বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেওয়ার নিয়ম (নমুনা বক্তব্য সহ)

বিজয়ের মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতি তার দেশ বাংলাদেশকে মুক্ত করেছিল পাকিস্তানি শোষকদের হাত থেকে। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের সেই বিজয় দিবস। আর তাই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেওয়ার প্রয়োজন হয়।

প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোষ্ট “বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা । ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস বক্তব্য” এ।

আজকের পোষ্টে আমরা জানবো, বিজয় দিবসের পরিচিতি, বিজয় দিবস অর্জনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেওয়ার নিয়ম, এবং বিজয় দিবসের একটি নমুনা বক্তব্য সহ বিজয় দিবস সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর।

বিজয় দিবসের পরিচিতি

পৃথিবীর ইতিহাসে দেশের স্বাধীনতার জন্য এমন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করার ঘটনা বিরল। কিন্তু বাঙ্গালী জাতি বীরের জাতি।

তাই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাংলার দামাল ছেলেরা।

আরও পড়ুনঃ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস রচনা । মহান বিজয় দিবস রচনা লেখার নিয়ম

কিন্তু বিজয়ের ইতিহাস অনেক বড়। যার শুরু হয়েছিল ১৯৪৭ সাল থেকে। আর এর সমাপ্তি হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে।

স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা বোনের ইজ্জত দিতে হয়েছিল বাঙ্গালীকে। তবুও বাঙালি জাতি ছিনিয়ে এনেছিল বিজয়ের পতাকা।

বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেওয়ার নিয়ম

বিজয় দিবস উপলক্ষে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

এর মধ্যে সবথেকে বেশি দেখা যায় আলোচনা সভা কিংবা সংক্ষিপ্ত বক্তৃতার কর্মসূচি।

বিজয় দিবস সহ যেকোনো দিবসে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য সেই বিষয়ে যথেষ্ট জানাশোনা থাকতে হবে। এরপর স্টেপ বাই স্টেপ সাজিয়ে নিতে হবে।

এরপর সম্পূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে একেক করে ধরে ধরে গুছিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশ করতে হবে।

একই সাথে একটি বক্তৃতা দেওয়ার সময় আবেগ এবং গুরুত্ব বলার ভঙ্গিতে ফুটিয়ে তুলতে হবে।

মনে রাখতে হবে যে, সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা মানে ২ থেকে ৩ বা সর্বাধিক ৪ মিনিটের মধ্যে ওই বিষয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সংক্ষেপে তুলে ধরতে হবে।

আরও পড়ুনঃ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পোস্ট । বিজয় দিবস নিয়ে ক্যাপশন

এবং সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেওয়ার সময়ে সাল এবং তারিখ নির্ভুলভাবে উল্লেখ করতে হবে। এতে করে শ্রোতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

পোষ্টের শুরুতে যেমন বলছিলাম যে, মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেকে জানা সত্যেও বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিতে পারে না। এর অন্যতম কারণ গুছিয়ে কথা বলতে না পারা।

নিয়মিত চর্চা না থাকলে কখনোই আপনি হঠাৎ অনেক মানুষের মাঝে সাবলীল ভাবে কথা বলতে পারবেন না। তবে এটি একদমই কঠিন কোনো কাজ না।

আরও পড়ুনঃ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা  । বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা

স্কুল, কলেজ সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, রাজনৈতিক সভায় অনেককে বিজয় দিবস উপলক্ষে বক্তব্য দিতে হয়।

তাই, এখন আমরা বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেওয়ার মতো একটি স্ট্যান্ডার্ড বক্তৃতা দেখবো। এখানে স্কুলে বিজয় দিবসের বক্তৃতা নিয়ে লেখা হয়েছে।

আপনি যদি অন্য কোনো সমাবর্তনে বা অন্য কোথাও এই বক্তৃতা দিতে চান তাহলে শুধু বেসিক বিষয়গুলো চেঞ্জ করে কয়েকবার প্রাকটিস করলেই আপনিও খুব সহজেই বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিতে পারবেন।

বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা (নমুনা বক্তব্য)

আজ ১৬ ডিসেম্বর। বাঙ্গালী জাতির জন্য অবিস্মরণীয় একটি দিন।

আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদদের, স্মরণ করছি ৭১ এ ২ লাখ মা বোনদের, যাদের জীবন ও সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙ্গালী জাতি বিজয় অর্জন করে।

সকল প্রসংশা মহান সৃষ্টিকর্তার।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজকের সভায় উপস্থিত শ্রদ্ধেয় সভাপতি, উপস্থিত প্রধান শিক্ষক সহ সকল শিক্ষকদের প্রতি আমার আন্তরিক সালাম, শ্রদ্ধা এবং সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। কিন্তু এই বিজয়ের পিছনের গল্পটা একদম ই সহজ ছিলও না। ৩০ লক্ষ শহীদদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই বিজয়।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকেই পাকিস্তানের দুটি অংশ পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানের তরফ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি সব বিষয়ে বৈষম্য শুরু হয়।

ভাষা থেকে শুরু করে বাণিজ্য, কলকারখানা স্থাপন, চাকরির সুবিধা থেকে সবকিছুতে শুধু পশ্চিম পাকিস্তানিদের সর্বাধিক সুযোগ দেওয়া হয়।

তৎকালীন পূর্ব বাংলা তথা আজকের বাংলাদেশের তৎকালীন নেতৃবৃন্দ, ছাত্র, জনতা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে আন্দোলন প্রতিবাদ করলেও কোনো প্রতিকার হয়নি।

আর এরই প্রেক্ষিতে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচনে অনিয়ম এর মতো কঠিন আন্দোলন প্রতিবাদ হয়।

কিন্তু কোনো ভাবেই বাঙ্গালির দাবী আদায় না হওয়ার কারণে অবশেষে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে তথা ২৬ শে মারচ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এরপর চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের শেষে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জন করি।

সবকিছুর মতো বিজয় অর্জন যত কঠিন – তা ধরে রাখা তার চেয়েও কঠিন।

তাই আমাদের আজকে শপথ নেওয়া উচিত যে, জীবন দিয়ে হলেও আমাদের বিজয় ধরে রাখবো, ইনশাআল্লাহ।

দলমত, ধর্ম-গোত্র নির্বিশেষে দেশটাকে নিজেদের মতো করে সুন্দর রাখার প্রকল্পে দৃঢ় অঙ্গীকার বদ্ধ হতে হবে।

বিজয়ের এই দিনে আমাদের সবার সংকল্প হোক, “জীবন বাজী রাখি, দেশ নিরাপদ রাখি”। 

এই বলে আমি আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য এখানেই শেষ করেছি।

১৬ ডিসেম্বর বক্তৃতা নিয়ে আরও কিছু কথা

বাঙ্গালী জাতির অবিস্মরণীয় অর্জন এই বিজয় দিবস। ছিলোনা কোনো অস্ত্র, ছিলোনা কোনো প্রযুক্তি, ছিল শুধু দৃঢ় মনোবল, ছিলো শুধু আত্মবিশ্বাস।

এই জাতি শুধু জানত যেভাবেই হোক বিজয় ছিনিয়ে আনতেই হবে।

বাঙ্গালী জাতি যতদিন আছে ততদিন বিশ্বের বুকে এই বীর যোদ্ধাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

বাঙালি জাতি সেদিন রমান করে দিয়েছিলো যে, বাঙালি জাতি বীরের জাতি।

ইচ্ছা আর মনোবল থাকলে হাজার হাজার কামানের বিরুদ্ধে শুধু লাঠি বাঁশ নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করা যায়।

আমরা গর্বিত বাঙালি জাতির সন্তান হতে পেরে।

আমারা সবাই জাতির কাছে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ দেশ এবং দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য জীবন দেইতে পারি।

১৬ ডিসেম্বর সম্পর্কিত FAQS

বাঙ্গালী জাতির বিজয় দিবস কত তারিখ?

১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালী জাতির বিজয় দিবসে।

এ দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মোট কতজন শহীদ হয়েছিল?

৭১ এর যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিলো এবং ২ লাখ মা বোন ইজ্জ হারিয়েছিল।

বিজয় দিবসে আমাদের করণীয় কি?

সবকিছুর মতো বিজয় দিবসেও আমাদের করণীয় কিছু বিষয় আছে।

১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে কি কি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়?

১৬ ই ডিসেম্বর উপলক্ষে দেশের সকল সরকারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত সহ স্কল শিক্ষা প্রতিস্থানে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এর মধ্যে

পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত,
দোয়া, মিলাদ মাহফিল,
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য,
আলোচনা সভা,
শহীদদের স্মরণে নীরবতা পালন,
রচনা প্রতিযোগিতা,
গাণ,
নৃত্ত,
নাটক সহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

দেশের স্বাধীনতা তথা বিজয়ের ধারা অব্বহত রাখার জন্য আমাদের করনীয় কি?

দেশপ্রেম, দেশের আইন শৃঙ্খলা মেনে চলা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।

এমন কোনো কাজ না করা যা করলে দেশের সাথে বেইমানি করা হয়।

তবেই দেশের স্বাধীনতা বজায় রাখা সম্ভব।

বিজয় দিবসে বক্তৃতা নিয়ে সর্বশেষ

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা । ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম এবং একটি নমুনা বক্তব্য জেনেছি।

আশা করছি এই পোষ্ট থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম এবং বক্তব্যের নমুনা কপি সম্পর্কে সবকিছু জেনেছেন।

বিজয় দিবস কিংবা অন্য কোনো দিবস বা এই সম্পর্কিত আমাদের অন্যান্য সকল পোষ্ট পড়তে National Category ভিজিট করুন।

নিয়মিত আমাদের সকল পোষ্ট পড়তে Dainik kantha ভিজিট করুন।

সর্বশেষ আমাদের সকল আপডেট পেতে চোখ রাখুন অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।

6 thoughts on “বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেওয়ার নিয়ম (নমুনা বক্তব্য সহ)”

  1. বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য সংক্রান্ত এই আর্টিকেলটি আমার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে

    Reply

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.