Last Updated on 9 months by Shaikh Mainul Islam
বছর ঘুরে আবারো হাজির পবিত্র মাহে রমজান। বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহগণ মহা উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পবিত্র রোজা পালন করতে শুরু করেছেন।
আজকে জেনে নেওয়া যাক, কী কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কী কী কারণে রোজা মাকরূহ হয়। এবং সর্বোপরি আমরা জানবো, কোন শ্রেণীর মানুষদের একান্ত রোজা রাখতে হবে না এবং কার রোজা পর কাকযা রাখতে হবে।
রোজা ভঙ্গের কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক…
১) ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে-
রোজা রেখে নিজ ইচ্ছায় সজ্ঞ্যানে কিছু খেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। অর্থাৎ, মুখের মধ্য দিয়ে খাদ্যনালীতে কিছু প্রবেশ করলেই রোজা ভেঙ্গে যাবে।
২) স্ত্রী সহবাস করলে-
বিবাহিত পুরুষগণ রোজা রেখে সেহরি থেকে ইফতারির মধ্যবর্তী সময়ে স্ত্রী সহবাস বাআ যৌনমিলন করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। অন্যভাবে বলতে গেলে, সেক্স বা শারীরিক সম্পর্কের কারণে রোজা ভঙ্গ হয়।
৩) কুলি করার সময় হলকের নিচে পানি চলে গেলে-
ওজু করার সময়ে মুখে পানি নিতে হয়। মুখে পানি নিয়ে কুলি করার সময়ে হলকের(কন্থনালি) নিচে পানি চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে ভুলক্রমে বা রোজার কথা স্মরণ না থাকলে রোজা ভাঙ্গবে না)।
৪) ইচ্ছকৃত মুখভরে বমি করলে-
রোজা পালনের সময়ে ব্যক্তি নিজ ইচ্ছায় মুখ ভরে বমি করলে তখন ব্যক্তির রোজা সম্পূর্ণ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৫) নাক কানে কিছু দেওয়া-
নাক, কানের মাধ্যমে কোন ধরনের ওষধ বা তৈল বা অন্ন কোন তরল পদার্থ প্রবেশ করালে রজাআ ভেঙ্গে যাবে।
৬) জবরদস্তি করে কেহ রোজা ভাঙ্গালে-
জোর পূর্বক কেউ যদি কাউকে কিছু খাওয়ায় বা জোর করে রোজা অবস্থায় তাহলে ব্যক্তির রোজা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যাবে।
৭) ইঞ্জেকশন বা স্যলাইন ব্যবহারে-
শরীরে ইনজেকশান বা স্যালাইরনর মাধ্যমে শরীরে ওষধ পৌছালে রোজা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যায়।
৮) কিছু গিলে ফেললে-
কংকর/পাথর বা ফলের বিচি বা অন্য কোন বস্তু গিলে ফেললে তাও রোজা ভঙ্গের কারণ হবে।
৯)ইফতারির সময়ের আগে ইফতারি করলে-
সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার করলে।পরে দেখা গেল সুর্যাস্ত হয়নি। বা সময় অনুমান করে ইফতার করার পর দেখা গেল সময় হয়নি। তখন রোজা ভেঙ্গে যাবে।
১০) দাঁত হতে ছো-লা সামান্য পরিমাণ খাদ্য-দ্রব্য গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১১) ধূমপান করা বা ইচ্ছাকৃত লোবান বা আগরবাতি জ্বালানো ধোয়া গ্রহণ করলে।ের ফলে সাথে সাথে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
১২) মুখ ভর্তি বমি গিলে ফেললে রজাআ ভেঙ্গে যাবে।
১৩) রাত্রি আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর বা নির্দিষ্ট সময়ের পর পানাহার করলে রজাআ হবে না।
১৫) সুবহে সাদিকের আগে মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুবহে সাদিকের পর জাগলে।তবে নিদ্রা হতে জাগরিত হওয়া এমন অবস্থায় শুধু কাজা ওয়াজিব হবে।
এছাড়াও যদি রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে সহবাস অথবা পানাহার করে তবে তাদের উপর কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে।
কাফফারার মাসআলা অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের থেকে জেনে নেওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ গরমে ঠাণ্ডা পানি খাওয়া উপকার নাকি ক্ষতি
এমনকিছু কাজ আছে যা করলে রোজা থেকেও রোজার পূর্ণ সাওয়াব পাআওয়া যায় না। আর একেই রোজার মাকরুহ বলা হয়।
রোজার মাকরুহগুলো হলোঃ
১) অনাবশ্যক বা অদরকারী কোনো জিনিস চিবানো বা চাখলে রোজা মাকরুহ হবে।।
২) যেকোনো জিনিস বা কোনো দ্রব্য মুখে দিয়ে রাখলে ররজা মাকরুহ হবে।
৩) ওজুর সময় গড়গড়া করা বা নাকের ভেতর পানি টেনে নেয়া। কিন্তু পানি যদি নাক দিয়ে গলায় পৌঁছে যায় তাহলে রোজা সম্পূর্ণ ভেঙে যাবে।
৪) ইচ্ছাকৃত মুখে থুথু জমা করে গলাধঃকরণ করা বা খেয়ে ফেলা।
৫) গীবত করা। গালা-গালি বা ঝগড়া-ফাসাদ বা উভয়টি করা। কেউ যদি গায়ে পড়ে ঝগড়া-ফাসাদ করতে এলে তখন বলবে,
“আমি রোজাদার, তোমাকে প্রতিউত্তর দিতে সম্পূর্ণ অক্ষম”।
৬) সাড়া দিন নাপাক অবস্থায় থাকা বা পাক পবিত্র না থাকা। এটি মারাত্মক রকমভাবে গুনাহের কাজ।
৭) রোজার কারণে কষ্ট বা অস্থিরতা ও কাতরতা প্রকাশ করলে রোজা মাকরুহ হবে।
৮) শক্ত কয়লা চিবিয়ে অথবা পাউডার পেস্ট বা মাজন ইত্যাদি দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে।
সবার জন্য সবসময় ফরয রোজা আদায় করা ফরয না।
এবার জেনে নেওয়া যাক, কাদের রোজা না রাখলে ক্ষতি নাই। তবে অবশ্যই পরে কাযা রোজা আদায় করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ রমজানে যেসব কাজ করবেন না
১) কোনো মারাত্মক অসুখের কারণে রোযা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেললে। অথবা অসুখ বৃদ্ধির ভয় বা সম্ভাবনা থাকলে।কিন্ত, পরে এই রোজা কাযা আদায় করতে হবে।
২) কোনো গর্ভবতী স্ত্রী লোকের সন্তান বা নিজের প্রাণ নাশের আশঙ্কা হলে রোজা ভঙ্গ করা যাবে। তবে তা পরে কাযা রোজা আদায় করে দিতে হবে।
৩) যেসব স্ত্রী লোক নিজের/ অপরের সন্তানকে দুধ পান করায়। রোজা রাখার কারণে বুকে দুধ না আসলে রোজার বিরতি আছে। তবে অবশ্যই কিন্তু পরে কাযা রোজা আদায় করতে হবে।
৪) শরিয়তের ভাষায় মুসাফির অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে। তবে রোজা রাখাই উত্তম।
৫) কেউ রোজা/অন্য কারণে হত্যার হুমকি দিলে. রোযা ভাঙ্গার অনুমতি আছে। তবে পরে এর কাযা রোজা অবশ্যই আদায় করতে হবে।
৬) কোনো রোগীর ক্ষুধা বা পিপাসা এমন পর্যায়ে চলে গেল। এবং কোনো দ্বীনদার মুসলিম চিকিৎসকের মতে রোজা ভঙ্গ না করলে তখন মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলে।তখন রোযা ভঙ্গ করা ওয়াজিব। পরে তা কাযা আদায় করতে হবে।
৭) হায়েজ– নেফাসগ্রস্ত (নারীদের মাসিক বা ঋতুস্রাবের সময়ে) নারীদের জন্য রোজা রাখা জায়েজ নাই।তবে পরবর্তীতে কাযা রোজা আদায় করতে হবে।
অর্থাৎ, ফরজ রোজা কারো জন্যই সম্পূর্ণ মওকুফ না। সাময়িকভাবে বিরতি পেলেও পরে তা আদায় করতেই হবে। সকল মুসলমানের ফরজ রোজা রাখা অবশ্যই উচিত। আল্লাহ্ সবাইকে বোঝার এবং আমল করার তৌফিক/শক্তি দিক।
Thanks for your blog, nice to read. Do not stop.