ এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।

মঞ্চে উপস্থিত সকলের প্রতি আমার সালাম, আসসালমুআলাইকুম।

তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ এবং ২৪ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোষণা দেন

“উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা”তখন উপস্থিত শিক্ষার্থীরা চরম বিরক্তি প্রকাশ করে।

১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় এসে মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ -র কথার পুনরাবৃত্তি করেন।

তখন ছাত্ররা প্রতিবাদে ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল সহ বিভিন্ন সভার সিদ্ধান্ত নেন। সরকারের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ রাজ পথে নামলে পুলিশ তাদের উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। যার ধারাবাহিকতায় ছাত্রদের আন্দোলনটি জনমানুষের আন্দোলনে রুপ নেয়।

মাতৃভাষা মায়ের মুখের ভাসাকে সম্মান করা, বুকে ধারণ করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানাতে হবে। জানাতে হবে মাতৃভাষার জন্য শহীদদের আত্মত্যাগের গৌরবময় ইতিহাস।

সেদিন বীর বাঙ্গালীদের জীবনকে বিসর্জনের এই অর্জনকে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। যা বাংলার বীর সন্তান্দের জন্য অনেক বেশি সম্মান বয়ে আনে।

এখানেই আমি আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।

একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কিত FAQS

জাতিসংঘ কত সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে?

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ ২১ শে ফেব্রুরিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি কতজন শহীদ হন?

পরিচয় পাওয়া মতে সর্বশেষ জানা যায় যে। অইদিন ৯ জন মানুষ শহীদ হন। এরা হলেনঃ

আবুল বরকত
আবদুল জব্বার
রফিকউদ্দিন আহমদ
শফিকুর রহমান
সালাম 
সালাউদ্দীন
অহিউল্লাহ
আবদুল আউয়াল
অজ্ঞাত বালক

এর মদ্ধে প্রথম বেশ কয়েকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র ছাত্র ছিলন।

এবং শেষের দুইজনকে ২২ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয়। (অনলাইন থেকে সংগ্রহীত)

“উর্দু ই হবে একমাত্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা” কথাটি প্রথমে কে এবং কোথায় বলছিলেন?

১৯৪৮ সালের ২১ শে মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, “উর্দু ই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা”। 

১৯৪৮ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি কি বার ছিল?

বৃহস্পতিবার ছিল ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি দিনটি।

১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলা কত সাল ছিল?

১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বাংলা মাসের বাংলা ১৩৫৮ সনের ৮ ফাল্গুন ছিল।

অর্থাৎ ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ক্যালন্ডারের হিসাবে ১৩৫৮ সাল ছিল।

২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে সর্বশেষ

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা ২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম ও নমুনা বক্তৃতা দেখেছি।

আশা করছি, এই পোস্ট থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস ও উপস্থিত বক্তব্য দিতে বেশ উপকৃত হবেন।

একুশে ফেব্রুয়ারি সহ আরও সকল জাতীয় দিবস সম্পর্কে আমাদের অন্যান্য সকল পোস্ট পড়তে National Category ভিজিট করুন।

নিয়মিত আমাদের সকল পোস্ট পড়তে ওয়েবসাইট Dainik Kantha ভিজিট করুন।

সর্বশেষ আপডেট পেতে ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ চোখ রাখুন।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.