Last Updated on 8 months by Shaikh Mainul Islam
হাজার মাসের ইবাদতের সমান লাইলাতুল কদরের রাতের ইবাদত। তাই সবাই লাইলাতুল কদরের দোয়া ও শবে কদরের আমল সমুহ সম্পর্কে জানতে চান।
প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোস্ট “লাইলাতুল কদরের দোয়া । শবে কদরের আমল সমুহ” এ।
আরও পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ত
আজকের পোষ্টে আমরা লাইলাতুল কদরের দোয়া, শবে কদরের আমল সমুহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
লাইলাতুল কদরের দোয়া
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআন নাজিল হয় মহিমান্বিত রাত পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাতে। আর এই কোরআনেই আছে অনেক অনেক দোয়া।
আরও পড়ুনঃ লাইলাতুল কদরের দোয়া
লাইলাতুল কদরের এই রাতে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বিশেষ দোয়া করতেন। পবিত্র কোরআন থেকে লাইলাতুল কদরের বিশেষ দোয়া সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়া জানবো।
আরও পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ম
হজরত আয়শা ( রাঃ) একদিন নবীজিকে জিগ্যেস করেন যে, হে নবী কদরের রাত বুঝতে পারলে আমি কি দোয়া পড়ব?
তখন নবীজি মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, কদরের রাতে এই দোয়াটি পালন পাঠ করবে,
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
বাংলা উচ্চারণ : “আল্লাহ হুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি”।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ তায়লাঃ আপনি পরম ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
সুতরাং, আমাদের সবার লাইলাতুল কদরের রাতে লাইলাতুল কদরের বিশেষ এই দোয়াটি বেশি বেশি করে পাঠ করা উচিত।
আল কোরআনে উল্লেখিত দোয়া সমূহ
পবিত্র কোরআনে অনেক অনেক আয়াত ও দোয়া আছে যা সবসময় সব ক্ষেত্রে দোয়া হিসেবে পাঠ করা যায়।
এবার পবিত্র কোরআন থেকে এমন কিছু দোয়া দেখব যা লাইলাতুল কদরের দোয়া এবং শবে কুরের আমল সমূহ হিসেবে পাঠ করতে পারবেন।
চলুন, তাহলে আল কোরআন থেকে লাইলাতুল কদরের দোয়া সহ শবে কদরের আমল সমূহ সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া জেনে নেওয়া যাকঃ
১) رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
বাংলা উচ্চারণঃ উচ্চারণ : “রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাই রুর রহিমিন”।
বাংলা অর্থঃ হে আমার প্রভু, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমতকারী”। (সুরা মুমিনুন এর আয়াত ১১৮)
২) رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
বাংলা উচ্চারণঃ “রাব্বানা আমান্না ফাগফির লানা ওয়ার হামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন”।
বাংলা অর্থঃ “হে আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদের প্রতি রহমত দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি শ্রেষ্ঠ দয়ালু”। (সুরা মুমিনুন এর আয়াত নং ১০৯)
৩) رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ
বাংলা উচ্চারণঃ “রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি”।
বাংলা অর্থঃ হে আমার সৃষ্টিকর্তা, নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন”। (সুরা কাসাস থেকে আয়াত ১৬)
৪) رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
বাংলা উচ্চারণঃ “রব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার”।
বাংলা অর্থঃ হে আমার আল্লাহ, নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি আপনার উপর। সুতরাং আপনি ই আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দিন। আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন”। (সুরা আল-ইমরান এর আয়াত ১৬)
৫) رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
বাংলা উচ্চারণঃ রাব্বানা জ্বলামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাং তাগফিরলানা ওয়া তার হামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন”।
বাংলা অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তাহলে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবো”। (সুরা আরাফ এর আয়াত ২৩)
কোরআনে ক্ষমার দোয়া সমূহ
পবিত্র কোরআনে এমন হাজারো আয়াত আছে যা আল্লাহ তায়লার কাছে ক্ষমা ও করুণা চাওয়ার জন্য পাঠ করা উচিত। চলুন আরও কিছু দোয়া জেনে নেই। এসব দোয়া কদরের রাতে বেশি বেশি পাঠ করা উচিত।
৬) رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
বাংলা উচ্চারণঃ “রব্বানাগফিরলি ওয়ালি ওয়ালি দাইয়্যা ওয়া লিল মুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব”।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ, যেদিন পাপ-পূর্ণের হিসাব হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিন”। (সুরা ইবরাহিম এর আয়াত ৪১)
আরও পড়ুনঃ সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ
৭) سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
বাংলা উচ্চারণঃ সামিনা ওয়া আত্বানা গুফর আনাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির”।
বাংলা অর্থঃ আমরা আপনার বিধান শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আল্লাহ, আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার কাছেই তো আমাদের আবার ফিরতে হবে”। (সুরা আল-বাকারাহ এর আয়াত ২৮৫)
৮) رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا
বাংলা উচ্চারণঃ ওয়াফু আন্না ওয়াগফির লানা ওয়ার হামনা আংতা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন”।
বাংলা অর্থঃ হে সৃষ্টিকর্তা, যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েন না। আমাদের পাপ ক্ষমা করে দিন। আমাদের প্রতি আপনার রহমতের ক্ষমা এবং দয়া করুন। আপনি ই আমাদের প্রভু”। (সুরা বাকারাহ এর আয়াত ২৮৬)
শবে কদরের কদরের দোয়া
৯) رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ
বাংলা উচ্চারণঃ “রাব্বানা গফিরলানা ওয়ালি ইখওয়া নিনাল্লাজিনা সাবকুনা বিল ঈমানি”।
বাংলা অর্থ : ‘হে আল্লাহ তায়লা, আমাদের ক্ষমা করুন। যারা আমাদের আগে ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকেও আপনি ক্ষমা করুনআআআআ’। (সুরা হাশর এর আয়াত ১০)
আরও পড়ুনঃ ২০২৪ সালের রোজার ঈদ কত তারিখে
১০) رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
বাংলা উচ্চারণঃ “রাব্বানাগ ফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইস রাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদা মানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বওমিল কাফিরিন”।
বাংলা অর্থঃ হে মহান আল্লাহ, আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে সীমালঙ্ঘন হয়েছে তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন”। (সুরা আল-ইমরান এর আয়াত ১৪৭)
১১) رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
বাংলা উচ্চারণঃ রব্বানা ফাগ ফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফ ফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফ ফানা মাআ-ল আবরার”।
বাংলা অর্থঃ হে প্রভু, আমাদের গোনাহগুলো ক্ষম করুন। আমাদের ভুলগুলো মাফ করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি করে দিন”। (সুরা আল-ইমরান এর আয়াত ১৯৩)
এই দোয়াগুলি কদরের রাতে সিজদায় গিয়ে কিংবা আখেরি বৈঠকে তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ার পর পাঠ করলে আল্লাহ তার বান্দাকে মাফ করে দিবেন, ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ করে সকল প্রকার গুনাহ থেকে মাফ পেতে নবীজির ছোট দোয়াটি পাঠ করলে আল্লাহ মাফ করে দিবেন, ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ কদরের রাত সহ সবসময় এসব দোয়াগুলি বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দিন, আমিন।
শবে কদরের আমল সমূহ
লালাতুল কদরের রাতে আমাদের বেশি বেশি আমল করা জরুরি। কারণ এই রাতের ইবাদতকে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি মর্যাদার বলা হয়েছে।
তবে, শবে কদরের আমল সমূহ বলতে বেশিরভাগ মানুষ শুধু নফল নামাজকেই বুঝে থাকেন। তবে, নফল নামাজ ছারাও বেশ কিছু আমল আছে যা শবে কদরের আমল হিসেবে করতে পারবেন।
লাইলাতুল কদরের রাতে যেসব ইবাদত করা উচিত তা হচ্ছেঃ
- বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া।
- এশার পরে তারাবির নামাজ আদায় করা।
- শেষ রাতে সেহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।
- সালাতুত তাসবিহ আদায় করা।
- কুরআন তেলাওয়াত করা।
- সম্ভব হলে তাওবার নামাজ আদায় করা।
- সম্ভব হলে সালাতুল হাজাত আদায় করা।
- সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল নামাজ বেশি বেশি আদায় করা।
- মসজিদে প্রবেশ করেই ২ রাকাত (দুখুলিল মাসজিদ) নামাজ আদায় করা।
- দুই রাকাত করে করে(মাগরিবের পর ৬ রাকাত) আউওয়াবিনের নামাজ আদায় করা।
- বেশি বেশি দরূদ শরিফ পাঠ করা।
- তাওবাহ-ইসতেগফার, সাইয়্যেদুল ইসতেগফার পাঠ করা।
- বেশি বেশি জিকির-আজকার করা।
- কোরআন-সুন্নায় বর্ণিত দোয়া পড়া।
- পরিবার পরিজন, বাবা-মা ও মৃতদের জন্য দোয়া ও কবর জেয়ারত করা।
- সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি বেশি দান-সদকা করা।
- সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুয্যাম্মিল, সুরা মুদ্দাসির, সুরা ইয়াসিন, সুরা ত্বহা, সুরা আর-রাহমান, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুলক, সুরা কুরাইশ এবং ৪ কুল পড়া।
উপরে উল্লেখিত সকল আমলগুলি সবসময় সহ বিশেষ করে লাইলাতুল কদরের দোয়া বা শবে কদরের আমল সমূহ হিসেবে আদায় করা উচিত।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ত ও ফজিলত জানার ও মানার তৌফিক দিন। আমিন।
লাইলাতুল কদর সম্পর্কিত FAQS
লাইলাতুল কদর অর্থ ভাগ্য রজনী বা ভাগ্য নির্ধারণের রাত।
“আল্লাহ হুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি”
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে সর্বশেষ
প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা lailatul qadar er doa ও শবে কদরের আমল সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি।
আশা করছি এই পোস্ট থেকে ২৭ রমজানের দোয়া তথা lailatul qadar er doa ও শবে কদরের আমল সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
শবে কদর ও ইসলাম সম্পর্কিত আমাদের অন্যান্য সকল পোস্ট পড়তে ভিজিট করুন।
আমাদের সকল আপডেট পেতে চোখ রাখুন অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।