রোজায় শরীরের পানিশূন্যতা এড়াতে করণীয় 

পানিশূন্যতা, প্রতীকী ছবি – দৈনিক কণ্ঠ

চৈত্র- বৈশাখের মাথা ফাটা রোদে চলছে এবারের রমজান। এবারের রোজায় প্রায় ১৪ ঘণ্টার অধিক সময় খাবার থেকে বিরত থাকতে হয়। যার কারণে শরীরে ভীষণ রকম পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসে আক্রন্ত, কিডনি সমস্যায় ভুগছে, রোদে ভিজে কাজ করে এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য এই সমস্যা হওয়ার খুব বেশি সম্ভাবনা থাকে। 

কখনোই যেন বিশেষ করে রমজানে আমাদের শরীরে পানিশূন্যতা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়ম করে পরিমাণ মতো পানি বা ভেজা জাতিও খাবার খেতে হবে। প্রতিদিন ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা দরকার।

তবে পানির পরিমাণ ব্যক্তির বয়স ভেদে পরিবর্তন হতে পারে। 

(পানির পরিমাণ বের করার জন্য যার যত ওজন সেই সংখ্যাকে ৩০ দিয়ে ভাগ করতে হবে। প্রাপ্ত ভাগফলের সমান লিটার পানি কমপক্ষে ব্যক্তিকে এই সময়টুকুর মধ্যে খেতে হবে)। 

ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত শুধুমাত্র পানি যুক্ত খাবার খেতে হবে। ইফতারিতে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাওয়া যাবে না।রাতে ভাত খেতে হবে। সেহরি করতে হবে। তবে সব যেন হয় পরিমাণ মতো।

এছাড়া রমজানের সময় নিয়মিত ওয়াক্তের এবং তারাবীর নামাজ পড়লে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম হয়ে যায়।

আমাদের আগে জানতে হবে পানিশূন্যতা কি?

 

ব্যক্তি যখন প্রয়জনের তুলনায় খুবই কম পরিমাণ পানি পান করে, এবং এতে দেহের সকল কারযক্রিয়া সম্পন্নে ব্যঘাত ঘটে তখন তাকে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন বলে। বিশেষভাবে রমজানে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অতিরিক্ত গরম, দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা, প্রসাবে পানি বের হয়ে যাওয়া এসব কারণে হরহামেশাই পানিশূন্যতা হয়ে থাকে। যার ফল দেহ পানিশুন্য হয়ে পরে। 

পানিশূন্যতা হওয়ার কারণ… 

১) একটানা অনেকক্ষণ পানি না খেলে দেহ পানিশূন্য হয়ে পরে।  

২) প্রতিদিনের খাবারে পানি সমৃদ্ধ সবজি ও ফলমূল না রাখায় পানির অভাব দেখা দেয়।

৩) অতিরিক্ত এবং মানহীন তেলে ভাজা খাবার গ্রহন। ইফতার ও সেহরিতে অতিরিক্ত চা কফি খাওয়া যা শরীরকে করে ফেলে পানিশূন্য।

৪) ইফতার থেকে সেহরি এই সমইয়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ  (৮-১০ গ্লাস) পানি পান না করলে দেহ পানিশূন্য হয়ে পরে স্বাভাবিক ভাবেই। 

৫) জ্বর, ডায়রিয়াসহ এ ধরনের অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত হলেও শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়।

৬) কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ, উচ্চ পরিমানে প্রোটিন এবং এনার্জি ড্রিংক খেলে।  অতিরিক্ত পরিমাণে লেবুর রস খেলেও দেহে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তবে লেমুর রস পরিমাণ মতো খেতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ রোজায় শসা খাওয়ার উপকারিতা- বেঁচে যেতে পারে প্রাণ

পানিশূন্যতার লক্ষণ সমূহ  

পানিশূন্যতার অন্যতম লক্ষণ গলা শুকিয়ে যাওয়া, প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়া। প্রসাবে জ্বালাপোড়া করা, অতিরিক্ত হলুদ প্রসাব হওয়া। শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত অনুভব করা। মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, ত্বক ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য রোগও পানি শূন্যতার কারণে বেরে যায়।স্বাভাবিক ভাবে জিহ্বা ও চোখ দেখে খুব সহজে পানিশূন্যতা বোঝা যায়।

পানি শূন্যতার কারণে হার্ট রেট এবং প্রেসার কমে যায়। বিশেষ করে অসুস্তহ রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পরে। 

রোজায় পানিশূন্যতা রোধে করণীয় সমূহ 

১) ইফতার এবং সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে।

২) ইফতারে বেশি বেশি ফল ও ফলের রস উপস্থিত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বেছে নেওয়া যেতে পারে তরমুজ, বাঙ্গি, মাল্টা, বেল, পেঁপে ইত্যাদি ফল।

৩) টকদই ও লাচ্ছি যোগ করা যেতে পারে প্রতিদিনের ইফতারে।

৪) রোজা খোলার জন্য রাখা যেতে পারে ডাবের পানি এবং খাবার স্যালাইন। তবে উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে পটাশিয়াম বেশি থাকলে এটি না করাই উত্তম। 

৫) সহজেই হজম হয় এমন খাবার রাতের খাবার ও সেহরিতে বেছে নিতে হবে যাতে খুব সহজে হজম হতে পারে।

অতিরিক্ত তেল ও মশলাযুক্ত খাবার সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে। কারণ,  তা পরিপাকে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়।

আরও পড়ুনঃ ঘুম সমস্যা, ভালো ঘুমের জন্য করণীয়

৬) সেহরিতে ১ বা ২ দিন পর পর ডাল দিয়ে লাউ বা চালকুমড়া দিয়ে ঝোল তরকারি রাখা যেতে পারে।

এতে পানি শূন্যতা দূর হয়। 

৭) সেহরি ও রাতের খাবারে নিয়মিত পানি সমৃদ্ধ সবজি খেতে হবে।

যেমন চালকুমড়া, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, স্কোয়াশ, শসা, টমেটো রাখতে হবে।

৮) সেহরি বা রাতের খাবারে এক বেলা দুধ অবশ্যই রাখার চেষ্টা করতে হবে।

৯) খাবারের আইটেমে খরচ কম রাখগতে ডিম এবং ডাল রাখা যেতে পারে।

পর্যাপ্ত পানি পান না করলে পানি শূন্যতা দেখা দেয়

১০) প্রয়জোন ছাড়া বাহিরে বের হওয়া যাবে না। বের হলেও রোদ ঠেকাতে চশমা ও ছাতা ব্যবহার করতে হবে।

১১) অনেকেই ইফতারের পর ফ্রিজে রাখা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করে। এটা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই বদ অভ্যাস সম্পূর্ণ ত্যাগ করতে হবে।

১২) স্বাভাবিক সময়মত নিয়মিত গোসল করতে হবে। খুব খারাপ লাগলে চোখেমুখে পানির ঝাপ্টা দিতে হবে খানিক পর পর। 

১৩) যাদের দুধ চা ও কফি পানের অভ্যাস আছে এই অভ্যাস সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে।

দুধ চা ও কফি মানব দেহে পানিশূন্যতার সৃষ্টি  করতে কাজ করে থাকে। 

১৪) খেজুর, ফল, জুসের সাথে ইফতারে পান্তাভাত রাখা যেতে পারে।

যা সারাদিনের রোজার শেষে দেহে পানির ঘাটতি পূরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

১৫) ডায়রিয়া বা জ্বর বা অতিরিক্ত বমি হলে নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া যাবে না।

জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। 

আরও পড়ুনঃ রমজানে সেহরি ইফতারিতে যেসব খাবার থাকা উচিত

দৈনিক কণ্ঠ/লাইফস্টাইল