Last Updated on 10 months by Shaikh Mainul Islam
‘আমার জীবনের সব আশা শেষ, আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমার সব স্বপ্ন মাটি হয়ে গেলো’। দৈনন্দিন জীবনে এমন কথা শুনতে পাওয়া যায় আমাদের চারপাশে। প্রকৃত অর্থে এসব কথার সত্যতা কতটুকু?
আসলে আশা কি কখনও শেষ হওয়া সম্ভব? স্বপ্ন শেষ হয়ে যেতে পারে কখনো? আশা/ স্বপ্ন কি? ঘূমিয়ে দেখা বিষয়টাই স্বপ্ন অন্যদিকে যা জীবনে করতে চাই এটা প্রকৃত স্বপ্ন। আর প্রকৃত স্বপ্নকেই আশা বলা হয়।
এককথায়, মানুষ স্বপ্ন দেখে ঘুমিয়ে এবং আশা করে জেগে জেগে। ঘুম শেষ তো স্বপ্ন শেষ, অন্যত্র আশা থাকে অমর।
নিজের অর্জনই আশা, অন্যের মাধ্যমে অর্জন করতে চাওয়াটা প্রত্যাশা। মানুষের জীবনে আশা কখন শেষ হয়?
আশা এমনই এক জিনিস, মৃত্যু ব্যতিত মানুষ এটিকে বাদ দিয়ে চলতে পারে না।
আশা-র কোনো শেষ নেই। আশাহীন জীবন হাহাকার মরুভূমির মত।
একটি আশা পূরণ না হলে আমরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরি, হয়ে পরি হতাশ। আসলে এর মাধ্যমে কি কখনো আশা শেষ হয়ে যায়?
কখনোই না। বরং আশা করে এগিে যাওয়ার পথ আরও মজবুত হয়। আবার ঘুড়ে দাড়ায় সবাই, একটা সময় পরে।
আবার নতুন রূপে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। শুরু করে আশা পূরণের কর্ম।
সবথেকে অদ্ভুত সত্য হলো, মানুষ স্বপ্ন ছাড়া কখনোই বাঁচতে পারে নাহ্। পাগলেরও স্বপ্ন শুধু থাকে এলোমেলো। কিন্তু স্বপ্ন নেই অথচ মানুষ বেঁচে আছে এটি কখনো সম্ভব নাহ্।
সুস্থ থেকে জীবনকে জীবনের মতো চালিয়ে নিতে হবে যেভাবই চলুক
প্রতিটি সুস্থ সবল মানুষের জীবনে স্বপ্ন আশা থাকে সজ্জিত। কিন্তু সব পূরণ না হলেও দিন শেষে আগামীকাল চলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়।
তুলনামূলক দুর্বল চিত্তের মানুষ বেশি ভাবে, তারা আর স্বপ্ন দেখবে নাহ্। হয়তো স্বপ্নের পরিমাণ কমে, তবু শেষ হয় না। এটা কখনো বেঁচে থাকতে কারোর পক্ষে সম্ভব না্।
কষ্টে চূর্ণ হয়ে যাওয়া মানুষটিরও হৃদয়ের এক কোণে থেকে যায় স্বপ্ন পূরণের লালসা। থেকে যায় ম্যাজিকালি হলেও স্বপ্নটা পূরণ হোক।
মানুষ জীবনকে বড্ড ভালোবাসে বলেই শেষ হয়েও হয়না শেষ। স্বপ্নকে বাস্তব করতে চাইলে স্বপ্নকে যত্ন নিতে হয়। করতে হয় লালন। স্বপ্নানুযায়ী যোগ্যতা, সামর্থ্য, পরিপক্বতার দরকার সব স্বপ্ন আশা পূরণেই।
উচ্চাশা হতাশার অন্যতম কারণ, অন্যদিকে মধ্যম পর্যায়ের আশা পূরণের পথ পর্যন্ত তুলনামূলক সহজ।
আশা ভঙ্গের কারণ, পোহাতে সবাই পারে নাহ্। তাই ব্যক্তির যোগ্যতানুযায়ী স্বপ্ন দেখা ভালো।
যোগ্যতা, দৃঢ় মনোবল, প্রচেষ্টা এবং পরিশ্রম আশা পূরণের মূল মন্ত্র। পৃথিবীতে হাজার হাজার মানব রয়েছেন যারা নিজ উদ্যোগে মাটি থেকে আকাশ ছুয়ে দেখিয়েছেন।
সাহস-ই হচ্ছে মূলত ভালোবাসা। আশা, স্বপ্নের প্রতি ভালোবাসা। নিজেকে ভালোবাসতে পারলে তবেই আশা পূরণে যত্নবান হওয়া যায়।
নিজেকে না চিনলে কখনোই নিজেকে ভালোবাসা যায় না। নিজেকে ভালোবাসতে না পারলে নিজের স্বপ্ন পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয়না।
নিজেই নিজেকে ভালোবেসে তবেই সফলতা ধরা যায়। কিন্তু কখনোই আত্মকেন্দ্রিক বা স্বার্থপর হয়ে নয়।
জীবনের যে সময়তে নিজেকে চিনতে পারবো তখনই এর উত্তম সময়।
নিজের মাধ্যমে কি হবে। এটা উপলব্ধি করতে পারার পর থেকে, আমার মনে হয় ঝালাই এবং যাচাইয়ের জন্য সময় নষ্ট না করাই শ্রেয়।
থামতে হবে জীবনে, তবে তা শুধু বিশুদ্ধ বাতাস নেওয়ার জন্য। যতটুকু সম্ভব করতে হবে সবসময়।
নিজের স্বপ্ন পূরণের মাঝে নিজেকে নিজে মোটিভেটেড করা নিজেকে বোঝানো এক অন্যতম গুণাবলি। সবার মাঝে দেখা যায় নাহ্। তবে দরকার এর পুরোটাই৷
যে ব্যক্তি উত্তম পন্থায় চেষ্টা করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সফল হতে সর্বোচ্চ সাহায্য করেন।
মানুষ স্বপ্ন ছাড়া কখনোই বাঁচতে পারে নাহ্। স্বপ্ন মানেই জীবনের সবটুকু
মাথায় রাখার মতো আরএকটি বিষয় হচ্ছে, সবসময় আশা করা উচিত নিজের কাছে। কখনোই অন্যের কাছে নয়। অন্যের কাছে আমরা যা আশা করি তার পুরোটাই প্রত্যাশা ।
প্রত্যাশা যত বেশি হবে, কষ্ট পাবার সম্ভাবনাও তত বেশি থাকবে। সাধারণ অর্থে প্রত্যাশা কম কষ্টও কম। জীবনের সকল ক্ষেত্রেই। সংসার জীবনে, কর্মজীবনে ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রেও একই।
এ জন্যই হয়তো বলা হয়েছে, “প্রত্যাশাহীন জীবন স্বর্গের মতন”। কিন্তু আমরা আমাদের প্রিয়জনদের কাছে একেবারেই প্রত্যাশা করবো না, এমনটি নয়।
প্রিয় মানুষটির মন, সামর্থ্য, সময় বুঝে প্রত্যাশা করাও দরকার।
একজন কাছের মানুষের প্রত্যাশা নিয়ে উক্তি- “এখন কোনো প্রত্যাশা আমার নেই। খুব ভালো আছি তাই। যখন অনেক প্রত্যাশা ছিল তখন অসুখি ছিলাম”।
প্রত্যাশা আর ভালোবাসা একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হলেও। এই ভালোবাসা শব্দটার অর্থ অনেক ব্যাপক।
এর সংজ্ঞা আছে শত কোটি। ভালোবাসার কোনো নির্দিষ্ট সঙ্গা নেই। যেখানে ভালোবাসা সেখানে প্রত্যাশা। আর প্রত্যাশা কোথায় করা হয় যেখানে ভালোবাসা আছে। ভালোবাসা তো অনেক ধরনের।
বৃক্ষের প্রতি ভালোবাসা, পশু-পাখির প্রতি ভালোবাসা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা আরও কত শত ভালোবাসার রকম আছে।
প্রণয় থেকে রূপ নেওয়া ভালোবাসাটা আবেগধর্মী। এই কারণেই দুইজন একসাথে থাকতে চায়। এই প্রচন্ড ভালোবাসা একসময় ফিকে হয়ে যায়।
হারিয়ে যায় গভীর বনে, ফিরে আসেনা কখনো।
বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, সম্মান, আস্থা, সহযোগিতা, সহমর্মিতায় পূর্ণ থাকে প্রকৃত ভালোবাসা। ভালোবাসা কখনোই হারায় না।
সময়ের সাথে ধুলো পরতে পরতে ভালোবাসায় ফাটল ধরে। মনের মধ্যে ভালোবাসা থেকেই যায়।
সত্যিকার অর্থে হারিয়ে গেলে চারপাশে এত ভালোবাসার গল্প শোনা যেত না। যারা ভালোবাসতে পারেনি তারাই বলে ভালোবাসা হারিয়ে গেছে। হয়তো কখনো ভালোবাসা পায়ওনি সেভাবে।
মানুষের কথ্যানুযায়ী একটাসময় স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন এবং বিভিন্ন সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসা থাকে না। এটা উপলব্ধি করতে পারে না বিধায় এমনটা মনে হয়।
কিন্তু, কখন মনে হয় জীবনের সব শেষ? পরস্পরের প্রতি প্রত্যাশা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এভাবেই হাজির হয় লোভ, স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা।
প্রত্যাশা পূরণে ব্যপ্তয় হলেই সন্দেহ আর অবিশ্বাস চলে আসে মনে। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে এই সন্দেহকে বাড়তে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ না।
বিশ্বাস করা খুবুই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বাস করে কেউ ঠকে না। সাময়িক দৃষ্টিতে মনে হয় ঠকে যাচ্ছে বিশ্বাসকারী।
কিন্তু একটা সময় বিশ্বাস ভঙ্গ করা মানুষটি খুব অনুশোচনা করবে। এটাই হয়তো বিশ্বাসকারীকে মানতে কষ্ট হয়।
যাচাই-বাছাই না করে অবিশ্বাস করলে সেই সম্পর্কের ফাটল সুনিশ্চিত।
সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করা একান্ত দরকার। জীবনকে সহজ করার অন্যতম হাতিয়ার ইতিবাচক চিন্তা। জটিলতা হয়না কখনোই। আস্থা রাখতে সাহায্য করে প্রিয়জনদের প্রতি।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার, গাছে পানি দেওয়া। অর্থাৎ গাছে পানি দেওয়া মতোই সম্পর্ক সতেজ রাখতে সময় দেওয়া জরুরি।
কর্মক্ষেত্র, কাজের চাপ, ব্যাস্ততায় প্রিয়জনদের কোনোভাবই সময় দিতে পারি না। যা সম্পর্কে ফাটলের বড় একটি উদাহরণ।
একজন মানুষ যখন এসব বিষয় মেইনটেইন করতে না পারে তখনই প্রিয়জনদের মনে অসন্তষ্টি আসে৷ তারা মনেকরে ভালোবাসা আর বেঁচে নেই।
অন্যত্র আমাদের অপরের অপারগতাও মনে রাখা খুব জরুরি। আশাগুলোকে বড়, প্রত্যাশাগুলোকে ছোট।
অথবা শূন্য করতে পারলে পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য ধরে রাখা যায়। যে কোনো সম্পর্কে ভালোবাসা বহমান থাকবেই।
যে কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই হোক সেটা স্বামী-স্ত্রী বা অন্য যে কোনো সম্পর্কে। নিজের দোষ আগে দেখা একটা বিশেষ বিশেষ গুন।
পাশের মানুষটির গুন খোঁজা, এটা আপনার অম্যতম বৈশিষ্ট্য।
কখনো অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করা। অল্প ভালোবাসাকে বিরাট করে দেখা।
অল্পে সন্তুষ্ট থাকা, কৃতজ্ঞ থাকা, শোকর করা, ধৈর্য ধরা এবং মোস্ট ইম্পরট্যান্ট হচ্ছে ক্ষমা করতে পারা। ক্ষমা অলওয়েজ মহৎ গুণ।
এসব যদি জীবনে আনতে পারা যায় তবেই সম্পর্ক সবসময়ই সুন্দর থাকবেই। ভালোবাসাও থাকবে।
হয়ত একই গতিতে যাবে না কিন্তু জীবন ও সম্পর্ক থেকে ভালোবাসা ফুরিয়ে যাবে না কখনোই।
জীবনের সব আবেগকে না বলুন
আর আবেগধর্মী ভালোবাসায় কষ্ট থাকবেই। কম বা বেশি। কোনো একজন বিদগ্ধ লেখক বলেছিলেন-
“ভালোবাসা হচ্ছে সিগারেটের ধোঁয়ার মত।
যার পরিণাম পোড়া ছাই, ধোঁয়াটা দেখতে পাচ্ছি কিন্তু আগুনের জ্বলুনিটা দেখতে পাচ্ছি না”।
এই কথার মানে কী দাঁড়ায় এই যে, ভালোবাসার ফল শূন্য? নাহ। অবশ্যই তা নয় কখনোই। কত ভালোবাসার গল্প আছে ওগুলো কি তবে মিথ্যা? পৃথিবীতে ভালোবাসা ছিলো। আছে এবং থাকবে।
স্বপ্ন, আশা, প্রত্যাশা সব। এগুলো থাকবেই। জীবনের অংশ এর সবটুকুই। এসব আমাদের মানবীয় বৈশিষ্ট্য।
শুধুমাত্র আমাদেরকে আমাদের জ্ঞান, বিচার-বিবেচনা, বিবেক-বুদ্ধি, মেধা সঠিক জায়গায় ব্যাবহার করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক পরিবেশে কাজে লাগাতে হবে।
তবেই পৃথিবীর সবকিছু সবচেয়ে সুন্দর মনে হবে। প্রাপ্তিতে থাকবে অনাবিল সুখ শান্তি।
আরও পড়ুনঃ মানবদেহে জিরার ভূমিকা
1 thought on “জীবনের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি যেমন হওয়া উচিত”