শবে কদরের নামাজের নিয়ম । শবে কদরের নামাজের নিয়ত

Last Updated on 8 months by Shaikh Mainul Islam

ভাগ্য পরিবর্তনের রাত বলা হয় শবে কদরের রাতকে। অনেকেই ফজিলত পূর্ণ রাত শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও শবে কদরের নামাজের নিয়ত জানতে চান।

প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোস্ট “শবে কদরের নামাজের নিয়ম । শবে কদরের নামাজের নিয়ত” এ।

আরও পড়ুনঃ  রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি

আজকের পোষ্টে আমরা শবে কদর কি, শবে কদরের নামাজের নিয়ম, শবে কদরের নামাজের নিয়ত, শবে কদরের ফজিলত সহ শবে কদর সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

শবে কদর কি

৬১০ খ্রিস্টাব্দে রমজান মাস্র ২৭ তম তারাবির রাতে প্রথম নবিজি মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর কোরআন নাজিল হয়। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে এই রাতের ইবাদতকে শ্রেষ্ঠ ইবাদত বলা হয়।

পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বেজোর রাতে (বেজোর তারাবি) শবে কদর পালন করা হয়। শবে কদরকে হাজার রাতের চেয়ে উত্তম রাত বলা হয়।

এই রাতে আল্লাহ পবিত্র মহিমান্বিত কোরআন নাজিল করেন। শবে কদরের রাতের একটা সময়ে পৃথিবীর সব ধরনের বস্তু ও প্রানি আল্লাহকে সিজদাহ করেন।

আরও পড়ুনঃ লাইলাতুল কদরের দোয়া । কদরের নামাজের নিয়ম

শবে কদরের রাতে সকল ফেরেশতা আল্লাহর আদেশের পৃথিবীতে নেমে আসেন। এবং প্রত্যেক ব্যক্তি কি করছেন তার হিসাব করেন।

তবে শবে কদর নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা জায়গায় ভুল আছে। আমাদের অনেকের ধারণা ২৭ তারাবির দিন-ই শবে কদর হয়। প্রকৃত অর্থে এটা হতে পারে ২৫,২৭ অথবা ২৯ তারাবির রাতে।

এ সম্পর্কে মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)বলেন,

আরও পড়ুনঃ রোজার সময়সূচি ২০২৪

“তোমরা শবে কদরের রাতকে খুঁজে বের করো এবং কদরের রাতে বেশী বেশী আমল করো। নিশ্চয়ই হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাত অধিক উত্তম”।

আলেমদের মতে, শবে কদর হতে পারে ২৫,২৭, অথবা ২৯ রমজানের বিজোড় রাতে। তবে সম্ভাবনা বেশী ২৭ তারাবির রাতে।

আরও পড়ুনঃ লাইলাতুল কদরের দোয়া । শবে কদরের আমল সমূহ

বাংলাদেশে ২৭ তারাবিতে শবে কদর পালন করা হয়। তবে এই বিষয়ে রমজানের শেষ দশ রোজার মধ্যে বিজোড় রাত ছাড়া স্পষ্ট এক দিনের কথা বলা হয়নি।

এই বিষয় আলেমগন বলেন, নির্দিষ্ট একটি দিনের কথা উল্লেখ করে দিলে মানুষ শুধু মাত্র ওই নির্দিষ্ট দিনে বেশী বেশী ইবাদত করতেন।

তাই একাধিক দিন বান্দাদের ইবাদত করানো হচ্ছে শবে কদরের রাত সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু না বলা।

শবে কদরের নামাজের নিয়ত আরবি

অনেকেই শবে কদরের নামাজের নিয়ত বাংলায় এবং আরবিতে জানতে চান। প্রকৃত অর্থে শবে কদর নয় শুধু যেকোনো নামাজ ই হোক না কেন, মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করার বিধান নেই।

আপনি শবে কদরের রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং সাওয়াবের আশায় নফল ইবাদতের অংশ হিসেবে নামাজ পড়তে দাঁড়িয়েছেন বা নিজেকে স্থির করছেন যে নামাজ পড়বেন এতেই আপনার শবে কদরের নামাজের নিয়ত হয়ে যাবে।

আরও পড়ুনঃ রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া (উচ্চারণ সহ বাংলা অর্থ)

এরপরেও অনেকে শবে কদরের নামাজের নিয়ত করতে চান। নিচে শবে কদরের নামাজের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ত আরবি এবং বাংলায় দেখে নেওয়া যাকঃ

শবে কদরের নামাজের নিয় আরবিতেঃ নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা- আরবা রকাতা সালাতিল লাউলাতুল কদরি, নফলে মুতাওজ্জিহান ইলাজ্জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লহু আকবর।

শবে কদরের নামাজের নিয়ত বাংলায়ঃ হে আল্লাহ, আমি কিবলা মুখি হয়ে তোমার সন্তুষ্টির জন্য শবে কদরের দুই রাকআত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করিলাম, আল্লাহু আকবার।

প্রকৃত অর্থে, আমরা যখন নামাজের উদ্দেশ্যে দাড়াই তখন ই নামাজের নিয়ত হয়ে যায়। এর একমাত্র কারণ, আল্লাহ সকল বিষয়ে সম্মক অবহিত। -(আল কোরআন)

শবে কদরের নামাজের নিয়ম

প্রিয় পাঠক, শবে কদরের রাতের ইবাদত হচ্ছে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।

তবে এই রাতে নামাজ পড়ার জন্য বিশেষ কোনও নিয়ম নেই।

আপনি অন্যান্য সময়ে যেমন করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন একইভাবে এখানেও দুই রাকআত করে নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ  লাইলাতুল কদর সূরা (বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ, ফজিলত সহ বিস্তারিত)

তবে প্রত্যেক দুই রাকাত নফল নামাজ আপনি যত সময় নিয়ে দীর্ঘ সূরা দিয়ে পড়বেন তত বেশি ফায়দা পাবেন।

এভাবে আপনি যত ইচ্ছা তত রাকত শবে কদরের নফল নামাজ আদায় করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ রমজানে সাহরি ইফতারিতে যা থাকা উচিত

তবে, শুধু নামাজই নয়, বরং শবে কদরের রাতে বেশী বেশী কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির করতে পারেন। বেশী বেশী তাওবা করতে হবে আল্লাহর কাছে।

মোনাজাতে মাফ চাইতে হবে আল্লাহর কাছে। আল্লাহর কাছে তার করুণা চাইতে হবে।

এছাড়া লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাতে নিচের দোয়াটি বেশী বেশী পড়বেন।

দোয়াটি পড়ার জন্য আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) আদেশ দেন। শবে কদরের রাতে এই দোয়াটি বেশী বেশী করে পাঠ করবেন,

শবে কদরের রাতের শবে কদরের বিশেষ দোয়া আরবিতেঃ اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

শবে কদরের রাতের দোয়া আরবি উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা ইন নাকা আফুয়্যুন- তুহিব্বুল আফওয়া- ফাফু আন্নি”।

বাংলায় শবে কদরের রাতের দোয়াঃ হে আল্লাহ তায়ালা, আপনি মহান ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তাই আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন হে আল্লাহ তায়ালা। – (মুসনাদে আহমাদ থেকে সংগ্রহীত)।

শবে কদরের রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি ফজিলত পূর্ণ।

আর একমাত্র নামাজের মাদ্ধমেই আল্লাহর খুব কাছে (সিজদাহের সময় আল্লাহর সম্মুখে সিজদা দিয়েছি বিশ্বাস করা হয়) যাওয়া যায়।

তাই, এই বিশেষ রাতে ইবাদতের অন্যতম অংশ হিসেবে নফল নামাজ আদায় করা হয়। কিন্তু আপনি চাইলে কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরও করতে পারেন।

শবে কদরের ফজিলত

মুসলিম উম্মাহ এর জন্য শবে কদরের রাতের ফজিলত অনেক অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

লাইলাতুল কদর মানে হচ্ছে ভাগ্য নির্ধারণী রাত। মহিমান্বিত এই রাতে আল্লাহ কোরআন নাজিল করেন।

রমজানের শেষ দশ দিনের সেকন বিজোড় একদিন এই শবে কদর চলে আসে। যার জন্য মুসলমানদের ইতেকাফ করা উচিত। নবীজি ইতেকাফ করতেন।

এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের বিশেষ ক্ষমা করে থাকে। বান্দাদের সকল দোয়া কবুল করে থাকে।

যদি তার বান্দারা অনুতপ্ত হয়ে পিছনে করে আসা ভুলের জন্য ক্ষমা চায় আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।

আল্লাহ শবে কদর প্রসঙ্গে সূরা কদর নাজিল করেন যার মধ্যে বলা হয়েছে,

“ আপনি কি জানেন কদর কি? কদর সম্পর্কে দেওয়া আছে সুরাতুল কদর এ”।

আর তাই, শবে কদরের রাতে বেশি বেশি আমল করতে হবে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেক চাওয়া চাইতে হবে।

শবে কদর সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর

শবে কদরের রাতে বেশী বেশী ইবাদত করা জায়েজ?

হ্যাঁ। নবীজি নিজেই এই বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে গেছেন। শবে কদর যেন মিস না হয় তার জন্য নবীজি ইতেকাফে বসতেন।

শবে কদর কবে পালিত হয়?

রমজানের শেষ দশ দিনের যেকোনো বিজোড় রাতে শবে কদর রাতটি আসে।

তবে বেশী সম্ভাবনা ২৩,২৫ এবং ২৭ তারাবির রাতে।

এর মধ্যে বেশী সম্ভাবনা থাকে ২৭ তারাবির রাতে।

শবে কদর অর্থ কি?

শবে অর্থ রাত র কদর অর্থ ভাগ্য বা সম্ভাবনা।

শবেকদর সম্ভাবনাময় রাত বা ভাগ্যরজনী।

অর্থাৎ, বান্দা ক্ষমা ও করুণা চাইলে আল্লাহ এই রাতে ওই বান্দার ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন।

২৭ তারাবিতে কদরের সম্ভাবনা কততুকু?

বলে হয়েহে যে, রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বিজর তারাবির রাতগুলোতে কদর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

নির্দিষ্ট একটি রাতে কথা না বলার কারণ তাহলে মানুষ ওই একদিন ই ইবাদত করবে।

শবে কদরের রাতে কি কি করা যাবে না?

শব কদরের রাত হচ্ছে আলাহর কাছে ক্ষমা ও করুণা চাওয়ার রাত।

কিন্তু, মানুষ এই রাতেও অনেক নাজায়েজ কাজ করে থাকেন। যেমনঃ

ভালোভালো খাওয়াদাওয়া,
আতশবাজি ফোটানো,
সাজ সজ্জা করা, ইত্যাদি।

একজন প্রকৃত মুসলমান হিসেবে ভুলেও এইসব কাজ করা যাবে না।

এবং যারা এসব কাজ করে থাকে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হবে।

শবে কদরের নামাজের নিয়ম নিয়ে সম্পর্কিত সর্বশেষ

আজকের পোষ্টে আমরা শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও শবে কদরের নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জেনেছি।

এছাড়াও জেনেছি শবে কদরের ফজিলত, শবে কদরের দোয়া সহ শবে কদর সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।

শবে কদর বা ইসলাম সম্পর্কিত আমাদের অন্যান্য সকল পোস্ট পড়তে Islamic info Category ভিজিট করুন।

নিয়মিত আমাদের সকল পোস্ট পড়ার জন্য Dainik kantha ভিজিট করুন।

সর্বশেষ আপডেট পেটে চোখ রাখুন অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।

13 thoughts on “শবে কদরের নামাজের নিয়ম । শবে কদরের নামাজের নিয়ত”

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.