জীবন আপনাকে যা শেখায় না

জীবনের কোনো মুহুর্তেই ঘড়ির কাঁটা থেমে থাকে না। তবু যেন চলে না ঘড়ি। জীবনের খারাপ পরিস্থিতিতে মনে হয় সময় শেষ হয় না। তখন একটি সেকেন্ড মনে হয় এক বছরের মত দীর্ঘ। আর এসব জীবন আপনাকে যা শেখায় না।

সেই ব্যক্তি জীবনের সাফল্যের দেখা পাবে, যে জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড কাজে লাগাতে পারবে। প্রতিটি মুহুর্ত সাফল্যের মধ্য থেকে নিয়ে যাওয়া জীবনের বড় চ্যালেঞ্জ।

মনের ভেদে এর সংখ্যাও কম নয়। প্রতিটি জীবনের গল্প ভিন্ন। কিন্তু মিল একটা জায়গায় যেন থেকেই যায়। প্রতিটি জীবন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এই একই লক্ষ্যে গাঁথা জীবনের গল্পগুলো।

বিরক্ত মাখা যাদের জীবন, তারা চায় জীবনের সময় মুহুর্তের মধ্যে শেষ করতে।

অন্যদিকে জীবনের প্রতিটি সফল ব্যক্তি চায় আসতে আসতে কিংবা কখনোই শেষ না হোক জীবনের এমন স্বর্ণালি সময়।

জীবন থেমে যায় না, মৃত্যু ছাড়া। আপনার কাজ আপনি করছেন।

আপনি যদি মনে করেন আপনার কাজ ব্যতিত বাকি সবকিছু অচল। তাহলে তা বোকামী ছারা আর কিছুই না।

আপনি আজ থেকে কাজ না করলে কাল ঠিকই কেউ ওই কাজটি করতে শুরু করবে৷

খুব অল্প সময়ে আপনার উপস্থিতি সবাই ভুলে যাবে৷

আজকে আপনি বন্ধু মহলে খুব প্রিয়৷ গর্ব করছেন যে বন্ধুদের নিয়ে, তাদের আড্ডাটাও আপনি ছারা একবিন্দু মলিন হবে নাহ্।

অস্থায়ী জীবনে কিছু স্থায়ী সম্ভব?

কখনোই না। আবেগ, অনুযোগ, অভিযোগ এর কোনোটাই চিরস্থায়ী না। সমাজের সব সম্পর্কগুলো একরকম হয় না।

যার ভালো লাগছে, কালও কি তার আপনাকে ভালো লাগবে?

আজ আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ কাল তিনিই হতে পারে আপনার কঠোর সমালোচক।

সুতরাং, জীবনে সবই সম্ভব, যেটা জীবন আমাদের না শেখালেও নিজ থেকে শিখতে হয়।

তুলনা করা বিষয়টা চিরতরে মুছে ফেলতে হবে

নিজের ভিতর থেকে তুলনা বিষয়টা মুছে দিতে হবে। বরং অন্যের সাথে তুলনা না করে নিজের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করুন।

এতে আপনার জন্য ই মঙ্গল। অবশ্য তুলনার আরও অনেক সঙ্গা আছে।

বন্ধুর চাকরির সংবাদে হতাশ না হয়ে বন্ধুকে উৎসাহ দিয়ে আপনিও লেগে পরুন নিজ পথে এগিয়ে যাওয়ার।

জীবনের প্রতিটা মানুষের পথ ভীন্ন। কখনোই এক হবে না হবেই না।

ধার অথবা ঋণ কোনোটিতেই জড়াবেন না

আর্থিক স্বাধীনতা জীবনের অন্যতম স্বাচ্ছন্দ্য দেয়।  বৈধ পথে ইনকাম করতে চেষ্টা করুন।

ইনকাম অনুযায়ী ব্যয় করতে চেষ্টা করতে হবে। সবসময়ের জন্য প্রয়োজনের বাহিরের ব্যবহার্য জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকুন।

অভিজ্ঞতা অর্জনের নেশা রাখুন নিজের মাঝে। বস্তুগত আনন্দের থেকে অভিজ্ঞতা,স্মৃতি জড়ানো, জীবনের দিকে চোখ রাখুন।

দামি মোবাইলে যেটুকু আনন্দ দিবে তারচেয়ে হাজার গুণ বেশি আনন্দ দিবে মঞ্চ নাটক।

দুঃখ কম বেশি পরিমাপ করে বাদ দিতে শিখুন

দুঃখ যত কম অথবা বেশি হোক তা সবসময়ে মলিন হবেই। ভালোবাসার মানুষকে হারানো, ভালো বেতনের জব হারানো।

এ সবই জীবনের অংশ। যেকোনো কারণে ব্যর্থতা শোক জীবনে আসতেই পারে।

আমরা যেন ভূলে না যাই, “সব দুঃখ একদিন ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে“। সব ডিপ্রেশন থেকে একদিন আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসি।

এটা পৃথিবীর চলমান রীতি। কিছু থেমে থাকে নি থাকবে নাহ্। এজন্যই হয়তো বলা হয়  “মানুষ অভ্যাসের দাস”।

শুধু পরিশ্রম জীবনকে সাফল্য এনে দিতে পারে নাঃ

পরিশ্রমই জীবনের সাফল্যের কারণ হয় না। পরিশ্রমের সঙ্গে একান্ত দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং  সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ।

বছরের পর বছর ধরে একই কাজ করে নিজের মধ্যে একঘেয়েমিতা আনবেন না। সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝুঁকি নিতে শিখুন, আপনি পারবেন।

ঝুঁকি নিলে একটা মজার ব্যপার হলো, আপনি জানেন না সামনে কি হবে।

যাদের জীবনে নতুন দ্বার খুলছে তাদের সবারই এই অচেনা অজানা পথে এগিয়েই জীবনের নতুন দ্বার দেখা দিয়েছে।

তবে পরিশ্রম অবশ্যই অনেক বেশি দরকার। কিন্তু কখনোই শুধু পরিশ্রম করে কিছু করা সম্ভব না। বুদ্ধি ভিত্তিক সু পরিকল্পনা এবং পরিশ্রম সাফল্যের ক্ষেত্রে একে অপরের পরিপূরক।

জীবনের সবকিছু সাফল্য কিংবা ব্যর্থতায় সীমাবদ্ধ না। জীবনের সময়কে রঙিন রুপে করে উপভোগ করাই জীবন। জীবনকে উপভোগ করুন। জীবন আপনাকে সেরা কিছু সময় দিবে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা শিখতে হবে

নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে শিখুন। মনে রাখতে হবে অম্যের মতাতমত-ই জীবনের সব না। সব বই যেমন সনার কাছে প্রিয় হয় না তেমন আপনার কর্ম সবার কাছে পারফেক্ট হবে না।

এটা সম্ভব না।  সবসময় নিজের সাথে নিজের চিন্তা সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিন।

মোবাইল বা সামাজিক দুনিয়াই জীবনের সব না এটা মনে রাখতে হবে। বন্ধুর সাফল্যের ছবি ফেসবুকে দেখে মন খারাপ হচ্ছে?

এটা করে নিজের ক্ষতি ডেকে আনবেন না। বরং বন্ধুকে স্বাগত জানান। দিনের কতটুকু সময় মুঠোফোনে ব্যয় করেন?

দীর্ঘ সময় হলে এটি কখনোই ইতিবাচক হয় না। যেকোনো বৈধ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুন। কাজের প্রতি নিজের ভালোলাগাকে প্রাধান্য দিন।

পছন্দের বিষয় নিয়ে আজই লেগে পরুন। একটা সময় পর দিনটা আপনারই হবে।

আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, নিজের পথ চলায় অনেকে অনেক পরামর্শ বা বুদ্ধি দিবে। কিন্তু, পথটা নিজেকেই চলতে হয়। হয় অন্যরা আপনাকে পছন্দ করবে নয়তে না।

কিন্তু দিন শেষে পথ আপনার আর অতিক্রম আপনারই করতে হবে। জীবনের চলার পথে নানানরকম চড়াই-উৎরাই আসবে।

দিন শেষে হিসেব হবে, আপনি কতটুকু পারলেন আর কতটুকু সফল হলেন। মনে রাখতে হবে ব্যর্থতার কোনো হিসেব নেই।

সবসময় আমাদের উচিত নিজেকে শান্ত রেখে জীবনকে জীবনের মতো করে এগিয়ে যেতে দেওয়া।

সাথে বুদ্ধি ভিত্তিক, সু পরিকল্পনা ভিত্তিক টার্গেট নিয়ে কাজ করে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

জীবন আপনাকে যা শেখায় না এমন কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করেছি। অন্তত আমি মনে করি যে, বিষয়গুলি আমাদের সবার চলার পথে মনে রেখে চলা উচিত।

-শেখ মাইনুল ইসলাম,

ব্লগার এবং শিক্ষার্থী (কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং)।