এজেন্ট ব্যাংকিং কি ? লাভ, সুবিধা – অসুবিধা সহ বিস্তারিত

Last Updated on 4 months by Shaikh Mainul Islam

প্রায় প্রতিদিন দেশের অলিতে গলিতে এজেন্ট ব্যাংকিং বিজনেসের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে একদল লোক এজেন্ট ব্যাংকিং এর এত জনপ্রিয়তা দেখে এজেন্ট ব্যাংকিং কি সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন।

দেশের সকল মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে সকল ব্যাংক তাদের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে থাকে। জনগণকে এই ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে ব্যাংকের সাথে যারা চুক্তিবদ্ধ হয় তারা এটিকে বিজনেস হিসেবে নিয়ে থাকে।

আজকের পোষ্টে আমরা জানবো, এজেন্ট ব্যাংকিং কি ? এজেন্ট ব্যাংকিং এ কি পরিমাণ লাভ হয় ? Agent Banking ব্যবসায় সুবিধা সমূহ কি ? এজেন্ট ব্যাংকিং বিজনেসে অসুবিধা সমূহ কি কি ? চলুন জেনে নেওয়া যাক এজেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্কিত সকল তথ্য।

এজেন্ট ব্যাংকিং কি

দেশে প্রত্যেকটি ব্যাংক বিশেষ করে বেসরকারি বা মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো দেশের সকল মানুষের কাছে তাদের নিজস্ব সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এলাকা বা অঞ্চল ভিত্তিক বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ে একজন ব্যাক্তির সাথে তাদের ব্যাংকিং সেবা মানুষকে দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়।

এক্ষেত্রে ব্যাংকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া ব্যক্তি নির্দিষ্ট স্থানে নিজস্ব অফিস/ দোকান নিয়ে বসে ওই ব্যাংকের সকল সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়।

এখান থেকে ব্যক্তি প্রত্যেকটি লেনদেন বা নতুন একাউন্ট সব বেলাতে নির্দিষ্ট পরিমাণে লভ্যাংশ পেয়ে থাকেন।

এক্ষেত্রে ব্যক্তি যত বেশি গ্রাহক নিয়ে আসতে পারবেন তার ইনকাম তত বেশি হবে। ব্যাংক ওই ব্যাক্তিকে এফিলিয়েট সিস্টেমে লাভ দিয়ে থাকে।এই সম্পূর্ণ প্রসেসটিকে এজেন্ট ব্যাংকিং বলে।

এক্ষেত্রে যেকোনো ব্যাংকেরই হতে পারে Agent Banking সেবা।

প্রত্যেকটি ব্যাংক বর্তমানে যত  গ্রাম পর্যায়ে আছে চেষ্টা করছে নিজস্ব শাখা চালু করার। এবং তারা যথেষ্ট পরিমাণ শাখা চালু করছেও। কিন্তু খুব বেশি গ্রাম পর্যায়ে একটি ব্যাংকের শাখা চলে না। কারণ, একটি ব্যাংকের শাখা চালু করে চালানো ব্যাংকের কাছে অনেক ব্য্যবহুল যা আসলেই সম্ভব না। এমতাবস্থায় ওইসব অঞ্চলে ব্যাংক তাদের এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ জীবন বীমা কি কত প্রকার ও কি কি

একটি এজেন্ট ব্যাঙ্কিনহ থেকে সেইসব সুবিধা গ্রাহকগণ পেয়ে থাকেন যেসব সেবা একটি মূল ব্যাংকের শাখা থেকে পেয়ে থাকে।

এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এজেন্ট ব্যাংকিং মূলত কি এবং কিভাবে করে থাকে।

Agent Banking বিজনেসে এ লাভের পরিমাণ

এই বিজনেসে সঠিক লাভ বলা যায় না। কারণ, এই কাজে এজেন্ট ব্যক্তিকে কোনো ব্যাংকই নির্দিষ্ট বেতন বা টাকা দেয় না। এজেন্ট ব্যক্তি তার এজেন্ট দ্বারা যত বেশি ব্যাংক একাউন্ট খোলাতে পারবে, প্রতিদিন তার এজেন্ট শাখা থেকে যত বেশি লেনদেন করাতে পারবে এসবকিছুর উপর নির্দিষ্ট আকারে লভ্যাংশ পেয়ে থেক।

এক্ষেত্রে এজেন্ট ব্যাংকিং নেওয়ার পর প্রথম চার মাস বা ছয় মাস বা এক বছর লাভ সাধারণ ভাবে কম হবে।

তবে নিয়মিত থাকলে এবং প্রতিনিয়ত ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ রাখলে অবশ্যই খুব সম্মান জনক একটা লভ্যাংশ পাবেন কয়েক মাস যেতেই।

বিজেনেসের পরিমাণ বাড়াতে একটু বড় অফিস বা দোকান ভারা নিয়ে অনেকে Agent Banking এর পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে থাকে। আবার অনেকে একাধিক ব্যাংকের এজেন্ট নিয়ে কাজ করে থাকে।

তবে একাধিক ব্যাংকের এজেন্ট নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম যে ব্যাংকের এজেন্ট নেওয়া হয় সেই ব্যাংকের সাথে আলোচনা করে অনুমতি নিয়ে নিতে হয়।

এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসায় সুবিধা সহ বিস্তারিত

এজেন্ট ব্যাংকিং এর সুবিধা রয়েছে একাধিক। এজেন্ট ব্যাংকিং এর সকল সুবিধা সমূহ এক এক করে নিচে তুলে ধরা হলোঃ

  • যে ব্যাংকের এজেন্ট থাকবেন সেই ব্যাংক একাউন্টধারী সবার টাকা উত্তলন করে দেওয়া যাবে।
  • বৈদেশিক রেমিটেন্স প্রদান করতে পারবেন ব্যাংকের আদলে।
  • যেকোনো বিল যা ব্যাংক থেকে পরিশোধ করা যায় তার সব করা যায় এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে।
  • একাউন্ট ব্যালেন্স জানা যাবে যেকোনো সময়ে।
  • ওই ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য আবেদন, বিতরন এবং কিস্তি গ্রহণ করত পারবেন এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে।
  • সরকারি সকল ভাতা প্রদান করা যাবে মুহূর্তের মধ্যে।
  • বীমা করা যাবে খুব সহজেই মুহূর্তের মধ্যে।
  • ক্লিয়ার চেক পেমেন্ট করা যাবে।( চেকের বিনিময় একাউন্টে জমা করা টাকা উঠানো যাবে।)

আরও পড়ুনঃ  অগ্রণী ব্যাংক লোন সম্পর্কে বিস্তারিত

উপরের প্রত্যেকটি বিষয় ব্যাংকের কাজ যা ওই ব্যাংকের একটি এজেন্ট শাখাও করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়াও অনেক সুবিধা আছে। বিশেষ করে যে এজেন্ট ব্যাংক নেয় তার জন্য।

কারণ সিস্টেম জানলে মাস শেষে হাজার বা লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারবেন।

এজেন্ট ব্যাংকিং এর অসুবিধা সমূহ কি বিস্তারিত

সব বেলাতে সুবিধা যেখানে থাকে সেখানে অসুবিধাও কম বেশি কিছু না কিছু থাকে। কিন্তু অদ্ভুত হলেও সত্য এই যে এজেন্ট ব্যাংকিং এ কোনো রকম অসুবিধা নেই। হ্যাঁ, সত্যিকারেই এ বিজেনেসে কোনো রকমের অসুবিধা নেই। একবার চালু করতে পারলে ক্রমান্বয়ে ইনকাম বাড়তে থাকে।

তবে কর্ম ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা এবং হিসাব আপনাকে নিশ্চয়ই মেনে চলতেই হবে। যা সব বেলাতেই প্রযোজ্য।

তাই এটি কোনো রকমের অসুবিধার মধ্যে পরে না।

এজেন্ট ব্যাংকিং কি কিভাবে করে সুবিধা অসুবিধা সমূহ নিশ্চয়ই এবার ক্লিয়ারলি বুঝতে পারছেন।

এজেন্ট ব্যাংকিং বিজনেসে সতর্কতা

আপনি একজন এজেন্ট ব্যাংকিং বিজনেস ম্যান হতে চাইলে বা ইতিমধ্যে হয়ে গেলে আপনাকে নিচের কিছু বিষয়ে সবসময় মাথায় রেখে আপনার যাবতীয় ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

যেমনঃ আপনাকে সাধারণত এজেন্ট ব্যাংকিং তুলনামূলক আপনার এলাকা বা আপনার বাড়ির আশপাশের বাজারেই দিতে হবে।

যেখানে সেই ব্যাংকের কোনো শাখা নেই সেখানেই দিতে হবে ব্যাংকের রুলস অনুযায়ী।

সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ গ্রাহক আপনার পরিচিত বা আত্মীয় থাকবে।

আর টাকা পয়সার বিষয়ে স্পষ্ট না থাকলে নিজের ক্যাশ ক্যাপিটাল থেকে টাকা ধার বা ঋণ দিতে যাবেন না। ব্যাংকের রুলস অনুযায়ী যদি কাউকে পারেন সাহায্য করবেন। না হলে দুঃখিত বলা ছাড়া বেশি মাথা ঘামাতে যাবেন না।

আরও পড়ুনঃ  ইসলামী ব্যাংক লোন নেওয়ার পদ্ধতি

ব্যাংক লোন, মানি লন্ডারিং সব বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সংগ্রহ করবেন। আপনার Agent Banking অফিসে কর্মী রাখলেও নিজে অন্তত প্রতিদিন একবার হলেও বসবেন সময় দিবেন।

সবসময় সম্পূর্ণ জায়গা টুকু সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখবেন।

কর্মী নেওয়ার সময় পূর্ব পরিচিত সৎ এবং মেধাবি ব্যক্তিকে সিলেক্ট করবেন। তাকে আবার অবশ্যই কম্পিউটারে পারদর্শী হতে হবে।

এইসব বিষয় সহ স্থান কাল ভেদে কিছু বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। তবেই আপনি খুব সহজে এই ব্যবসায় সাফল্য আনতে পারবেন। আশা করি সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পারছেন।

এবার এজেন্ট ব্যাংকিং কি এসম্পর্কিত কিছু অধিক জিজ্ঞেসিত প্রশ্ন উত্তর জেনে নেওয়া যাক।

Agent Banking সম্পর্কিত FAQS

এজেন্ট ব্যাংকিং কি?

প্রত্যেক ব্যাংক দেশের সর্বস্তরে সবার কাছে তাদের সেবা পৌঁছে দিতে এলাকাভিত্তিক এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

এজেন্টের আন্ডারে যে জায়গায় লেনদেন পরিচালিত সব ব্যাংকের সব সার্ভিস দেওয়া হয় সেটাই মূলত এজেন্ট ব্যাংক।

কিভাবে এজেন্ট ব্যাংকিং বিজনেস শুরু করতে পারি?

আপনার থানা বা জেলার পর্যায়ে যে ব্যাংকের এজেন্ট নেওয়া ইছা সেই ব্যাংকে কথা বলতে হবে।

পরবর্তীতে তারা বিস্তারিত সব শুনে তাদের সুবিধা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন। এবং আপনাকে সম্পূর্ণ বিষয়টিতে সবসময় হেল্প করবে ব্যাংক নিজে।

এজেন্ট ব্যাংক বিজনেসে বেতন কি ফিক্সড?

না। লেনদেন এবং একাউন্ট খোলা সহ বিস্তারিত বিষয়ে পারসেন্টেস আসে। যা প্রতি মাসেই বাড়তে থাকে।

এজেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্কিত সর্বশেষ

আজকে আমরা জানতে চেষ্টা করেছি এজেন্ট ব্যাংকিং কি এবং  লাভ, সুবিধা – অসুবিধা সহ বিস্তারিত সকল তথ্য।

জানতে পেরেছি একজন ব্যাক্তি Agent Banking নিলে কি কি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

আরও পড়ুনঃ সঞ্চয়পত্র কোন কোন ব্যাংকে করা যায়

আশা করছি এই বিষয়ে আর কিছু জানতে বাকি থাকল না।

এরপরেও এই বিষয়ে আরও কিছু জানতে চাইলে পোষ্টের নিচে কমেন্ট করুন। খুব তারাতারি আপনার কমেন্টের উত্তর দেওয়া হবে।

এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত আর্টিকেল পেতে আমাদে রয়েবসাইত ভিজিট করুন। চোখ রাখুন আমাদের অফিদসিয়াল ব্লগের ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।

3 thoughts on “এজেন্ট ব্যাংকিং কি ? লাভ, সুবিধা – অসুবিধা সহ বিস্তারিত”

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.