Last Updated on 8 months by Shaikh Mainul Islam
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে অনাবিল খুশি। ঈদ মানে নিজেকে কলুষিত মুক্ত করার মাধ্যম। কিন্তু অনেকেই ঈদুল ফিতরে করণীয় বর্জনীয় কাজ সম্পর্কে জানেন না।
প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোস্ট “ঈদুল ফিতরে করণীয় বর্জনীয় কাজ সমূহ” এ।
আজকের পোষ্টে আমরা ঈদের দিন অর্থাৎ ঈদুল ফিতরে করণীয় কি, ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদের দিন কি কি করা যাবে না সব বিষয়ে বিস্তারিত জানবো।
ঈদুল ফিতর
দীর্ঘ এক মাস রোজা আদায়ের পরে আরবি শাওয়াল মাসের ১ তারিখ রোজার ঈদ পালিত হয়। ই ঈদকেই পবিত্র ঈদুল ফিতর বলে।
ঈদ মানে আনন্দ। সকল ভেদাভেদ ভুলে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ঐক্য, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির আনন্দের মাধ্যম। ঈদের মাধ্যমে নিজের ভিতরের ঘৃণা, লোভ , অহংকার, রাগ দূর করা যায়।
ঈদ ফিরে আসে প্রতিবছর। বছরে দুটি ঈদের মধ্যে একটি হলো ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস রোজার পরে ঈদ আসে বলে এর নাম “ঈদুল ফিতর।
ফিতর শব্দের অর্থ, উপবাস বা রোজা ভাঙ্গা। বাংলা ভাষায় একে রোজার ঈদ বলা হয়। দীর্ঘ ৩০ দিন রোজার শেষে ঈদের দিন সকালে মিষ্টি জাতিয় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ঈদুল ফিতরের শুরু হয়।
মুমিন মুসলিম হিসেবে ঈদুল ফিতরে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় কাজ আছে। আর আজকের পোষ্টে আমরা ঈদুল ফিতরে করণীয় ও বর্জনীয় কাজ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
ঈদুল ফিতরে করণীয় কাজ সমূহ
গোসল
ঈদের দিন খুব সকালে গোসল করে পরিষ্কার পরিছন্ন হয়ে নিজেকে পাক পবিত্র করে পরিপার্টি হতে হবে। ঈদের দিন সকালে মুসলমানরা একত্রিত হয়ে ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন।
বায়হাকি (৫৯২০) থেকে এসেছে হজরত ওমর (রা) ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন।
উত্তম ও সাবলীল পোশাক পরিধান করা
নবী মুহাম্মদ (সা) দুই ঈদেই সবথেকে ভালো পোশাক পরতেন।- (যাদুল মায়াদ)। সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন বা নিজের ভালো কাপড়টি পরিষ্কার করে পরিধান করতে হবে।
নবীজি ঈদের দিন গোসল করে সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করতেন এবং নিজের সব থেকে ভালো পোশাকটি পরিধান করতেন। এর পরে ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে ঈদগাহে যেতেন।
আর নবীজি মুহাম্মদ (সাঃ) যা করতেন সেসব কাজ করা নবীর সুন্নত। তাই ঈদের দিন নবীজির করা কাজগুলি করা উচিত।
সদকায়ে ফিতরা আদায়
গরীব দুঃখী অসহায়দের মধ্যে নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী নিজস্ব অর্থ থেকে ফিতরা আদায় করতে হবে। এর দাবীদার পার্শ্ববর্তী অভাবি মুসলমানরা।
ফিতরার টাকা আদায় করার সব থেকে উত্তম সময় হলো ইদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগ মুহূর্তে। তাই ঈদের নামাজের আগেই ফিতরা আদায় করতে হবে।
নামাজ আদায়
পুরুষদের জন্য ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। অতিরিক্ত তাকবির সহ জামাতে সমবেত হয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা এবং ইমামের পাঠ করা খুতবা শুনতে করতে হবে।
সম্ভব হলে ঈদের নামাজ খোলা আকাশের নিচে আদায় করা উত্তম যাকে ঈদগাহ বলা হয়।
শুভেচ্ছা বিনিময়
শরিয়াহ অনুমোদিত অন্যতম একটি ঈদের শুভেচ্ছা। যা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাতে অনুমোদন দিয়েছে। ঈদ উপলক্ষে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান উচিত।
ঈদে তাকবির দেয়াও:
আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের অন্যতম উপায় তাকবির দেওয়া। ঈদের দিন এই বলে “আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর লা ইলাহা ইল্লালাহু আল্লহুয়াকবর আল্লাহুয়াকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ”।
হাদিসে এসেছ, নবী করিম (সা;) ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়া পর্যন্ত তাকবির দিতেন।
খাবার খেতে হবেঃ
ঈদুল ফিতরের দিন নামাজের আগে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া সুন্নত। নবী করিম (সাঃ) ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে নামাজে যেতেন না। _(তিরমিজি- ৫৪৫)
এতিম ও অভাবিদের খাওয়াতে হবেঃ
ইমানদারের অন্যতম গুনাবলি হলো ঈদের দিন বিশেষ ভাবে এতিম মিসকিনদের খোঁজখবর নেওয়া। সাধ্য অনুযায়ী খাবার খেতে দিতে হবে। সম্ভব হলে কিছু নতুন জামা কাপর দিতে হবে।
এ বিষয়ে পবিত্র আল কোরানের সুরা দোহারের আয়াত নাম্বার ৮ এ উল্লেখ করে বলা হয়েছে।
আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খবর নিতে হবেঃ
পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে, “তোমরা ইবাদত কর আল্লাহ্ র আর ভালো ব্যবহার করো মাতা পিতা সহ সবার সাথে। আত্মীয়দের সাথে, পারা প্রতিবেশীদের সাথে এমনকি মুসাফিরেওর সাথেও ভালো ব্যবহারের জন্য আল্লাহ্ পবিত্র কোরানে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন”।
পবিত্র কোরানে আরও বলা হয়, যারা দাম্ভিক, অহংকারী আল্লাহ্ তাদের কখনো পছন্দ করে না। এ বিষয়ে পবিত্র কোরানে সুরা নিসায় ৩৬ নাম্বার আয়াতে আরও বিস্তারিত বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ রোজায় শরীরের পানিশূন্যতা এড়াতে করণীয়
মনোমালিন্য দূরীকরণ :
জীবনে চলার পথে আশপাশের মানুষের সাথে মনমালিন্য, মন কালাকালি হতেই পারে। ঈদ হলো সকলের প্রতি সকলের মনোমালিন্য দূর করার উত্তম সময় ঈদের মুহূর্তে।
মুসলমান কোন ভাই তার কোন মুসলমান ভাইয়ের প্রতি নারাজ হয়ে একটানা তিন দিনের বেশি কথা না বলে থাকা যাবে না। এমন দুই ব্যক্তির মধ্যে শ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি সে যে অন্যজনকে আগে সালাম দেন। (মুসলিম – ৬৬৯৭)
ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থা যেখানে, স্বাভাবিক বিনোদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বুখারির ৯৫২ এ বিস্তারিত বলা আছে।
নবীজির ঘরে ঈদের দিন আয়েশা (রা) ের উপস্থিতিতে দুজন মেয়ে গান গেয়ছেন।
এবার যেনে নেওয়া যাক ঈদের দিন যেসব কাজ বর্জনীয় তা জেনে নেওয়া যাকঃ
আরও পড়ুনঃ এই দোয়া গুনাহ মাফ এর দোয়া যা পড়ে ঘুমালে জীবনের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়
ঈদের দিন রোজা রাখাঃ
ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ রয়েছে ইসলামে। হাদিসে এসেছে, ঈদের দিন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন নবী করিম (সাঃ)। (মুসলিম- ২৭৩০)
বিজাতীয় আচরণ প্রদর্শনঃ
ইদকে প্রাধান্য দিয়ে কিছু সংখ্যক মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে বিজাতীয় আচরণে জরিয়ে গেছে।
পোশাক থেকে শুরু করে চাল-চলন, থেকে শুরু করে সবকিছু অমুসলিম ভিত্তিক হয়ে গেছে।
এগুলো পরিহার করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ THE REASON FOR BREAKING THE FAST IS MAKROOH
হাদিসে এসেছে, নবীজি বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে নিজেকে সাদৃশ্য রাখবে, সে যেন নিজেকে ওই দলের দলভুক্ত করলো”।
নারীদের পোশাকে লক্ষণীয়ঃ
সবসময়ের থেকে তুলনামুলক বেশি দেজখা য্য ঈদের দিন। অর্ধনগ্ন নারীদের রাস্তায়। যা তাদের অশ্লীল পোশাকে সমাজকে সমাজের তরুণদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
এদিক থেকে সব নারীদের পরিবার অর্থাৎ ভাই, বাবা, স্বামীদের খেয়াল রাখতে হভে।
শালীনতা বজায় রেখে চলতে হবে।
এসময় নিজ ঘরে অবস্থান করে নিজেদেরকে প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকবে।
অপচয় এবং অপব্যয়ঃ
প্রয়োজনের থেকে বেশি কেনাকাটা থেকে বিরত থাকতে হবে।পবিত্র কোরআনে অপব্যয়কে সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, অপচয়কারী শয়তানের ভাই।
সুরা বনি ইসরাইলের ২৬-২৭ আয়াতে উল্লেখ করে বলা হয়।
খাও এবং পান করো, অপচয় করবে না।
মদ ও আতশবাজি থেকে বিরত থাকতে হবেঃ
আরও পড়ুনঃ “সালাতুল হাজত” সালাত আদায়ের উপকার ও নিয়ম
ঈদ আনন্দে মদ, গাজা, জুয়া, আতশবাজি, শরীয়ত বিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
এ বিষয়ে সুরা মায়েদার ৯০ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, মদ, জুয়া, প্রতিমা বেদি, শয়তানের দ্বারা পরিচালিত, এগুলো পরিহার করে সফল কাম হও।
আরও পড়ুনঃ যে আমল গুলো সহজে ইমানদারকে জান্নাতে নিয়ে যাবে
ঈদের আনন্দে আমরা আমাদের স্বাভাবিক চিন্তাধারাকে ভুলে না যাই।
ভুলে না যাই আমাদের মনুষ্যত্বকে।
আমরা চাইলেই ইসলামিক দৃষ্টি কোণ থেকে সমাজকে বদলে দিতে পারি।
সমাজকে একটি সুন্দর পরিবার উপহার দিতে পারি।
8 thoughts on “ঈদুল ফিতরে করণীয় বর্জনীয় কাজ সমূহ ”