যে আমল গুলো সহজে ইমানদারকে জান্নাতে নিয়ে যাবে

Dainikkantha, Islam

সারা পৃথিবীতে ১৯০ কোটি মুসলমান এবং বিশ্বের ৫৬ টির বেশি মুসলিম প্রধান দেশ। মুসলমান ইমানদারকে অন্যতম স্বপ্ন থাকে কিয়ামতের দিন আল্লাহর দ্বারা জান্নাত লাভ করা।

ইমানদার মুসলিম যদি ইবাদতের সাথে মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহর দান জান্নাত লাভ করা সম্ভব। জান্নাত লাভের সহজ সূত্র এটি৷

আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের উদ্দেশ্যে যেকোনে আমলই জানৃনাত লাভের অপরিহার্য শর্ত।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন,

“আল্লাহ তোমাদের শরীর ও অবয়বের দিকে তাকান না। বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে খেয়াল করেন।”         –মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৪

অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত করা হয়েছে,
“তোমার ঈমানকে খাঁটি করো। অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হইবে।” – বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৬৪৪৩

কিন্তু, আমলই সব সময় জান্নাত লাভের মানদণ্ড নয়। অন্যের অধিকারকে তা থেকে বঞ্চিত করে।

সারাজীবন ইবাদত করেও জান্নাতে যাওয়া যাবে না।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে।

একবার রাসুল (সা.) বলেন,
“তোমরা কি জানো,, প্রকৃত নিঃস্ব বা হতদরিদ্র কে?

তারা বলেন, আমাদের মধ্যে নিঃস্ব ওই ব্যক্তি। যার কাছে কোনো অর্থকড়ি ও কোনো আসবাব নেই।

তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে প্রকৃত নিঃস্ব ওই ব্যক্তি। যে কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও জাকাত (নেকি) নিয়ে হাজির হবে।

কিন্তু এর পাশাপাশি সে এ অবস্থায় আসবে যে সে কাউকে গালি দিয়েছে।  কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে।

কারো সম্পদ জোর করে ভক্ষণ করেছে। কারো রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে।

অতঃপর তাকে অত্যাচারিত করা হয়েছে।  তার নেকি দেওয়া হবে। পরিশেষে যদি তার নেকি অন্যদের দাবি পূরণ করার আগেই শেষ হয়ে যায়।

তাহলে তাদের পাপ নিয়ে তার ওপর নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”।
–মুসলিম, হাদিস : ২৫৮১০।

কিন্তু, বিশেষ বিশেষ কিছু কাজ গুরুত্বের সঙ্গে করলে জান্নাত লাভ করা খুবই সহজ। যেমন, শরীরের অন্যতম অঙ্গ মুখ ও গোপনাঙ্গ এর হেফাজত করা ইমানদারকে করতেই হবে।

রাসুল (সা.) বলেন,

“যে ব্যক্তি উভয় ঠোঁটের মধ্যভাগ অর্থাৎ জ্বিহবা ও দুই রানের মধ্যভাগ অর্থাৎ গোপানাঙ্গ হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি”। –বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৪।

ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ বা খুঁটি হলো হজ। কবুলকৃত হজের একমাত্র প্রতিদান জান্নাত। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন,

“যে ব্যক্তি হজ করে এবং কোনো অশ্লীল কথা বলে না এবং পাপকাজ মুক্ত থাকে। সে মায়ের পেট থেকে জন্ম নেওয়ার দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে।

কবুল হজের একমাত্র প্রতিদান জান্নাত!

আর কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই হয়না।  –বুখারি,হাদিস: ১৫২১।

যে মুসলমান আল্লাহকে ভয় করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে। তাদের জন্যই জান্নাত। বলা হয়েছে,

“নিশ্চয়ই খোদাভীরুরা থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণসমূহে।তাদের বাঞ্ছিত ফলমূলের মধ্যে। বলা হবে। তোমরা যা করতে তার বিনিময়ে তৃপ্তির সঙ্গে পানাহার করো।

এভাবেই আমি সতকর্মশীলদের পুরস্কৃত করি”।– সুরা : মুরসালাত, আয়াত : ৪১-৪৪।

যে মুসলমান দুনিয়ার জীবনে উদ্ধত হয় না। ফিতনা-ফ্যাসাদে লিপ্ত হয় না, তারাই জান্নাত লাভ করবে।
বলা হয়েছে, “এটা পরকালের সেই আবাস। যা আমি (আল্লাহ) নির্ধারণ করি তাদের জন্য।

যারা এই পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে চায় না। শুভ পরিণাম মুত্তাকিদের জন্য”। –সুরা :কাসাস, আয়াত : ৮৩।

নিজের মধ্য থেকে কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করলে জান্নাতে লাভ করা যাবে। বলা হয়েছে,

“পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার রবের সামনে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে। কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে। জান্নাত-ই হবে তার বাসস্থান। –সুরা নাজিআত, আয়াত : ৪০-৪১।

আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য করা ছোট আমলও কখনো  কখনো জান্নাতে যাওয়ার কারণ হতে পারে। যেমন কুকুরকে পানি খাওয়ানোর বিনিময়েও মহান আল্লাহ এক ব্যভিচারী নারীকে জান্নাত দেবেন বলে হাদিসে এসেছে।

আসলে কারো কারো জন্য জান্নাতে যাওয়া খুব সহজ এবং সময় অপেক্ষা মাত্র। আবার কারো জন্য হবে অনেক কঠিন।

জান্নাতে যাওয়া সহজ

জান্নাতে যাওয়া খুবই সহজ। তার উদাহরণ হিসেবে একটি ঘটনা-

আনাস বিন মালিক (রা.) বর্ণনা করেন,

“একবার আমরা রাসুল (সা.)- এর সাথে বসেছিলাম। এ সময় তিনি বলেন, “এখন তোমাদের সামনে একজন জান্নাতি মানুষের আগমন ঘটবে।

কিছুক্ষণ পর এমন এক আনসারি ব্যক্তি উপস্থিত হলেন। যাঁর দাড়ি থেকে অজুর পানি টপকে পড়ছিল।

পরের দিনও নবী (সা.) একই কথা বলেন। সেদিনও ওই আনসারি উপস্থিত হলেন। যিনি আগের দিন এসেছিলেন”।

তৃতীয় দিন নবী (সা.) বলেন, “এখন তোমাদের সামনে এক জান্নাতি ব্যক্তি আসবে। কথা শেষে সেই আনসারি উপস্থিত হলেন এবং তাঁর অবস্থাও আগের দুই দিনের মতো ছিল।

অর্থাৎ তাঁর দাড়ি দিয়ে পানি টপকাচ্ছিল। আর তিনি নিজের জুতাজোড়া বাম হাতে ধরে রেখেছিলেন। আনাস (রা.) বলেন,

“রাসুল (সা.) চলে যাওয়ার পর আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) ওই আনসারি সাহাবির পিছু নেন। এবং তিন দিনই ওই সাহাবির বাড়িতে অবস্থান নেন”।

তিন দিন অতিক্রমের পর আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) তাঁর আমল খুব নগণ্য মনে হলো। তিনি বলেন,

“আমি তাঁর কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তাঁর আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। যে আমলের কারণে রাসুল (সা.) তাঁকে জান্নাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

তিনি আমাকে ডেকে বলেন, “আমল তা-ই, যা আপনি দেখেছেন। তবে আমি কখনো কোনো মুসলমানকে ধোঁকা দেওয়ার কথা চিন্তা করি না।  এবং আমি কোনো ব্যক্তির কোনো কল্যাণে হিংসা করি না। যা তাকে আল্লাহ দান করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) এ কথা শুনে বলেন,

“এটাই সেই গুণ। যা আপনাকে সেই মর্যাদায় (জান্নাতি হওয়া) পৌঁছিয়েছে। আর এ গুণ অর্জন করার সামর্থ্য আমাদের নেই। –মুসনাদ আহমাদ : ২০-১২৪, হাদিস, ১২৬৯৭,হাদিস সহিহ।

মহান আল্লাহ আমাদের জান্নাতে যাওয়ার তাওফিক দান করুন, আমিন।

আরও পড়ুনঃ এই দোয়া গুনাহ মাফ এর দোয়া যা পড়ে ঘুমালে জীবনের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়

সকল সংবাদ এবং সব বিষয়ে সঠিক তথ্য নির্ভর লেখা পেতে চোখ রাখুন দৈনিক কন্ঠ এর ফেসবুক পেজ এ। এবং জয়েন হয়ে নিন দৈনিক কন্ঠ এর অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ- এ।

11 thoughts on “যে আমল গুলো সহজে ইমানদারকে জান্নাতে নিয়ে যাবে”

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.