Last Updated on 1 day by Shaikh Mainul Islam
মাঝেমধ্যে আমাদের গলা বুক জ্বলার সমস্যা দেখা দেয়। যখন বেশি সমস্যা হয় তখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে সমস্যাটি ঘরে বসেই সমাধান করা সম্ভব হলেও অনেকেই গলা জ্বলার কারণ ও গলা জ্বলা দূর করার উপায় জানে না।
প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট “গলা জ্বলার কারণ । গলা জ্বলা দূর করার উপায়” এ।
আজকের পোষ্টে, গলা জ্বলার কারণ কি,কিছু খেলে গলা জ্বলার কারণ কি, কি কারণে গলে জ্বলে, গলা জ্বলা দূর করার উপায় কি।
এছাড়া জানবো গলা জ্বলার ঔষধ কি, গলা জ্বলা থেকে মুক্তির উপায় কি সে সম্পর্কিত সকল তথ্য জানবো।
গলা জ্বলা কি । কিছু খেলে গলা জ্বলার কারণ
গলার মধ্যে যন্ত্রণা/ পোড়ানো অনুভব হওয়াকেই গলা জ্বলা বলে। সাধারণত গলা জ্বলা সমস্যা আমাদের খাওয়া এবং জীবন যাপনে অনিয়মের কারণেই হয়ে থাকে।
তবে গলা গলা সাধারণ সমস্যা মনে হলেও এটি মরণব্যাধি রোগের লক্ষণ ও বটে।
মাঝেমধ্যে দেখা যায় যে, কিছু খেলে বিশেষ করে ঝাল বা তরকারি অর্থাৎ মশলা দিয়ে তৈরি করা খাবার খেলে গলা বুক পেট বা যেকোনো এক বা একাধিক অঙ্গে জ্বালাপোড়া অনুভব হয়।
আরও পড়ুনঃ চোখ উঠলে করনীয় । চোখ উঠলে কোন ড্রপ ব্যবহার করবেন?
গলা জ্বলা কিংবা বুক জ্বলা দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি গ্যাস্টিক আলসার কিংবা মরণ ব্যাধি রোগে পরিণত হয়।
আমাদের মনে রাখা উচিত কোনো বড় রোগের পারথমিক লক্ষণ ছোট ছোট হয়। গলা জ্বলা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে।
তবে শুধু গলা নয় বরং গলা, বুক, খাদ্যনালী, কিংবা শুধু এর যেকোনো একটি জ্বালাপোড়া করতে পারে।
যখন কোনো ক্ষত বা আঘাত ছাড়াই গলা কিংবা বুক জ্বলে তখন তাকে GERD (Gastroesophageal Reflx Disorder) বলে।
অনেক সময়ে অনেকের টক ঢেঁকুর ওঠে। আবার মুখ তিতা তিতা মনে হয়। গলা জ্বালাপোড়া করা, খাবার খাওয়ার সময়ে গলা জ্বলে আবার খাবার গিলতে কষ্ট হয়।
অনেক সময় আবার শুধু গলা জ্বলা না। সাথে বুক কিংবা খাদ্যনালী জ্বালাপোড়া করে। বুক জ্বলার সঙ্গে সঙ্গে গলা ভাঙ্গার উপসর্গ দেখা দেয়।
গলা বুক জ্বলা এই ধরনের সমস্যায় হরহামেশাই লোকজন ভুগতে দেখা যায়। এর ফলে ভুক্তভোগীর স্বাভাবিক জীবন যাপনে বাধা সৃষ্টি হয়।
গলা জ্বলার কারণ কি
বুক বা গলা জ্বলার অনেক কারণ আছে। বিশেষ করে মাঝে মধ্যে কিছু তরল পদার্থ পাকস্থলী থেকে গলনালী দিয়ে মুখ চলে আসে।
অর্থাৎ এটি উল্টা পথে ধাবিত হয়, একেই বলা হয় Gastro esophageal reflux. চিকিৎসা বিজ্ঞানের দীর্ঘদিনের গবেষণায় বুক জ্বালাপোড়ার অন্যতম কারণ Gastro esophageal reflux.
আরও পড়ুনঃ মানবদেহে জিরার কারিশমা
চলুন দেখে নেওয়া যাক গলা জ্বলার কারণ কি অর্থাৎ কি কারণে গলা বুক জ্বলে।
- যথেস্ট পরিমাণ পানি না খেলে গলা বুক জ্বলতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে ধুমপান করা।
- অ্যালকোহল সেবন কিংবা মদ্য পান।
- অতিরিক্ত মাত্রায় চা, কফি ইত্যাদি সেবন করা।
- ভাজা পোড়া ও ভেজাল তৈল দ্বারা তৈরিকৃত খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকা। অনেক সময় বুক জ্বালাপোড়ার জন্য অন্যতম দায়ী।
- কালো গোল মরিচ, সিরকা যুক্ত খাবার অতিরিক্ত খাওয়া।
- আচার, টমেটোর সস, কমলার রস, পেয়াজ, পিপারমেন্ট ইত্যাদি খাবার অধিক পরিমাণে গ্রহণ।
- পিত্ত থলিতে পাথর থাকলে অখন বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে।
- এছাড়া পাকস্থলীর উপর চাপ পড়ে এমন কাজ করলে যেমন এক সাথে বেশি পরিমাণ খাওয়া, স্থুলতা, গর্ভাবস্থা, শক্ত ও মোটা বেল্টের প্যান্ট পড়া ইত্যাদি কারণেও বুক জ্বালাপোড়া হয়।
আরও পড়ুনঃ পেটের গ্যাস কমানোর উপায় । গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ ও প্রতিকার
এছাড়াও আরও অনেক কারণ আছে যার জন্য যেকোনো ব্যক্তির গলা বুক কিংবা খাদ্যনালী অথবা যেকোনো একটি জ্বলার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে, সাধারণত এই সমস্যাগুলির কারণেই গলা বুক কিংবা খাদ্যনালী জ্বলার সমস্যা হয়ে থাকে।
গলা বুক জ্বলা দূর করার উপায়
প্রচলিত একটি কথা আছে যে, “Prevention is batter then cure”. যার অর্থ “রোগ হওয়ার আগেই সচেতন হওয়া ভালো”।
তবে রোগের অবস্থা খারাপ হলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এবং পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।
ওষুধ ব্যতীত বুক জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পেতে হলে নিচে উল্লেখ করা কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
- যেসব খাবার খেলে গলা বা বুক জ্বলে সেসব খাবার গ্রহণ থেকে দূরে থাকতে হবে।
- যেমনঃ টমেটো, কমলালেবু, লেবু, রসুন, পেঁয়াজ, চকলেট কিংবা চা অথবা কোমল পানীয়।
- পরিমাণ মতো পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ৪ লিটার পানি খেতে হবে।
- ভাজা মাংসের পরিবর্তে সেঁকা অথবা ঝলসানো মাংস খেতে হবে।
- কম তেল-চর্বিযুক্ত ও মসলাযুক্ত খাদ্য গ্রহণে নিজেকে অভ্যস্ত করতে হবে।
- একসাথে বেশি পরিমাণে খাওয়া বন্ধ করতে হবে। কিছুক্ষণ (২ ঘণ্টা) পরপর অল্প অল্প করে খেতে হবে। এর ফলে খাবার দ্রুত হজম হবে। এবং পেটে অতিরিক্ত গ্যাস ও এসিড উৎপন্ন হওয়ার সুযোগ পাবে না।
- খাওয়ার পরপর বিছানায় কিংবা কোথাও শুয়ে পড়া যাবেনা। অন্তত ১ ঘন্টা অপেক্ষা করে তারপর ঘুমাতে হবে। এই ১ ঘণ্টা বাসার মধ্যে হালকা হাতাচলা এবং বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
- ঘুমানোর সময় বিছানা থেকে মাথাকে ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি উচুতে রেখে শুতে হবে।
- এজন্য আপনার বালিশের উচ্চতা হবে ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি।
- ধূমপানের অভ্যাস থাকলে অবশ্যই তা বর্জন করতে হবে।
- শরীরে বাড়তি ওজন থাকলে তা পরিমাণ মতো করার উদ্যোগ নিতে হবে।
- মোটা বেল্টের প্যান্ট বা পাজামা পরা বন্ধ করতে হবে। সবসময় স্বাভাবিক ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে।
- সবসময় অবশ্যই মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে চেষ্টা করতে হবে।
- নিয়মিত কম বেশি হালকা হলেও শারীরিক কসরত কিংবা ব্যায়াম করতে হবে।
- ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে হবে। একান্ত প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
আপনার গলা কিংবা বুক অথবা গলা বুক দুইটি জ্বালা পোড়া কিংবা শুধু খাওয়ার সময় গলা বুক জ্বলা অনুভব করলে উপরের নিয়মগুলি মেনে চলুন। দেখবেন খুব কম সময়ের মধ্যে আপনার গলা বুক জ্বলা সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।
গলা বুক জ্বালাপোরা সম্পর্কিত FAQS
সাধারণত খাবারে অনিয়ম, গ্যাস্টিকের সমস্যা, অতিরিক্ত ফাস্টফুড এবং পানি কম খাওয়া সহ বিভিন্ন কারণে গলা বুক জ্বলে।
বেশি করে পানি পান, করতে হবে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত এবং মশলা জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। এবং এই পোষ্টে উল্লেখিত সকল নিয়ম মেনে চলতে হবে।
এতে করে সাধারণত গলা জ্বলা কিনবা বুক জ্বলা কমে যাবে। এর পরেও না কমলে অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
আপনি যদি চান কখনোই আপনার গলা বুক জ্বালা পোড়া করবে না তাহলে অবশ্যই নিয়মিত পানি পান করতে হবে। এবং বাহিরের খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
এছাড়া এই পোষ্টের সকল লেখা অরলেই বুঝতে পারবেন যে, গলা বুক জ্বালাপোড়া থেকে বাঁচার উপায় এবং করনীয় কি।
কোনো ঔষধের প্রয়োজন নেই প্রাথমিক অবস্থায়। এর একমাত্র ওষুধ হচ্ছে,
প্রতিদিন অন্তত 1 ঘন্টা করে হাটতে হবে এবং নিয়মিত।
বাহিরের ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া যাবে না।
অতিরিক্ত তৈলাক্ত এবং মশলা জাতীয় খাবার একদম ই না খাওয়া যাবে না।
এই মুহূর্তে করোনা পরিস্থিতি খুব ই স্বাভাবিক। করোনা ভাইরাস আমাদের আশপাশে নাই বললেই চলে। আর কখনোই গলা জ্বলা সমস্যা করোনার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয় না। বিভিন্ন সাধারণ কারণে গলা জ্বলতেই পারে।
গলা বুক জ্বলার কারণ নিয়ে কিছু তথ্য
অনেকে বাড়িতে রান্না বা বিভিন্ন খাবার তৈরিতে বাজারের কেনা অস্বাস্থ্যকর গুঁড়া মরিচ, হলুদ ব্যবহার করেন। এর ফলে তরকারি কিংবা অন্যান্য খাবার মুখে দিলে গলা জ্বলার সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়াও যথেষ্ট পানি না খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এসিডিটিক কারণে এসিড খাদ্যনালী হয়ে গলায় চলে আসার কারণে পেট কিংবা গলা কিংবা খাদ্যনালী জ্বালাপোড়া করে থাকে।
স্বাভাবিক জীবন ধারার মান বজায় রাখতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং নিয়ম মতো জীবন যাপন করার কোনো বিকল্প নেই তাই আমাদের উচিত সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনে সব নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলা।
গলা বুক জ্বালা পোরা নিয়ে সর্বশেষ
প্রিয় পাঠক, আজকের পোস্ট থেকে আমরা “গলা জ্বলার কারণ এবং গলা জ্বলা দূর করার উপায়” সম্পর্কে জেনেছি।
আশা করছি এই পোস্ট থেকে “Gola jolar karon ebong gola jola komanor upay” সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পেরেছেন।
এরপরেও এই বিষয়ে আরও কিছু জানতে আমাদের Health category ভিজিট করুন।
নিয়মিত আমাদের সকল পোস্ট পড়তে Dainik kantha ভিজিট করুন।
6 thoughts on “গলা জ্বলার কারণ এবং গলা জ্বলা দূর করার উপায় জেনে নিন”