Last Updated on 10 months by Shaikh Mainul Islam
রমজানে মাস মুসলিমদের কাছে বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি মাস। এই মাস আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অনুকম্পা নিয়ে
আসে মুসলিম উম্মাহর প্রতি। রমজানে অত্যধিক নেক আমল ও জিকির-আজকার করা উচিত যার লাভ অনেক।
এতে বিপুল পরিমাণে সওয়াব লাভ করা যায় সাথে পূর্বের পাপ মাফ করে নেওয়া যায়।
তবে রমজান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে, যা থেকে বিরত থাকা একান্ত দরকার। এখানে সে ধরনের কিছু বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হলো। রমজান মাসে এগুলো
মেনে চললে আমাদেরকে আল্লাহ্র ক্ষমা পাওয়া সবথেকে সহজ হবে।
১/ রমজানে দেরিতে ইফতারি করা যাবে না…
আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সা.) তার উম্মতদের দেরিতে ইফতার করতে নিষেধ করেছেন। মুহাম্মদ(সাঃ) বলেছেন “সময়মতো দ্রুত ইফতার করলে উম্মাহ কল্যাণের ভেতর থাকবেন”।
২/ রমজানে সেহরি না খাওয়া
সেহরি অনেক বরকতময় একটি খাবার। রাসুল (সা.) সাহরি খেতে অনুপ্রাণিত করেছেন। সাহরি খেতে না পারলে অন্তত অল্প কিছু খেয়ে হলেও রোজার নিয়ত করাআ অতি উত্তম।
৩/ কেনা-কাটায় ব্যস্ত হওয়া
রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোনোভাবে হেলায়-খেলায় নষ্ট না হয় রমজানের এই শ্রেষ্ঠ সময়, সেদিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে।
অনেকে রমজানের শেষ দিনগুলোতে ঈদের মার্কেট করতে মেতে ওঠে। অথচ এমন না করা উচিত; বরং শেষ মুহূর্তের আমলে মগ্ন থাকা অধিক উত্তম।
৪/ মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ না করা
সত্য মানুষকে মুক্তি দেয় এবং মিথ্যা ডেকে আনে ধ্বংস।মুসলমানদের অন্যতম একটি দায়িত্ব ও কর্তব্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা।
এছাড়াও সব ধরনের পাপ থেকে দূরে থাকা চাই সবসময়। এটা মুমিনের দৈনন্দিন কাজ। তবুও রমজানে বেশি সতর্কতা থাকা একান্ত দরকার।
৫/ অপচয় ও অপব্যয় না করা
অপচয় বা অপব্যয় করা খুবই বাজে এবং গর্হিত কাজ বা অভ্যাস। পবিত্র কোরআনে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে অপচয়কারীকে।
আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অসংখ্য স্থানে অপচয় করতে নিষেধ করেছেন।
তবে এর মানে এই নয় যে, অপচয় রোধ করতে গিয়ে দরকারের কম খরচ করা।
মহান আল্লাহ কখহনই কোনভাবেই কৃপণদের পছন্দ করেন না।
অপচয় ত্যাগ করার অর্থ হলো দরকার মতো মধ্যপন্থা অবলম্বন করা।
৬/ হক আদায় না করে কোরআন খতম করা
কোরআন তেলাওয়াতের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছ। পবিত্র কোরআনে কারিম অর্থসহ বুঝে বুঝে খতম করা বা তেলাওয়াত করা অতি উত্তম।
খেয়াল রাখতে হবে যে, কোরআন তেলাওয়াতের সময় যেন কোনভাবেই কোরআনের হক নষ্ট না হয়। তাড়াহুড়ো কিংবা অসুন্দরভাবে খতম করা কখনোই উচিত না।
৭/ জামাতের ফরজ আদায়ে অলসতা না করা
রমজানে রোজাদার- রা সব কাজকর্ম স্থগিত রেখে দূরদূরান্ত থেকে নামাজের সময় মসজিদে আসেন নামাজের জন্য। যাত্রা করেন।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে সমবেত হয়ে জামাতে নামাজ আদায় করেন।
এভাবে রোজাদার নামাজিরা মসজিদে নামাজ পড়তে আসার মধ্য দিয়ে তাঁদের পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। আর এতে ২৭ গুণ বেশি সওয়াব বা ফায়দা পাওয়া যায়।
তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন নামাজ জামাতে আদায়ে কখনোই অলসতা তৈরি না হয়।
৮/ বেশি বেশি খাওয়া না খাওয়া
যা পরে স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে, সাহরি ও ইফতারে কিছুতেই এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত না। আবার এত অল্প আহারও করবে না যে রোজা রাখতে কষ্ট বা সমস্যা হয় বা বেগ পেতে হয়।
কেননা স্বাস্থ্য-সচেতনতাও ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ একটি আলচ্চ বিষয়। আল্লাহর ইবাদত করার জন্য শক্তি ও স্বাস্থ্য দুটিরই খুব প্রয়োজন। তাই সুস্থ-সবল মুমিন আল্লাহর অধিক থেকে অধিক প্রিয়।
আরও পড়ুনঃরমজানে সাহ্রি, ইফতার ও রাতের খাবারে যা থাকা উচিত
৯/ রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত করা না করা
রিয়া বলতে বোঝায় লোক দেখানো ও আত্মপ্রদর্শনকারী আমল বা ইবাদত বা কাজ। রিয়া করা শরিয়তে সম্পূর্ণ ভাবে হারাম।
শিরক দুই প্রকার। ১) শিরকে আকবার বা বড় শিরক। ২) শিরকে আসগার বা ছোট শিরক।
এই রিয়া হলো ছোট শিরক। ফলে রিয়া থেকে অবশ্যই মুমিনদের মুক্ত থাকতে হবে।
১০/ বেশি বেশি না ঘুমানো
অনেকের ধারণা, বেশি বেশি ঘুমালে শরীর তত বেশি ভালো থাকে। অথচ একজন সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন সাত ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট। এরচেয়ে বেশি সময় ঘুমালে, তা শরীরের নানা সমস্যার কারণ হতে পারে।
বেশি ঘুম মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথার অন্যতম কারণ।
এমনকি দেখা দিতে পারে ডায়াবেটিসের মতো বড় অসুখও। তাছাড়া বেশি ঘুম হতে ডিপ্রেশন বা হতাশার অন্যতম কারণ।
১১/ পণ্যের দাম বাড়াতে সংকট তৈরি না করা
ভোক্তাদের জিম্মি করার কোনো বিধানে নেই।না আছে আইনে, না আছে ধর্মে।
কেউ তা করে ‘বিত্তশালী’ হয়ে গেলেও কোনো লাভ নেই তাতে। তার অবৈধ সম্পদ জাহান্নামে যাওয়ার একমাত্র অন্যতম কারণ হবে।
দুনিয়ার জীবনেও তার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে অবৈধ সম্পদ। উপরন্তু উপার্জন হারাম হওয়ার কারণে নামাজ, রোজা, হজ, দান-সদকা কিছুই আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হবে না।
মজুদদারি ও কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে কোটিপতি হলেও তার জন্য দারিদ্র্য অবধারিত,(ইসলাম)।
১২/ অশ্লীল ছবি-নাটক ইত্যাদি না দেখা
বর্তমানে প্রায় সব রকম নাটকের পূর্ণতা দেওয়া হয় নারীদের মাধ্যমে। নারী দিয়ে নাটকগুলো সাজানো হয় নারীকে আকর্ষণীয় করে। আর নারীদের ছবি দেখা ইসলামে স্পষ্ট হারাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব নাটকের উদ্দেশ্য শিক্ষা, ইসলাম প্রচার কিংবা উপদেশ গ্রহণ এর কোনোটাই নয়।
বরং খেল-তামাশা ও অবৈধ আনন্দ উপভোগ করা। অতএব, এসব দেখা থেকে সব সময় বেঁচে থাকা মুমিনদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
আরও পড়ুনঃ গরমে ঠাণ্ডা পানি খাওয়া উপকার নাকি ক্ষতি
১৩/ বেহুদা কাজে রাত না জাগা
রাতে দেরি করে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন নবীজি মুহাম্মদ (সা.)। মুহাম্মদ (সা.) এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর তাগিদ দিতেন সবসময়।
তবে গুরুত্বপূর্ণ ও কল্যাণজনক কাজে রাত জাগতে নিরুৎসাহিত করা হয়নি ইসলামে।
তাই কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কারণে রাত জাগতে কোনো মানা নেই।
তবে অযথা গল্প-গুজব, অহেতুক নেট ব্রাউজিং বা কোনো গুরুত্বহীন কাজে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। বরং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া খুবই ভালো।
১৪/ দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন না থাকা
ইবাদতের মাস রমজানে বেশি বেশি আমল করা উচিত। কিন্তু আমরা অনেকেই দুনিয়াবি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এটা কখনোই কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি তেলাওয়াত, দোয়া-ইস্তেগফার করা উচিত।
হাদিসে এসেছে, “ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ তায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে”। (জামিউস সাগির- হাদিস : ৩৯৩৩)
১৫/ বিশেষ করে রমজানে বিদআত না করা
ইসলামের পরিভাষায়, দ্বিনের মধ্যে এমন বিষয় সৃষ্টি করা,। যা রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না। বরং পরে তা উদ্ভাবন করা হয়েছে এমন বিষয়কে বিদআত বলা হয়।
বিদআতের বিরুদ্ধে মহানবী (সা.) অত্যন্ত কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
নবীজি বলেন, “বিদআত মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। এছাড়া কিয়ামতের দিন বিদাআতকারী চরমভাবে লাঞ্ছিত হবে। তাই সব সময় বিদআত থেকে মুমিনদের দূরে থাকতে হবে।
আরও পড়ুনঃ “সালাতুল হাজত” সালাত আদায়ের উপকার ও নিয়ম
আল্লাহ্ উপরোক্ত সকল বিধিনিষেধ রমজান মাস সহ সবসময় মেনে চলার তৌফিক দিন্ আমীন।
দৈনিক কণ্ঠ এর সকল ব্লগ সবার আগে পেতে চোখ রাখুন দৈনিক কণ্ঠ অফিসিয়াল ফেসবুক ব্লগ পেজে।
6 thoughts on “রমজানে যেসব কাজ করবেন না”