এ বছর ফিতরা কত টাকা ২০২৫ । ফিতরা দেওয়ার নিয়ম

Last Updated on 4 weeks by Shaikh Mainul Islam

জাকাতুল ফিতর বা ফিতরা হচ্ছে ধনসম্পদ প্রাপ্তদের ধনসম্পদের প্রতি গরীবের হক বা প্রাপ্য। আর এ বছর ফিতরা কত টাকা ২০২৫ ও ফিতরা দেওয়ার নিয়ম জানা জরুরি।

প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোষ্টে “এ বছর ফিতরা কত টাকা ২০২৫ । ফিতরা দেওয়ার নিয়ম সহ বিস্তারিত” এ।

আরও পড়ুনঃ ফিতরা কত টাকা ২০২৫ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আজকের পোষ্টে আমরা ফিতরা কাকে বলে, ফিতরা দেওয়ার সঠিক নিয়ম, ফিতরা দেওয়ার সঠিক সময় ২০২৫, ফিতরা যাদের পর ওয়াজিব, ফিতরা কাদের দিতে হবে সহ ফিতরা সম্পর্কিত সবকিছু জানবো।

ফিতরা কাকে বলে

ফিতরা বা জাকাতুল ফিতরা হচ্ছে, ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী ঈদুল রোজার ঈদ উপলক্ষে গরীবদের মধ্যে অর্থ সম্পন্ন রোজাদারদের করা দানকে বোঝায়।

আরও সহজ ভাবে বললে, প্রত্যেক রোজাদার মুসলিম রমজান মাসের সম্পূর্ণ রোজা পালনের শেষদিকে রোজার পূর্ণতা বাড়াতে এবং ঈদের দিন গরীবদের মিষ্টি মুখ করার একটু ভালো খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বা খাবার দান করাকে বোঝায়।

আরও পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ম

প্রত্যেক বছর ইসলামিক হিসাব অনুযায়ী দেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ ফিতরার টাকার পরিমাণ প্রকাশ করে থাকে।

সেই হিসেব অনুযায়ী দেশের প্রত্যেক ব্যক্তি ফিতরার টাকা গরীব দুঃস্থদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে থাকেন।  আশা করছি ফিতরা কি ও কাকে বলে তা এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছেন।

ফিতরা দেওয়ার সঠিক নিয়ম

আপনি যদি তুলনামুলক মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্য বিত্ত হয়ে থাকেন তাতেও আপনার ফিতরার টাকা দিতে হবে। এবং যেসব ব্যক্তি ফিতারার টাকা পাওয়ার প্রাপ্য তাদেরকেই ফিতরার টাকা দিতে হবে।

নবীজির সময়ে ফিতরা দেওয়া হতো খাদ্য দিয়ে। পাচ প্রকার ফল (যব – খেজুর – কিশমিশ – পনির – গম) দিয়ে ফিতরা দেওয়া হতো।

আর পরিমাপ হতো এর যেকোনো একটি খাদ্যের ১ সা (যা আজকের পরিমাপে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বোঝায়) দিতে হবে। তবে শুধু যে খাদ্য -ই ফিতরা দিতে হবে এটা বলা হয়নি।

আরও পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ত ।লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ত

অর্থাৎ আপনি চাইলে, আমাদের দেশের প্রধান খাবার যেমন হতে পারে চাল। ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম চালের বাজার মূল্য হিসেবেও ফিতরা দিতে পারেন।

এক্ষেত্রে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন যে ফিতরা কি টাকা দিয়ে আদায় হবে কি না?

হ্যাঁ, ফিতরা টাকা দিয়ে আদায় হবে। প্রত্যেক বছর রমজান মাসের শেষ দিক থেকে বিশেষ করে শেষ দুই রমজানে শুরু করে রোজার ঈদের নামাজের আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ফিতরা আদায় করতে হবে।

এ নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও এটাই সর্বাধিক সঠিক তথ্য। আশা করছি বুঝতে পারছেন।

ফিতরা দেওয়ার সঠিক সময় ২০২৫

ফিতরা দেওয়ার সঠিক সময় হচ্ছে রমজান মাসের শেষের দিকে বিশেষ করে শেষ দুই রমজানে। এবং ফিতরার টাকা দেওয়ার শেষ সময় হচ্ছে রমজানের ঈদের নামাজের আগ পর্যন্ত।

রমজান মাস ব্যতিত সময়ে ফিতরা দিলে সেই দান সাধারন দান হিসেবে বিবসেচিত হবে।

আর রমজান মাসে দান করলে ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুনঃ লাইলাতুল কদরের দোয়া

ইসলামে ফিতরা দেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট আদেশ রয়েছে। আর এই ফিতরা আদায়ের ফজিলত ও অনেক অনেক বেশী। তাই অবশ্যই ফিতরা আদায় করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ রোজার ঈদের নামাজের নিয়ম । ঈদুল ফিতরের নামাজ সম্পর্কিত বিস্তারিত

ঈদের নামাজের পরেও ফিতরার টাকা দেওয়া যাবে। তবে সেক্ষেত্রে সাধারণ দানের সাওয়াব হবে। ফিতরা আদায়ের সাওয়াব হবে না।

তাই উচিত, শেষ রমজানের দিন এবং ঈদের নামাজের আগেই ফিতরার টাকা আদায় করা উচিত। আশা করছি ফিতরা দেওয়ার সঠিক সময় কখন তা বুঝতে পারছেন।

ফিতরা কাদের দেওয়া বাধ্যতামূলক/ ওয়াজিব

ফিতরা আদায় করতে হয় আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। এবং ফিতরা দেওয়া বেশিরভাগ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। ধরেন, আপনি একজন মুসলমান।

কাজ করে খেলেও স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চলছে। এবং প্রতিদিনের ইনকাম থেকে কিছু টাকা হলেও বেঁচে যায় এমন সব পরিবারের জন্য (পরিবারের সব সদস্যের উপর) অবশ্যই ফিতরা আদায় করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  জাকাত কি, কাকে বলে?  জাকাত কাদের উপর ফরজ? বিস্তারিত জেনে নিন

পরিবারে নাবালেগ এবং প্রাপ্ত বয়স্ক সবার জন্য ফিতরা আদায় করতে হবে।

এবং ঐ পরিবারের অধীনে যদি কোনও দাসী বা পরাধীন কেউ থেকে থাকে তার জন্যেও ফিতরা আদায় করতে হবে।

অর্থাৎ এক পরিবারে মোট যতজন মানুষ (ছোটবড়, বুড়া- যুবক) তত জনেরই মাথা হিসাব করে ফিতরা দিতে হবে।

এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে নির্ধারিত সর্বনিম্ন  থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য করে সকল ব্যক্তির জন্য ফিতরা আদায় করতেই হবে।

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে

নিতান্ত গরীব, ঈদের দিন একটি ভালো কিছু খাওয়ার সক্ষমতা নেই, ভিক্ষা করে সংসার চলে।

অর্থাৎ কাজ করতে পারেন না, নিঃস্ব এমন সব লোক নিঃসন্দেহে ফিতরার টাকা পাওয়ার যোগ্য।

তবে, আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে তুলনামুলক একটু কম গরীব ও থাকে তাহলে আত্মীয়দের মধ্যে ফিতরার টাকা দেওয়ার যাবে।

এক্ষেত্রে শুধু ফিতরার টাকা নয় বরং কিছু বেশি দেওয়া উচিত এবং উত্তম।

আরও পড়ুনঃ  রহমত মাগফিরাত নাজাত এর দোয়া ও করনীয়

যে ব্যক্তি ফিতরা দিবেন তার ভাই কিংবা বোন অথবা উভয় যদি গরীব বা অসচ্ছল হয় তাহলে তাদেরকেও ফিতরার টাকা দেওয়া যাবে।

আরও পড়ুনঃ  লাইলাতুল কদর সূরা

আর ফিতরা গরীবদের প্রতি তুলনামুলক ধনীদের কোনও করুণা নয় বরং ইসলাম থেকে বর্তিত দায়িত্ব।

তাই ফিতরা আদায় দাতাকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফিতরার টাকা দিতে হবে।

অনেকে মনে করেন আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কাউকে ফিতরার টাকা দেওয়া যাবে না। অথচ ইস্লামে উল্লেখ আছে যে,

“কোনও ব্যক্তির আত্মীয় স্বজন যদি ফিতরার যোগ্য হয়য় তাহলে তাকেই ফিতরার টাকা দিতে হবে”।

এ বছর ফিতরা কত টাকা ২০২৫

এ বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৯৭০ টাকা পর্যন্ত।

অর্থাৎ, এ বছর মানে ২০২৫ সালে ফিতরার পরিমাণ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৯৭০ টাকা দিতে হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম এ অনুষ্ঠিত সভা থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পোষ্টের মূল বিষয় এ বছর ফিতরা কত টাকা ২০২৫ অর্থাৎ এবারের ফিতরা কত টাকা তা জেনে নিলাম।

আরও পড়ুনঃ মাহে রমজানের শুভেচ্ছা বার্তা ।রমজানের চাঁদ দেখার দোয়া

আপনি চাইলে ফিতরার টাকা সর্বনিম্ন নির্ধারণী হিসাব করে ফিতরা আদায় করতে পারেন।

তবে অবশ্যই আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বনিম্ন সীমা থেকে বেশী ফিতরা আদায় করা উত্তম।

ফিতরা সম্পর্কিত FAQS

ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে এ বছর ফিতরা কত টাকা ২০২ নির্ধারণ করা হয়েছে?

এ বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে ফিতরা ধরা হয়েছে জনপ্রতি জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফিতরা মূলত কি? ফিতরা কাকে বলে?

সঠিক হচ্ছে সাদাকাতুল ফিতর। যাকে আমাদের দেশে ফিতরা বলা হয়।

দীর্ঘ এক মাস রমজানে ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত ভুল শুধরে রমজানের পূর্ণ সাওয়াব পাওয়ার আশায় ফিতরা আদায় করতে হয়।

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে ?

ফিতরা পাবে অত্যন্ত গরীব, দুস্থ, ভিক্ষা করে কারণ কাজ করার সক্ষমতা নেই।

এমন লোকেরা ফিতরার অর্থ বা টাকা পাওয়ার যোগ্য।

এছাড়া গরীব অসহায় আত্মীয় দের ফিতরা দেওয়া অতি উত্তম কাজ। সে ভাই কিংবা বোন কিংবা যেকোনো স্বজন হতে পারে।

সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা কি ওয়াজিব?

হ্যাঁ। সদকাতুল ফিতর হচ্ছে একটি আর্থিক ইবাদত।

ঈদুল ফিতরের আগে কেউ  জন্ম গ্রহণ করলে কিংবা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার উপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

সাদাকাতুল ফিতর আর ফিতরা কি একই জিনিস?

হ্যাঁ। সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা একই জিনিস।

দীর্ঘ এক মাস রমজান ভেঙ্গে পানাহার করায় অতি গরীবদের ভালো কিছু খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে ইসলামে সামর্থ্যবানদের এই দায়িত্ব দিয়েছে।

সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা কেন দিতে হয়?

দীর্ঘ এক মাস রোজা রেখে রোজা সমাপ্ত করা হয়।

দীর্ঘদিন রোজার মধ্যে ইচ্ছা কৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত সকল ভুল মাফ করে রমজানের পূর্ণ সাওয়াব পাওয়ার জন্য ফিতরা আদায় করা হয়।

আত্মীয় স্বজনদের ফিতরার টাকা দেওয়া যাবে?

নিঃসন্দেহে। যদি ফিতরা আদায় কারী ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ গরীব থাকে তাহলে ফিতরার টাকা তাকে দেওয়া অতি উত্তম।

এতে আত্মীয়ের হক আদায় হবে আবার ফিতরা আদায় হবে।

এ বছর ফিতরার টাকা ২০২৫ নিয়ে সর্বশেষ

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা e bochor fitra koto taka 2025 এবং ফিতরা দেওয়া ও নেওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি।

যেহেতু প্রত্যেক বছর মূলত ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফিতরার টাকার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়।

তাই ফিতরা আদায়ের নিয়ম বা পরিমাণ নিয়ে আমাদের খুব বেশী ঝামেলা পোহাতে হয় না।

শুধু মাত্র প্রত্যেক বছর রমজান মাসের শেষ দিক থেকে শুরু করে রোজার ঈদের নামাজ আগ পর্যন্ত পরিবারে যতজন সদস্য সবার ফিতরারা টাকা আদায় করে দিলেই হয়ে যায়।

এ বছর ফিতরা কত টাকা ২০২৫ সে সম্পর্কে আরও কিছু জানা থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

ফিতরা এবং ইসলাম সম্পর্কিত আমাদের সকল পোস্ট পড়তে Islamic info Category ভিজিট করুন।

চোখ রাখুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।

4 thoughts on “এ বছর ফিতরা কত টাকা ২০২৫ । ফিতরা দেওয়ার নিয়ম”

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.